৬ ডিসেম্বর, ১৯৯২। হিন্দু মৌলবাদিরা ভারতের বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে দিয়েছে, এর প্রতিক্রিয়া শুরু হলো বাংলাদেশে। তখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এনেস্থেসিয়া বিভাগে চাকরি করি। সকালে হাসপাতালে রোগী অজ্ঞান করছি, অপারেশন চলছে, এমন সময় খবর এল আমার বোন ময়মনসিংহ হাসপাতালে, বাচ্চা হবে। আমি হাসপাতাল থেকে এক বন্ধুর গাড়ি নিয়ে তক্ষুনি রওনা হলাম ময়মনসিংহের পথে । দু ঘন্টার পথ। পৌঁছে দেখি বাচ্চা হয়ে গেছে। বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ আদর করে ফিরে এলাম ঢাকায়। ঢাকা শহর থম্থমে। শহর জুড়ে টুপি পরা মুসলমানদের মিছিল। ধীরে ধীরে খবর পেতে থাকি হিন্দুদের জিনিসপত্র লুট হচ্ছে, মন্দির ভাঙ্গা হচ্ছে,কোথাও কোথাও হিন্দু বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। হিন্দুরা ভয়ে লুকিয়ে আছে। লজ্জায় মাথা নত হল আমার। চিৎকার করে থামাতে ইচ্ছে হলো বর্বরতা। আমার চিৎকার আর কতদূর পৌঁছোবে! অসহায় আমি কম্পিউটার অন করে মাইক্রোসফট ওয়ার্ডের একটি পেজ খুলে সাদা স্ক্রিনে লিখি– লজ্জা। খুব বেশিদিন নিইনি তথ্যভিত্তিক উপন্যাসটি শেষ করতে।
ওদিকে ওই বাচ্চা মেয়েটি দ্রুত বড় হয়ে গেল। আজ সে নিউ ইয়র্কের কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করছে। কিছুদিন পর সাইকোলজিস্ট হিসেবে জব করবে। এই ঘৃণার পৃথিবীতে আমার দেওয়া ‘স্রোতস্বিনী ভালোবাসা’ নামটি নিয়ে ও বড় হলো।
২৪ বছরে কতকিছু পালটে গেছে। শুধু বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থাই পাল্টালো না। এখনও শুনি হিন্দুদের জিনিসপত্র লুট হচ্ছে, মন্দির ভাঙ্গা হচ্ছে,কোথাও কোথাও হিন্দু বাড়িঘরে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, হিন্দুরা ভয়ে লুকিয়ে আছে।
নির্লজ্জ মুসলমানদের জন্য আজো বড় লজ্জা হয়।