পপ তারকা রিহানা গলায় গণেশের একটা লকেট পরায় আপনি ক্ষুব্ধ কেন বলুন তো?

Uncategorized

এই যে দাদা হিন্দু মুমিন, পপ তারকা রিহানা গলায় গণেশের একটা লকেট পরায় আপনি ক্ষুব্ধ কেন বলুন তো? রিহানা টপলেস ছিলো বলে? নাকি রিহানা ‘ম্লেচ্ছা’ বলে? যদি অশ্লীলতার কথা বলেন, কিংবা হিন্দু ধর্ম অবমানরার কথা বলেন তাহলে মধ্যভারতের খাজুরাহোর কাণ্ডারীয় মহাদেব মন্দির বা উড়িষ্যার কোনার্ক মন্দিরের গায়ে খোদাই করে আঁকা নগ্ন নারী মূর্তিগুলোর বিষয়ে কি বলবেন? নারী পুরুষের সংগমের দৃশ্য আর যৌনকলার একেক স্টাইলের মিথুনের দৃশ্য এই দুটো প্রসিদ্ধ মন্দিরে থাকার পরও আপনাদের মহান ধর্মানুভূতিতে কি আঘাত লেগেছে? খাজুরাহোর কাণ্ডারীয় মহাদেব মন্দিরে তো পশুর সঙ্গে মানুষের সংগমের ছবি পর্যন্ত আঁকা হয়েছে! অনেক সময়ই হিন্দু ধর্মকে শিল্প সাহিত্য বললে আমরা নাস্তিকরা তা নিয়ে হাসাহাসি করি। কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলে কিন্তু বুঝা যায় এই ধর্মের মধ্যে কবি ও শিল্পীদের অবস্থান ব্যাপক। রাজা নরসিংহদেব উড়িষ্যার কোনার্ক মন্দির বানিয়ে ছিলেন পুরীর জগন্নাথ মন্দিরকে টেক্কা দিতে। যে কারণে তিনি মন্দিরে অনিন্দ সুন্দর শিল্পকর্ম করে মানুষকে আকর্ষিত করতে নগ্ন শিল্পকর্মকে বেছে নিয়েছিলেন। মানুষ এই শিল্প দেখতেই কোনার্ক মন্দিরে যায়। এরকমটা পৃথিবীর আর কোন ধর্মে দেখা যায় না। ওহে হিন্দু মুমিন, আব্রাহামিক ধর্ম দেখে তোমরা হারাম হালাল শিখে গেছো! মুসলমানদের মত ধর্মানুভূতিতে আঘাত লাগে? রেহানা অস্পৃশ মেলচ্ছ বলে? কেন মন্দির বানাতে মুসলিম কারিগর ব্যবহার হয়নি? নির্মাণাধীন রাম মন্দিরের ঘন্টা তৈরি করবে এক মুসলিম কারিগর সেটায় অচ্ছুত হবে না?

খাজুরাহোর কাণ্ডারীয় মহাদেব মন্দিরে নগ্ন ও যৌন সংগমের মূর্তি আঁকার পিছনে হিন্দুদের যে বিশ্বাসের কথা জানা যায় সেখানে বলা হয়েছে, প্রচলিত বিশ্বাস ছিলো মন্দিরে মিথুন ভাস্কর্য থাকলে বজ্রপাত ঘটে না! দ্বিতীয় ভাবনা ছিলো, মন্দিরে মিথুন দৃশ্য অবলোকন করে কাম পরিতৃপ্তি পরিপূর্ণ করে এখানে শুদ্ধমন নিয়ে বাইরে নিজের রিপুকে নিয়ন্ত্রণ করবেন। শেষ কারণটি হচ্ছে চান্দেল রাজারা যৌনচারকে প্রকৃতির পবিত্র একটি নিয়ম মনে করতেন যার জন্য তারা মন্দিরে যৌনতাকে স্থান দিয়েছিলেন। এই হচ্ছে হিন্দু ধর্ম! এখানে সহিষ্ণুতা, শ্লীল অশ্লিলকে বিবেচনা না করে মানুষের সার্বচ্চো শিল্প বিকাশকে স্থান দেয়া হয়েছে। কিন্তু জিহাদী হিন্দুরা মকবুল ফিদা হুসাইনকে খুন করতে চায় হিন্দু দেবীদের ছবি আঁকলে! যুক্তি দেয় মুকবুল নবীর স্ত্রীদের ছবি আঁকতে পারতেন? না পারতেন না! কারণ শিল্পি জানেন লিওনার্দ মাইকেলাঞ্জ গির্জাতে মেরী যীশুর ছবি এঁকেছেন। যীশুকে প্রায় নগ্নই এঁকে ফেলে হয়েছে। তাদের কিছু হয়নি। কিন্তু ইসলাম শিল্প বিরোধী ধর্ম। ইসলাম সংগীত বিরোধী ধর্ম। হিন্দু পুরাণে যৌনতার ছড়াছড়ি। সেইসব পরাণ অবলম্বনে মন্দিরে ভাস্কর্য করা হয়। মুকবুল সেই ছবি আঁকলেই খালি দোষ! বিসমিল্লাহ খাঁ তো মসজিদে বসে সাঁনাই বাজান নাই। তিনি কাশির বিশ্বনাথ মন্দিরে বসে সারা জীবন সানাই বাজালেন। কারণ তিনি জানেন মন্দির আর মসজিদ এক না। মন্দিরকে ভালোবেসেই তিনি সংগীত সাধনা করতেন। মন্দিরও তাকে ফেলে দেয়নি। কিন্তু হিন্দুরা এখন হরকাতুল জিহাদ থেকে প্রেরণা নিয়ে তাদের সনাতন ধর্ম রক্ষা শিখছে! ভারতে হিন্দু মুমিনরা এরিমধ্যে প্রগতিশীলদের গলা কেটেছে। সামনে হয়ত আমাদের মত নাস্তিকরাও তাদের চক্ষুশূল হয়ে যাবো। একদা আমরা হিন্দুদের সহিষ্ণু বলে প্রশংসা করতাম। কিন্তু হিন্দুদের মধ্যে জাকির নায়েক তৈরি হচ্ছে। শুনেছি উড়িষ্যার কোনার্ক মন্দিরের ভাস্কর্যগুলো ভেঙ্গে ফেলার দাবী করেছে এক হিন্দু নেতাই! ওগুলো নাকি বড্ড অশ্লিল! কাণ্ডারীয় মহাদেব মন্দিরের ভাস্কর্যগুলোকেও কিছু হিন্দু সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে নষ্ট করে ফেলতে বলেছে! হায় সামনে কি দিনকাল আসছে! মানুষের সমাজে কি শিল্প আর শিল্পী বিলুপ্ত হয়ে যাবে?

#সুষুপ্ত_পাঠক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *