পশ্চিমবঙ্গ কি জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জিকরণ (NPR) নিয়ে ভীত?

অনিমিত্র চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ভারত

পশ্চিমবঙ্গ কি জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জিকরণ (NPR) নিয়ে ভীত?

তৃণমূল কংগ্রেস দ্বারা পরিচালিত, পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যে NPR চালু করার ক্ষেত্রে এত নেতিবাচক অবস্থান কেন নিয়েছেন? জানতে ইচ্ছা করে, তৃণমূল নেতৃত্বের এত ভয়ের বা অনীহার কারণ কি? এটি কি কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক বিরুদ্ধাচারণ নাকি তৃণূমূল সরকার রাজ্যের জনসংখ্যা এবং জনবিন‍্যাস এর ক্ষেত্রে অগুনতি পরিসংখ্যান গত জুয়াচুরি ধরা পরের যাবার ভয়ে ভীত! বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে, রাজ্য সরকারের, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে এই নিরন্তর সঙ্ঘাত কে বামপন্থী এবং ইসলামিক সংস্থা ও বৌদ্ধিক রা সমান ভাবে সমর্থন ও করছেন।

পাঠকগণ মাথায় রাখবেন, পরিসংখ্যানগত ভাবে ছলনা করে একটি বিশেষ সম্প্রদায় কে দুর্ভোগে ফেলার এই ষড়যন্ত্র কিন্তু বাংলায় নতুন নয়। ব্রিটিশ রাজ বাংলায় প্রথম এই পন্থা অবলম্বন করে 1940 সালের শেষ দিকে। 1941 সালের অবিভক্ত বাংলার জনগণনাই কিন্তু ধর্মের ভিত্তিতে বাংলার বিভাগ কে আনুষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল।

শ্রী যতীন্দ্র মোহন দত্তের লেখা “How the present Census is going to help the Mohammadans”  এর ওপর ভিত্তি করে 1941 সালে প্রকাশিত, পৃথিবীজোড়া সমাদৃত “মডার্ন রিভিউ” দেখিয়েছিল কিভাবে ব্রিটিশ রা তৎকালীন দৃঢ়চেতা, বৈপ্লবিক মানসিকতা সম্পন্ন বাঙালি হিন্দু জনতা কে শায়েস্তা করেছিল বা করার চেষ্টা করেছিল। 1941 সালে র প্রবল পক্ষপাত দুষ্ট এবং সরকারি মদতপুষ্ট জনগণনা র সমালোচনা করে এবং যথারীতি পর্দা ফাঁস করে দিয়ে যতীন্দ্রমোহন দত্ত লিখেছিলেন কিভাবে বাঙালি হিন্দু জাতিকে ব্রিটিশ পিষে ফেলতে চেয়েছিল, যা কিনা পরবর্তীকালে 1943 সালের কুখ্যাত মন্বন্তর এবং 1946 সালের ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে আর নোয়াখালী দাঙ্গার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়ে যায়। এই ন্যক্কারজনক উদ্যোগের সম্বন্ধে শ্রী দত্ত লিখেছিলেন “জনগণনা করার পদ্ধতিটি De Facto (বাস্তবিকপক্ষে) করার বদলে De Jure (আইনগত ভাবে) করে, গ্রামে গঞ্জে থানার আধিকারিকদের বদলে ইউনিয়ন বোর্ডের প্রেসিডেন্টকে জনগণনা আধিকারিক হিসেবে বসিয়ে (যার ফলে পরিসংখ্যানগত হেরফের করতে পারার প্রবল সম্ভাবনা এবং সুবিধা রয়েছে) এবং জনগণনা করার সময় রাত্তির নটার সময় যখন কিনা মানুষজনের বাড়ি থাকার সময়ের বদলে ভোরবেলায় পরিবর্তিত করা এবং তারিখগুলিকে হিন্দুদের পূজা পার্বণ এবং বিবাহ ইত্যাদির দিনগুলির মধ্যে ধার্য্য করে মুসলমানদের বিভিন্ন ছলনামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের জনসংখ্যা  বাড়িয়ে নেবার ফিকির করে দেওয়া হয়েছে, এর ফলে 3 থেকে 4 শতাংশ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে”।

যতীন্দ্রমোহন বাবুর আশঙ্কা কে সত্যি প্রমান করে, পরবর্তীকালে এই ভুয়ো পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে স্যার সিরিল রাডক্লিফ এর মাধ্যমে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা গুলোকেও পশ্চিমবঙ্গ এবং ভারত কে বঞ্চিত করে পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত করা হয়েছিল।

বিগত 5 দশক ধরে, প্রথমে কংগ্রেস পরে বামপন্থী শাসক এবং অধুনা তৃণমূল শাসক দের সাক্ষী রেখে, বিগত দিনে সীমানা সুরক্ষাকারী সংস্থা গুলোর যারপরনাই লেথার্জিক আচরণের কারনে পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি মুসলমান অনুপ্রবেশকারীর সংখ্যা, ধর্মীয় এবং মান সম্মান রক্ষার্থে শরণ গ্রহণকারী হিন্দুদের সংখ্যাকে বহুগুনে ছাড়িয়ে গেছে। একথা বলা একেবারেই অসমীচীন হবেনা যে, বিগত 34 বছরের বামপন্থী প্রশাসন এবং 8 বছরের তৃনমুল প্রশাসন লজ্জাজনক ভাবে আন্তর্জাতিক সীমানা লঙ্ঘনকারীদের প্ররোচনা/সুরক্ষা দিয়ে দেশীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা কে সংকটে ফেলে দিয়েছে।

এবার জানা যাক যে জাতীয় জনসংখ্যা পঞ্জিকরণ (NPR) টা কি! 1955 সালের সিটিজেনশিপ এক্ট এবং 2003 সালের সিটিজেনশিপ রুল অনুযায়ী, ভারত সরকারের দেশজ জনসংখ্যার পঞ্জিকরণের এটি একটি উদ্যোগ। এর মাধ্যমে, প্রতিটি গ্রাম, শহর, জেলা, রাজ্য এবং দেশের সমস্ত অধিবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করা হয় (পৃথিবীর সমস্ত দেশেই এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে, এমনকি আমাদের প্রতিবেশী দেশ গুলোতেও চালু আছে) পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই তথ্য সংগ্রহ করতে দিতে এত অনীহা কেন থাকবে যদিনা কোনো বেআইনি কাজকর্ম করা না হয়ে থাকে এবং ধরা পড়ে যাবার ভয় থাকে?

নিশ্চয়ই এমন কোনো অস্বস্তিকর তথ্য উঠে আসার সম্ভাবনা রয়েছে যা রাজ্য সরকারকে যথেষ্ট বিড়ম্বনায় ফেলে দিতে সক্ষম। কিন্তু আমাদের অবশ্যই জানার প্রয়োজন এবং অধিকার রয়েছে এটা জানার যে ভারতের সুরক্ষার প্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার এর মধ্যে কতখানি এবং কি মানের ক্ষতিসাধন করেছে।

মূল টেক্সট অনিমিত্র চক্রবর্তী, তর্জমা- জয়ন্ত রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *