পুড়ে যাওয়া: প্রচলিত ভুল ও করণীয় (Burn)
পুড়ে যাওয়া আমাদের দৈনন্দিন জীবনে পরিচিত ২টি শব্দ। অসাবধানতার বশে কিংবা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে আমরা এই দুর্ঘটনায় পতিত হতে পারি। বিভিন্নভানে পুড়ে যেতে পারে, মূলত দুইভাবে-আগুন থেকে অথবা কোন তরলের (কেমিক্যাল কিংবা উত্তপ্ত) মাধ্যমে। এ ছাড়া বিদ্যুৎস্পৃশ্য হয়েও পুড়ে যেতে পারে।
সবচেয়ে বেশী ঝুকিতে থাকে আমাদের গৃহিণীরা এবং সবচেয়ে বেশী দূর্ঘটনা ঘটে শীতকালে আগুন পোহাতে গিয়ে।
পোড়া শ্রেণীবিভাগ কি কি?
1. প্রথম-ডিগ্রি (উপরের) পোড়া। প্রথম-ডিগ্রি পোড়া শুধুমাত্র ত্বকের বাইরের স্তর, এপিডার্মিসকে প্রভাবিত করে। …
2. দ্বিতীয়-ডিগ্রী (আংশিক বেধ) পোড়া। …
3. থার্ড-ডিগ্রি (সম্পূর্ণ বেধ) পোড়া। …
4. ফোর্থ-ডিগ্রি পোড়া।
♦♦ পুড়ে যাওয়ার কারণে কী কী হয় :
✪ ত্বক লাল হতে পারে,
✪ ফোস্কা হতে পারে,
✪ হলুদ কিংবা সাদাটে হতে পারে,
✪ কিংবা বাদামী থেকে কালো হয়ে যেতে পারে।
✪ কালো হয়ে যাওয়াটাকে ৪র্থ ডিগ্রী পোড়া বলে যা খুবই পীড়াদায়ক এবং স্থায়ীভাবে অঙ্গহানী ও হতে পারে।
✪ ৩য় কিংবা ৪র্থ ডিগ্রী পোড়ার ক্ষেত্রে স্নায়ুকোষ নষ্ট হয়ে উক্ত স্থানের সংবেদনশীলতা নষ্ট হতে পারে।
✪ অস্থিসন্ধিতে পুড়ে যাওয়াও যথেষ্ট ক্ষতিকর যার কারণে স্থায়ীভাবে অস্থিসন্ধির কার্যকারিতা নষ্ট হতে পারে।
✪ ত্বক শরীরে জীবাণুর প্রবেশ রোধ করে।ত্বক পুড়ে যাওয়ার ফলে তা উন্মুক্ত হয়ে পড়ে এবং খুব সহজেই সংক্রমিত হতে পারে যা রোগীর জীবন সংকটাপন্ন করে তুলতে পারে। ৬০% এর অধিক পুড়ে যাওয়া রোগীদের ক্ষেত্রে মৃত্যুর হার বেশী।
♦♦ পুড়ে গেলে করণীয়
◑ দুর্ঘটনার সাথে সাথে উক্ত স্থান থেকে সরিয়ে নিরাপদ ও খোলামেলা স্থানে নিয়ে যেতে হবে।
◑ ক্ষতস্থানে প্রচুর পরিমানে পানি ঢালতে হবে।
◑ অল্প পোড়ার ক্ষেত্রে ব্যথানাশক বড়ি এবং জীবানণুমুক্ত পোড়ার জন্য ব্যবহৃত ক্রীম ব্যবহার করতে হবে।
◑ বেশী পোড়ার ক্ষেত্রে এবং যদি শ্বাসনালী,মুখমণ্ডল কিংবা জননাঙ্গ পুড়ে যায় সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের (প্লাস্টিক সার্জনের ও প্রয়োজন হতে পারে গুরুতর ক্ষেত্রে) শরণাপন্ন হতে হবে।
◑ পুড়ে যাওয়া রোগীর প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে।
♦♦ প্রচলিত ভুল সমূহ
◑ পুড়ে গেলে অনেকেই টুথপেস্ট, ডিম,ময়দা ইত্যাদি ব্যবহার করেন, এটা কোনভাবেই করা যাবে না।
◑ পুড়ে যাওয়ার পর অনেকে পানি না দিয়ে হাসপাতালে কিংবা ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তাড়াহুড়ো প্রাথমিক চিকিৎসা অর্থাৎ পানি ঢালার কাজ করেন না,তাতে করে ক্ষতির পরিমান বৃদ্ধি পেতে পারে।
◑ অনেকে অধিক পরিমান পোড়া হলেও চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন না, যা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সম্মুখীন করতে পারে।
সুতরাং আমাদের উচিত এই দূর্ঘটনা থেকে বাচতে সবরকম সতর্কতা মেনে চলা।