পুরোহিতের কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন শীর্ণ ক্লিষ্ট ব্যক্তির কথা।

Uncategorized
পুরোহিতের কথা মনে হলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে একজন শীর্ণ ক্লিষ্ট ব্যক্তির কথা। ধুতি কাছা দিয়ে, হাতে একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে যজমানের বাড়ি বা মন্দিরে পূজা করতে যান। বর্তমান সমাজে পুরোহিতদের তেমন কেউ সম্মান করে না। তাদের আয়-রোজগারও খুব কম। পৌরহিত্য করে বেশি টাকা আয় হয় না। তা দিয়ে বছরের সংসার চলে না। সারা বছর পূজা থাকে না। তারপরও ছোটখাটো পূজায় আমরা তাঁদের প্রণামী দিই ১০ টাকা, ৫১ বা ১০১ টাকা। বড় জোর ৫০১ টাকা। দুর্গাপূজার মতো বড় পূজার সংখ্যা কম, পুরোহিতের আয়ও কম। বিভিন্ন পেশাজীবী ভাগ্য বদলে ধনী হয়ে ওঠেন। কিন্তু পুরোহিতের ভাগ্য বদলায় না, যতদিন না তিনি তার পেশা বদলান। তারা গল্পের সেই দরিদ্র ব্রাহ্মণই থেকে যান যুগ যুগ ধরে। ব্রাহ্মণের সঙ্গে ধনী শব্দটা যায় না। ফলে সমাজে এখন পুরোহিতের তথা শুদ্ধাচারী পুরোহিতের খুব অভাব।  
আমরা দিনরাত অনেকে ব্রাহ্মণ্যবাদের নামে গালিগালাজ করে হিন্দু জাতি উদ্ধার করি। কিন্তু বর্তমান হিন্দু সমাজে পুরোহিতদের দুরাবস্থার উন্নতি নিয়ে কেউ কি ভাবেন?
পুরোহিতরা পেটের দায়ে অন্যান্য পেশা অবলম্বন করছেন। পিতার সঙ্গে থেকে পূজার্চনা যা শিখেছেন তা দিয়ে বছরে কয়েকবার পার্টটাইম ইনকাম করতে পারেন বটে। সারাবছরের সংসার পৌরহিত্য করে চলে না।

সিনেমাতে যেমন পুরোহিতদের হাস্যকরভাবে উপস্থাপন করা হয়। বাস্তবেও পুরোহিতদের মানুষ সম্মান করে কম। পূজা শেষে প্রণাম করে ঠিকই, বাস্তবে সম্মান করে না খুবেকটা। বরং দুর্নীতিবাজ টাকাওয়ালা লোকটাই বেশি সম্মানিত সমাজে। 
বলতে পারেন, পুরোহিতদের মানুষ কেন সম্মান করবে? কী যোগ্যতা আছে তাদের? পৌরহিত্য অর্থাৎ পূজার্চনা করা একটা পেশা ছাড়া আর তো কিছু নয়। তাই অন্যান্য পেশাজীবীদের মতো ততটুকুই সম্মান পান পুরোহিতরা। তাহলে অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়ন করতে মানুষ কেন পৌরহিত্য ছেড়ে অন্য লাভজনক পেশা গ্রহণ করবে না? বাস্তবে হচ্ছেও তাই। 
পুর (নগর) এর হিত কামনা করেন যিনি তিনিই পুরোহিত। আবার পৌরহিত্য মানে সভাপতিত্ব বা নেতৃত্ব দেওয়া। এটাই কাঙ্ক্ষিত যে, একজন পুরোহিত একটি নগর বা গ্রামের নেতা হবেন। তিনি স্রেফ মন্দিরের পূজারী নন, তিনি পুর তথা নগরের পিতা। নগরবাসী বা গ্রামবাসীকে তিনিই সার্বিক দিকনির্দেশনা, হিতোপদেশ, ধর্মশিক্ষা ও বিভিন্ন কাজে স্বার্থশূন্য হয়ে নেতৃত্ব দেবেন। 
দুঃখের বিষয়, পুরোহিতের এই ধারণাটা গ্রহণ ও প্রায়োগিক অর্থে বাস্তবায়ন করেছে সেমিটিক রিলিজিয়নগুলো। যেমন- মুsলিm সমাজে ই*মামরা ঠিক পুরোহিতের সংজ্ঞানুযায়ী নেতৃত্বই দিয়ে থাকেন। সমাজে রাজনীতির বাইরে থেকেও সবচেয়ে সম্মানিত ও প্রভাবশালী ভূমিকা রাখনে তাঁরা। অপরদিকে হিন্দু পুরোহিতরা যেন যজমানের করুণার পাত্র হয়ে থাকেন। আর পঞ্জিকার আওতার বাইরে সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁরা থাকে অপাঙ্ক্তেয়। কেন থাকেন?
পুরোহিতরা যদি ব্রাহ্মণত্ব অর্জনে তৎপর থাকতেন, তাহলে তারা ঠিকই সম্মানিত হতেন। কিন্তু সেটা দুর্লভ ও কঠিন ঘটনা। ব্রাহ্মণ নিজের কঠোর সাধনায় হতে হয়, কিন্তু পুরোহিত হওয়া সাধনার বিষয় না, বরং প্রশিক্ষণের বিষয়। তাই আমরা পুরোহিত কনসেপ্টকে পারফেক্টলি প্রয়োগ করে হিন্দু জাতির নবনির্মাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারি। তাই পুরোহিত প্রশিক্ষণ একাডেমি চাই। 
মূল লেখা :- মানিক রক্ষিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *