পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বণ

উৎসব

———————পৌষ সংক্রান্তি—————-
    পৌষ মাসের শেষ দিন হল পৌষ সংক্রান্তি বা পৌষ পার্বণ। পূর্বে এমনকি দু-এক দশক আগেও গ্রামবাংলায় এই সময় ঘরে ঘরে আমন ধান উঠতো, সঙ্গে থাকতো খেজুর গুড়ের মরসুম। তাই এই আনন্দ উৎসব। খুব কম জায়গা ছাড়া এই ধান ও খেজুর গাছ আজ প্রায় বিলুপ্ত। তবু এই ঐতিহ্যপূর্ণ সংস্কৃতির রেশ টেনে এখনও গ্রাম বাংলায় পালিত হচ্ছে পৌষ পার্বণ।
  এই পার্বণ মূলত বসুমাতা দেবী বা বাস্তুদেবী কেন্দ্রিক ।গোবর দিয়ে নিকানো উঠানে তুলসী তলার সামনে, ভোরবেলায় লাল মাটি (আলো মাটি) দিয়ে লেপে গোলাকার আসন বানানো হয় । সেখানে চালের গুঁড়ো জলে গুলে বৃত্ত,মই,লাঙল, ফুল ইত্যাদির নকশা আঁকা হয়। এই বৃত্তটি সম্ভবত ধানের গোলার প্রতীক।এক একটি বৃত্তে সাধারণত এক এক রকম শস্যদানা রাখা হয়। সঙ্গে থাকে পূজার বাকি উপকরণগুলি। উদ্দেশ্য বসুমাতা দেবীকে খুশি করতে পারলে ঘরে আর ফসলের অভাব হবে না।
   দুপুরে প্রসাদ হিসাবে থাকে পাঁচ ধরনের সব্জী সহযোগে ভাত। কোথাও কোথাও আবার এই দিনে ঘুড়ি উড়ানোর চলও আছে। তারপর সন্ধ্যা থেকেই শুরু বিভিন্ন ধরনের পিঠে-পায়েস তৈরির কাজ। এই মহৎ দিনকে কেন্দ্র করেই গঙ্গা সাগর মেলা ও জয়দেবের মেলা অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের লোক হয়তো বিভিন্ন ভাবে পালন করে এই দিনটি। এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেও এই পার্বণটি পালিত হয় কিন্তু ভিন্ন নামে। যেমন এই উৎসবের নাম নেপালে মাঘি, থাইল্যান্ডে সংক্রান, কম্বোডিয়ায় মহাসংক্রান ।
‘পল্লী স্মৃতি’ কবিতায় বেগম সুফিয়া কামাল লিখেছেন-
‘পৌষ পার্বণে পিঠে খেতে বসে
               খুশীতে বিষম খেয়ে,
আরও উল্লাস বাড়িয়াছে মনে
               মায়ের বকুনি খেয়ে।’
নীচে তুলসী তলার সামনে আঁকা বসুমাতা দেবী বা বাস্তুদেবীর আসনের কিছু চিত্র দিলাম। চিত্র গুলি বিভিন্ন বাড়ি থেকে সংগ্রহ করা এবং একটু ভালো করে লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন, বিষয়বস্তু কিন্তু প্রায় একই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *