প্রণাম শ্রী রাসবিহারী বসুকে আজ তাঁর মৃত্যুদিনে

অনিমিত্র চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ভারত

আমরা তাঁকে বিস্মৃত হয়েছি সম্পূর্ণরূপে। তিনি – শ্রী রাসবিহারী বসু – ভারতবর্ষের সশস্ত্র বিপ্লবী সংগ্রামের উজ্জ্বলতম ব্যক্তিবর্গের অন্যতম। যদি বরেণ্য বিপ্লবীরা ও শ্রদ্ধেয় শ্রী মণি বাগচীর মতো ব্যতিক্রমী লেখকেরা তাঁর সম্বন্ধে না লিখতেন, অমর চিত্র কথার সিরিজ না থাকতো আমাদের শৈশবে তো বিস্মৃতি ঘটতো আরো পূর্বে। কিন্তু আমরা অবশ্যই বিস্মৃত হয়েছি শ্রী ব্রহ্মবান্ধব উপাধ্যায়কে, আমরা ভুলে গিয়েছি মোক্ষদাচরণ সামাধ্যায়ীকে – ইন্দুভূষণ রায়, ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী মহারাজ, পঞ্চানন চক্রবর্তী, আশুতোষ লাহিড়ী, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, পুলিনবিহারী দাস, প্রফুল্ল চক্রবর্তী, মাদারীহাটের পূর্ণ দাস, বরিশালের শঙ্কর মঠের স্বামী প্রজ্ঞানানন্দ, জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ, হেমচন্দ্র ঘোষ – সবই ভুলে গিয়েছি, বস্তুতঃ ভুলুন্ঠিত হয়েছি। কেন?

‘৪৭-এর দেশভাগ বাঙ্গালী হিন্দুর জীবনবোধকে ধ্বংস করল কিন্তু এই ভাগ, পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টি না হলেও উপায় ছিলনা। যাঁরা পূর্ব পাকিস্তানে রয়ে গেলেন তাঁদের জীবন ব্যয় হলো ইসলামী মৌলবাদের নিষ্পেষণ থেকে বাঁচার জন্য, যাঁরা সর্বস্ব ত্যাগ করে এপারে এলেন তাঁরা ব্যস্ত হলেন জীবন পুনর্গঠনে, ক্রমে উদ্বাস্তু আন্দোলন কংগ্রেস-হিন্দু মহাসভা-আরএসপির হাত থেকে পর্যবসিত হল কমিউনিস্ট পার্টির বজ্রমুষ্টিতে যে সংস্কৃতিতে রাসবিহারী বসুর চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধাচরণ করা। বাঙ্গালী হিন্দুদের যে সামাজিক স্তরটি এই দুই পরিধির বাইরে রইল তাঁরা আবদ্ধ হলেন জাতীয়তাবাদের নামে নেহরুর কংগ্রেসের হাতে। নেহরু সাহেব ১৯৫০ সালে ক্ষুদিরামের ছবিতে মাল্যদান করতে অস্বীকার করলেন কারণ ক্ষুদিরাম  অহিংসা আন্দোলনের পরিবর্তে সহিংস মতের অনুসারী ছিলেন এবং এই ঘৃণিত আচরণের বিরুদ্ধে কিঞ্চিৎ প্রতিবাদ গড়ে তোলা ছাড়া বাঙ্গালীরা কিছুই করতে পারেনি।

গত প্রায় ৭০ বছরের মর্মন্তুদ ইতিহাস এটাই এবং এর বাইরে এক কণাও নয়। কিন্তু যাঁরা রাসবিহারী বসুকে আত্মস্থ করছেন তাঁরা তাঁর পথের অনুসারী। তেজদৃপ্ত তিনি, অসীম প্রত্যয়ী, লক্ষ্যভেদে অর্জুনসম স্থিতপ্রজ্ঞ এবং তার জন্য কোন পথই ব্রাত্য নয়। তাই তিনি অক্লেশে আজীবন যোগাযোগ রেখেছিলেন বীর সাভারকারের সাথে – মুচলেকার হাস্যকর অভিযোগ তাঁকে স্পর্শ করেনি কোনদিন। প্রকৃত বিপ্লবীই জানেন কন্টকাকীর্ণ পথের কথা ও লক্ষ্যের অসীম গুরুত্ব সম্পর্কে। কথায় বিপ্লববাদী, কাজে সুবিধাবাদীদের পক্ষে যা অনুভব করা সম্ভব নয় কখনো।

তিনি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সংগ্রামী ছিলেন… তাঁর নিজের কথায় “I was ever a fighter… so one fight more…. the last and the best”…..বাঙ্গালী হিন্দুর যদি কখনও উত্তোরণ ঘটে তা ঘটবে শ্রী রাসবিহারী বসু দ্বারা প্রদর্শিত ও নির্দেশিত পথেই। 

প্রণাম শ্রী রাসবিহারী বসুকে আজ তাঁর মৃত্যুদিনে।

লেখক: অনিমিত্র চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *