প্রসঙ্গঃ হিন্দু-ভারতের দালাল ও নাস্তিক

Uncategorized

প্রসঙ্গঃ হিন্দু-ভারতের দালাল ও নাস্তিক

প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগকে যে পরিমাণ প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছে, তার কাছাকাছি নজির বাংলাদেশ তো বটেই ভারতবর্ষের কোন রাজনৈতিক দলের নাই।

হিন্দু-ভারতের দালাল, সিআইএ-এর দালাল প্রতিক্রাশীলদের সঙ্গে তথাকথিত প্রগতিশীলরাও এই অভিযোগে দগ্ধ করেছে আওয়ামী লীগকে।

আর নাস্তিক, হরহামেশা এই অস্ত্র তাক করা হয়েছে।

সেই ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু। তখন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগের ফিরিস্তি নিয়ে হাজির হয়েছিল প্রতিক্রিয়াশীল শাসক ও দলগুলো।

ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ, এসবের তোয়াক্কা করে নাই। আপন ঠিকানার পথে হেঁটেছে। পথ তৈরি করে করে হেঁটেছে। রক্ত দিয়েছে। জনগণের বিশ্বাস অর্জন করেছে। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে।

মোল্লা-মাওলানারা দলবদ্ধ বা জোটবদ্ধভাবে সারাজীবনই আওয়ামী লীগকে গালি দিয়েছে। হিন্দু-ভারতের দালাল, সিআইএ-এর দালাল, নাস্তিক, ইসলামের শত্রু, মসজিদে উলু ধ্বনি দিবে, ভারতের অঙ্গরাজ্য হবে ইত্যাদি গালি-কুৎসা-মিথ্যাচার করেই আসছে। উগ্র বামপন্থীরা এক্ষেত্রে ইন্ধন জুগিয়েছে সুযোগ ও সময় মতোন। বরাবরই। এটা নতুন কিছু না। আবারও বলছি এসবের মধ্যে নতুন কিছুই নাই। সবই পুরনো বস্তাপচা আলাপ, প্রাচীন বয়ান।

ইদানীং কোনো কোনো আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীদের মুখে শোনা যায়, বেশি কিছু লিখলে বা বললে নাকি নাস্তিকের তকমা জুটবে।

তারা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র পড়েছেন কিনা জানিনা। একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী হবার পূর্বে দলটির ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র পড়া অনিবার্য। নইলে ভুল ঠিকানায় চলে যাবার সম্ভাবনা থাকে।

ঘোষণাপত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের ঘোষণা ও কর্মসূচি শিরোনামের ৩.১ অনুচ্ছেদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও মূলনীতি-র (খ) উপ-অনুচ্ছেদে আছে, মহান মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে অর্জিত সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি(পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত) বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র, সকল ধর্ম, বর্ণ ও নৃ-গোষ্ঠীর সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভীষ্ট লক্ষ্য।

একই অনুচ্ছেদের (ঙ) উপ-অনুচ্ছেদে আছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সব ধরনের উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোরতম অবস্থান (জিরো টলারেন্স) গ্রহণ করবে এবং আধুনিক পরমতসহিষ্ণু বহুদলীয় উদার গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা গঠনে বদ্ধ পরিকর থাকবে।

উপরোক্ত দুটি উপ-অনুচ্ছেদ উপলব্ধি করা অত্যান্ত জরুরি। এতেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক দার্শনিক দিকটি স্পষ্ট করা আছে। এবং এখানে ব্যবহৃত শব্দ ও বাক্যের যে বহুরৈখিক গুরুত্ব, এটা আমি-আপনি না বুঝলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী ব্যক্তি, দল ও গোষ্ঠী এবং রাজনৈতিক ইসলামের বণিকেরা ঠিকই বোঝে। এবং এজন্যই তারা আওয়ামী লীগকে শক্ত আঘাত করে আসছে জন্মলগ্ন থেকেই। অপরদিকে প্রতি ফাগুনে দ্বিগুন হয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে অভীষ্ট লক্ষে।

এই এগিয়ে যাওয়াকে ঠেকাতে ষড়যন্ত্রের খেলা বহু পুরনো। তাঁদের মিথ্যাচার ও অপপ্রচারের কিংবদন্তি গোয়েবলসকে ছাড়িয়েছে বহু আগেই। আওয়ামী লীগেরও গা সওয়া হয়ে গেছে কিছুটা। কিন্তু আওয়ামী লীগ জানে, প্রগতির পথে হাঁটার অনেক জ্বালা-যন্ত্রণা, অনেক কষ্ট। আওয়ামী লীগের কর্মীরা জ্বালা-যন্ত্রণা, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা সয়ে আসছে আজন্ম। এই সহ্যের রাজনৈতিক শিক্ষা ও দীক্ষা দিয়ে গেছেন বাঙালির শিক্ষক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

হিন্দু-ভারতের দালাল কিংবা নাস্তিক এসব তকমা জুটবে জীবনে, আওয়ামী লীগ করলে এসব মেনে নিতে হবে। এটা জানা কথা। তথাকথিত মোল্লা-মাওলানারা এসব বলবেই। তা আপনি যত আদর-সমাদর করেন, লাভ নাই। দিনশেষে তারা এটা বলবেই, অভিযোগ তুলবেই। এই মিথ্যাচারের জবাব দেয়া অবান্তর। এটা যেমন তাঁদের ধর্মকে পুঁজি করে রাজনীতি করার অনিবার্য অবস্থানের বয়ান, একইসঙ্গে আমাদের অনিবার্য অবস্থান হলো “মহান মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে অর্জিত সংবিধানের চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি(পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত) বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র, সকল ধর্ম, বর্ণ ও নৃ-গোষ্ঠীর সমান অধিকার নিশ্চিতকরণ ও অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি, সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অভীষ্ট লক্ষ্য।”

এরপরে আরেকটি কথা আছে, ব্যাঙের আবার সর্দি!

বিদ্র: অথচ ধর্ম চর্চাকারীর তালিকা করে দেখুন, আওয়ামী লীগার পাবেন বেশি। এটা বলবার প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু প্রসঙ্গক্রমে পরবর্তীতে উদ্ভুত প্রশ্নের উত্তর অগ্রিম দিয়ে রাখা আর কি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *