ফেসবুকে মানুষ ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ হতাশা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথা আসলে কেন লেখেন!?

Uncategorized
ফেসবুকে মানুষ ব্যক্তিগত সুখ দুঃখ হতাশা প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথা  আসলে কেন লেখেন!? 
আমি লিখি কেবল জানানোর জন্য, আমাকে যারা দেখেনি, জানেনি , এবং আমার অনাগত প্রজন্মের জন্য, যদি কখনো তাদের জানতে ইচ্ছে করে আমাকে! তাই আপনারা যারা ব্যক্তিগত সকল বিষয় ফেসবুকে শেয়ার করতে দ্বিমত পোষণ করেন, তাঁরা আমার লেখাটি দয়া করে এড়িয়ে যাবেন।
মানুষের কত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইচ্ছে!  আগ্রহ! প্রাপ্তির আকাংকা থাকে!  শচীন দেব বর্মণের ” কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া…. ” গানটি শুনলেই মনে হোতো সত্যি সত্যিই কোনো ভাইকে বলি – আমায় নাইওর নিয়ে যাও!  বছর নয় দশক তো  পার হয়ে গেলো নাইওর নিতে আসা ভাইয়ের দেখা পেলাম না!  নিজের মন মত বিয়ের সম্মন্ধ বেছে নিয়েছিলাম বাবার বাড়িতে নাইওর যাবার অভিজ্ঞতা, আনন্দ কোনটাই আমি বুঝতে পারি নি কখনো। আমার ঠাম্মার মুখে শুনেছি, বাপের বাড়ির গাছের পাতাটিকেও বড় আপন মনে হয় নাকি!  নাইওর শেষে শ্বশুর বাড়ি রওনা হওয়া বাড়ির এক পিসীকে দেখেছিলাম উঠোনের বরইগাছ জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে গাছের কাচা কাচা বরই কুঁড়ি গাছ থেকে ঝরে ঝরে পড়ছিলো তার কান্নার দমকের সাথে নাড়া পরে!  সেই পিসী, তার সহোদরাগন তার মা সকলে সেই গাছে জড়াজড়ি হয়ে কাঁদছেন, আর আমরা ঝরে পরা কাচা কুল মাটি থেকে তুলে নিয়ে চিবচ্ছি! 
আমার নিজের পিসীও ফি বছর বাচ্চাদের নিয়ে পুরো ডিসেম্বর মাস থেকে যেতেন, আমাদের বাড়িতে, সেই দুই সন্তানের মাও বাপের বাড়ির বেড়ানো শেষ করে যাবার সময় কেঁদে কেটে বুক ভাসিয়ে আমাদের একটি করে দশ টাকার নোট গুছে দিয়ে হাটখোলায় গিয়ে শহরগামী বাসের জন্য দাঁড়াতেন। পরের বার আবার আমার কাকাদের কেউ গিয়ে তাকে আবার নাইওর আনতেন,  আবার সেই একই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি। আমার ভাই ছিলো না, নাইওরও যাওয়া হয়নি। তবে এক ভাই ওমান গিয়েছিলো। 
আমার বাবা তাকে ভিসা জোগাড় করে ওমান পাঠিয়েছিলেন। যে বিয়ে হওয়া নারীর বাবার বাড়ি আর  ভাই থাকে না, তাদের কোথাও হয়তো হীনমন্যতা কাজ করে,  বাবার বাড়িতে তাদের গ্রহণযোগ্যতা কেমন তা স্বামীর ঘরে এসে শো অফ করতে না পারার হীনমন্যতা। এমনিতেই তো যুগ যুগ ধরে নারী হীনমন্যতায় ভুগে আসছে তার অস্তিত্বের সংকটজনিত কারণে। কখনো সে বাবার, কখনো স্বামী পরিচয়ে পরিচিত। এই দুটো স্থানেই নারী তার আধিপত্য বিস্তার করতে মরিয়া। তার কিছুমাত্র ব্যত্যয় ঘটেনি আমার ক্ষেত্রে ও। 
ভাই বড় হয়েছে, ভাগ্য ফেরাতে বিদেশ গেছে , ভেবেছিলাম এবার হয়তো স্বামীর সামনে একটু অন্তত শো অফ করার সুযোগ মিলবে আমার!  সন্তানেরাও মামার কাছে আবদারের জায়গা খুঁজে পাবে!  মামার বাড়ির আবদার বলে কথা!  ভাই বৈদেশ গেলো,  বছর দুই পর বেড়াতে আসারও সময় হোলো। আমিও প্রমোদ গুনছি ওমান থেকে ভাইয়ের আনা জিনিসপত্রের কিছু তো অন্তত স্বামীর ঘরে দেখিয়ে নিজের ইমেজ বাড়াবো।  আর কিছু না হোক, দুটো ভাগনে ভাগ্নীর জন্য হাতে করে কিছু চকোলেট তো নিশ্চয়ই, সেও বা কম কি! 
আমার বৈদেশ প্রবাসী ভাই পিসতুতো বোনের ছোট্ট মেয়েটির  জন্য উপহার আনতে ভুললেন না, ঘরের সকলের জন্য কিছু না কিছু। তবে মাত্র অাধমাইল দূরে থাকা আমার দু সন্তানকে দেখতে এলেন খালি হাতে। বৈদেশিক চকোলেট কিংবা কোনো ছোট্ট উপহারও হয়তো তাদের পাবার মত যোগ্যতা ছিলো না!  আমি দোষ ঢাকতে ভাইকে শিখিয়ে দিলাম গলির মুখের দোকান থেকে দুটো পটেটো চিপস আর একটি প্রাণ জুসের বোতল হাতে নিয়ে ঢুকতে, নইলে যে স্বামীর বাড়িতে ভাইয়ের মান থাকে না!  
পরে অবশ্য ভাই আমার মান রেখেছিলো। আমি স্বামীর ঘর ছেড়ে চলে যাবার পর সে একটি ফোন করে আমায় জানতে চেয়েছিলো কেন আমি স্বামীর ঘর ছাড়লাম!?  আমার স্বামী তো আমায় মেরেছে কেবল, মেরে তো ফেলেনি!  সেইদিন ভাইয়ের সাথে আমার শেষ কথা বলা। তার মুখ আর কখনো দেখিনি আমি, কথাও বলিনি। 
এতকথা বললাম আসলে একটা ভালো কথা জানাতে। আপনের চেয়ে পর ভালো!  এখন আপন নয়, পর ভাই আছে!   নাইওর নিতে আসা ভাই! 
আপন বলতে আমরা আসলে যা বুঝি, তার কোনো কোনো  ভিত্তি কোথাও কোথাও খুব নড়বড়ে। আবার সম্পর্কের দায়বদ্ধতার বিষয়টিও খুব হড়কা, চাইলেই খুলে ফেলা যায়, কিন্তু কোনো কোনো সম্পর্ক এই হড়কা গেঁরোতেও আটকে থাকে আজীবন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *