Deeptarka Thakur নামের ভদ্রলোক কে আমার জানা নেই । তবে দেখছি প্রায় প্রতিটি পোস্টেই ইতিহাসের মা মাসি করার পর নিয়ম করে মিথ্যাচার দিয়ে বাঙালি সুপিরিওরিটি প্রতিষ্ঠা করার ফাঁকে বাঙালি বিজেপি কর্মী সমর্থকদের গাল দিয়েছেন । উনার পড়াশোনার যা দৌড় আর ইতিহাসে যেরকম মা মাসি উদ্ধার হয়েছে তা থেকে অন্তত এটা সিদ্ধান্তে আসা যায় যে ভদ্রলোক বামপন্থী নন । বামপন্থীদের একটা কম করে হলেও লেভেল থাকে । এতটা কনফিডেন্ট লেভেলের অশিক্ষিতপনা বামেরা করবে না । ঘেসো বাংলাপক্ষ ছাড়া এই জিনিস হওয়ার নয় ।
তা একটি পোস্টে দ্বীপ্তার্ক ঠাকুর ভদ্রলোক লিখেছেন যে বখতিয়ার খিলজী নাকি পরাজিত হয়েছিলেন লক্ষণ সেনের হাতে । তুর্করা না কি গৌড় জয় করেছিল লক্ষণ সেনের মৃত্যুর 10 বছর পর । তা এই মিথ্যাচার করার পক্ষে উনি লিখেছেন যে ড: নীহাররঞ্জন রায় এবং দীনেশ সেনের লেখাতে নাকি এর সমর্থন রয়েছে । দীনেশ সেন আমি পড়িনি , তবে নীহাররঞ্জন রায় এরকম কিছু লেখেননি ।
ইতিহাসের সাক্ষ্য হল বক্তিয়ার খিলজির আচমকা আক্রমণে লক্ষণ সেন কে গৌড় ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয় । 1202 সালেই বক্তিয়ার খিলজি সমগ্র নদিয়া সহ গৌড় দখল করে নেন । স্যার যদুনাথ লিখছেন যে এর প্রধান কারণ হল নবদ্বীপে কোন পাহারাই ছিল না । কারণ বিহার হয়ে নবদ্বীপে ঢুকতে হলে দুটো পথ । প্রথমটা রাজমহল পাহাড়ের তেলিয়াঘড়ি অঞ্চলের সরু গিরিপথ । যেখানে কড়া পাহারা বসানো ছিল । আরেকটি হল ঝাড়খন্ড অঞ্চলের ঘন জঙ্গলের ভেতর দিয়ে । এই পথে যে আক্রমণ সম্ভব তা সেনরা কল্পনা করেন নি । স্যার যদুনাথ আরো লিখছেন যে মেঘাস্থনিসের উল্লেখ করা প্রাচীন পাটলিপুত্রের আমলের সুপ্রাচীন মেরামত করা শালগাছের প্রাচীর দিয়ে নবদ্বীপ ঘেরা ছিল মাত্র । তবে খিলজী বঙ্গদেশের উত্তর এবং পশ্চিম অংশ জয় করতে পারলেও পূর্ব এবং দক্ষিণাংশ সেনদের অধিকারেই ছিল । ড: রমেশ চন্দ্র মজুমদার উল্লেখ করেছেন 1205 খ্রীস্টাব্দে লক্ষণ সেনের রাজত্বের 27 বছর পূর্তি উপলক্ষে উনি প্রজাদের মধ্যে জমি বিলি করেছেন পূর্ববঙ্গের ঢাকা জেলার ভাওয়াল পরগনায় । এর থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে লক্ষণ সেনের রাজত্ব পূর্ববঙ্গে অটুট ছিল । তবে এটা বাস্তব যে মিনহাজ ই সিরাজের 18 জন অশ্বারোহী সৈন্য দিয়ে গৌড় জয় করাটা গল্পকথা মাত্র । পূর্ববঙ্গে সেন রাজবংশ 1245 খ্রীস্টাব্দ অবধি তাদের শাসন অক্ষুন্ন রেখে ছিল । মিনহাজ সেনদের রাজত্বকাল 1260 খ্রীস্টাব্দ অবধি বললেও আধুনিক ঐতিহাসিকরা 1245 খ্রীস্টাব্দ অবধি ধরেন । 1226 খ্রীস্টাব্দে লক্ষণাবতী সুলতান গিয়াসউদ্দিন ওয়াজ পূর্ববঙ্গ আক্রমণ করলে বিশ্বরূপসেনের হাতে পরাজিত হন । বিশ্বরূপসেনের 14 বছর রাজত্বকালের শেষে সিংহাসনে বসেন তার ভাই কেশবসেন । মিনহাজ উল্লেখ করেছেন যে মালিক সৈফউদ্দিন (1231-1233) পূর্ববঙ্গ আক্রমণ করে কিছু রণহস্তি ছিনিয়ে নিতে সমর্থ হলেও কেশবসেনের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিলেন । স্যার যদুনাথ সরকার এই কারণেই উল্লেখ করেছিলেন যে বক্তিয়ার খিলজির উত্তরবঙ্গ দিয়ে তিব্বত জয় করার পরিকল্পনা শুধু তার নিজের মৃত্যু ঘটায়নি বঙ্গদেশে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে 50 বছর পিছিয়ে দিয়েছিল ।
আমার পড়া তিন প্রখ্যাত ঐতিহাসিক ডঃ রমেশচন্দ্র মজুমদার , স্যার যদুনাথ সরকার এবং নীহাররঞ্জন রায়ের সাক্ষ্য এটাই ।
উৎসাহী পাঠকগণ নিন্মোক্ত বই গুলো দেখতে পারেন —
1) The History And Culture Of The Indian People, Vol 5 : R.C.Majumdar: The Struggle For Empire :The Senas Of Bengal : page 35-41
2) The History Of Bengal : Vol 2: Muslim period (1200-1757) A.D. : Sir Jadunath Sarkar: Chapter 1: The Muslim Conquest Of Bengal : The Khilji Invasion : page1-8
3) বাংলার ইতিহাস আদিপর্ব : নীহাররঞ্জন রায় : দশম অধ্যায় রাজবৃত্ত : পৃষ্ঠা 409-415
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=698394058234278&id=100041910703252