#বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের অন্তর্গত কুতুব্- পুর নামক ছোটো একটি গ্রামের ছবি। নিচে যে ছবিটি দেখতে পাচ্ছেন সেটি আদতে একটি শিবলিঙ্গের অংশ, দেখে যদিও বোঝার উপায় নেই। কিন্তুু ধরা হয় এটি বাংলাদেশের একমাত্র স্বয়ম্ভু শিবলিঙ্গ। ঠিক কত সময় ধরে ইঁনি এখানে আছেন তা বলতে পারেন না কেউ, কিন্তু প্রায় সকলেই একমত যে এই শিবলিঙ্গটি নিজে নিজে মাটির নিচে থেকে উঠেছিল। পরবর্তীতে এই অঞ্চলের জমিদারেরা মন্দির নির্মাণ করে দেন। এনার মন্দিরের পাশে প্রাচীন চিতা রয়েছে যা বহু বছর যাবত অব্যবহৃত। বিশাল খোলা মাঠের এক প্রান্তে উঁচু বেদী করা তার একপাশে চিতা আর অন্যপাশে বিশাল বেল গাছ। এক্কেবারে গ্রাম্য অঞ্চলে মন্দিরটি অবস্থিত। তৎকালীন মুক্তাগাছার জমিদার (নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না) এনার বিশাল মন্দির নির্মাণ করে দেন। সম্পূর্ণ তামা দ্বারা মন্দিরটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন হয়েছিল।সম্পূর্ণ বাংলাদেশ ঘুরলেও আদ্যোপান্ত তামা দ্বারা নির্মিত মন্দিরের ইতিহাস নেই বললেই চলে। মন্দিরের সুউচ্চ চুড়া ,স্তম্ভ, দেয়াল, ছাদ, ফ্লোর সব ছিল তামার। বলা হয় মন্দিরের উপর সূর্যের আলো পড়লে আর তাকানো সম্ভব হতো না। কথিত আছে মহাদেব এক জমিদারকে স্বপ্নাদেশ দেন যেনো মন্দিরে চিতার ধোঁয়া প্রবেশ করতে পারে সেজন্য পরবর্তীতে একপাশে দেয়াল কেটে উন্মুক্ত করা হয়। সে মন্দিরের কিছুই এখন অবশিষ্ট নেই শুধু কিছু তামার রড মাথা বের করে অতীতের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। সে সময় প্রায় ২০ ঘর চক্রবর্তী ব্রাহ্মণ মহাদেবের পুজো অর্চনায় নিয়োজিত ছিলেন।জমিদার তাদের সকল খরচ বহন করতেন। কিন্তুু ১৯৭১ সালের যুদ্ধ সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়। ব্রাহ্মণ ঘরসহ সকল হিন্দু পরিবারের উপর গণহত্যা চালানো হয় যারা বেঁচে যান তারা বেশিরভাগ ই ভারতে চলে যান আর যারা ভারতে যেতে পারেনি তারা অন্য অঞ্চলে চলে যান। তখনই মন্দিরের সকল ধনরত্ন লুট করে নেওয়া হয় এবং মন্দিরের সকল তামার পাত লুট হয়ে যায়। বলা হয় সেই বিশাল পরিমাণ তামার দরজা জানালা চূড়া সবকিছু গলিয়ে ফেলা হয়। পরবর্তীতে শিবলিঙ্গ ভূমি থেকে তুলে ফেলা হয় এবং সেটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নিচের ছবিটিতে যে সামান্য অংশবিশেষ রয়েছে সেটি সেই ভূমিতেই রয়ে যায়। বলা হয় যারা এই অপকর্ম গুলো করেছিল কলেরাতে তাদের সম্পূর্ণ বংশ নির্মূল হয়ে যায়। সেই বাড়ি থেকেই অর্ধ ভঙ্গ শিবলিঙ্গ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে কিছু ক্ষমতাশালী হিন্দু পরিবার সেই শিবলিঙ্গটি নিয়ে কাশী চলে যান। এখনো হয়তো কাশীর কোন মন্দিরে মহাদেব রয়েছেন। বর্তমানে সারা বছর পুজো অর্চনা আর হয় না কিন্তু শিবরাত্রির দিন ভক্তদের ভিড় চোখে পড়ার মতো এবং ছোটখাটো মেলার আয়োজন হয়। শিবরাত্রির দিন এখানে পশু বলিদানের রীতি রয়েছে। এখন মন্দির বলতে গুটি কয়েক পিলার আর সিমেন্টের উঁচু বেদী রয়েছে উপরে কোনো ছাদ পর্যন্ত নেই। সম্পূর্ণ গ্রামে কোনো হিন্দু পরিবার নেই তাই নিত্য পুজো হয়না। সেই সম্পূর্ণ অঞ্চল জমিদারের নিজস্ব সম্পত্তি ছিল। সেগুলো সব অবৈধ দখল হয়ে গেছে আর কিছু বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিতে হয়েছে। যেটুকু মন্দির আছে সেটিও বহুবার দখল করার অপচেষ্টা হয়েছে, কিন্তু মহাদেবের কৃপায় তারা কোনো অজানা কারণে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। যেই বাঁধানো ঘাটে পুণ্যার্থীরা স্নান করে পুজো দিতো সেটিও এখন কারো নিজস্ব পুকুরের রূপ নিয়েছে।
মহাদেব এখানে প্রায় নিরাকার রূপেই অবস্থান করছেন।
তথ্যঃ সায়ন ধর
#কালেক্টেড পোস্ট
অই এলাকার কেউ থাকলে কাইন্ডলি উদ্যোগ নেন কিছু করার 🙂