সিলেটের এক অনুষ্ঠানে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমকে সংবর্ধনা দেওয়া হচ্ছিল । অনুষ্ঠানের শেষ দিকে বলা হল, এখন বাউল শাহ আব্দুল করিমের হাতে সোয়া ৩ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হবে ।
অন্যপাশে আব্দুল করিম বসা । ঘোষণা শুনতেই তিনি তার পাশে থাকা ছেলে শাহ নূর জালাল বাবুলকে বললেন, ‘সোয়া ৩ হাজার টাকা ! এত টাকা দিয়া আমি কি করমু ? এত টাকা আমার লাগবে না ।’
তখন ছেলে বললেন, ‘সোয়া ৩ হাজার টাকা না, সোয়া ৩ লাখ টাকা ।’
শাহ আব্দুল করিম এবার টাকার অংক শুনে রীতিমত আঁতকে উঠে বলেই ফেললেন, ‘এত টাকা দিয়া আমার কাজ কি ? মানুষ আমারে ভালোবাসে এটাই বড় । এই টাকা আমার লাগব না । এই বাবুল, চল বাড়িত যাই ।’
এত বিখ্যাত মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কোন মাপের নির্লোভ মানুষ হলে তার পক্ষে এটা বলা সম্ভব ছিল তাই ভাবছি ! তিনি ছিলেন সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার কালনী নদীর পাড় ঘেষা উজানধল গ্রামের এক কৃষক পরিবারের সন্তান । মাঠে-ঘাটে রাখাল হিসেব গরু চরাতেন । সেই রাখাল বালক থেকে হয়ে উঠলেন বাউল সম্রাট । অথচ এত খ্যাতির পরও আজীবন ছিলেন মাটির মানুষ হয়ে । তার আন্তরিকতা ছিল দেখার মত । এমনও হয়েছে, তার ঘরে খাবার নেই ; কিন্তু দূর-দূরান্ত থেকে আসা অতিথিদের নিজে না খেয়ে অ্যাপায়ন করতেন । তিনিই বাংলার বাউল সঙ্গীতকে এক অনন্য উচ্চাতায় নিয়ে গেছেন ।
ভাটি অঞ্চলের মানুষের জীবনের সুখ প্রেম-ভালোবাসার পাশাপাশি তার গান কথা বলেছে বারবার সকল অন্যায়, অবিচার, কুসংস্কার আর সাম্প্রদায়িকতার বিরূদ্ধে । আব্দুল করিম গানের অনুপ্রেরণা পেয়েছেন প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ, পুঞ্জু শাহ এবং দুদ্দু শাহের দর্শন থেকে আর বাউল গানের দীক্ষা নিয়েছিলেন সাধক রশীদ উদ্দিন ও শাহ ইব্রাহীম মাস্তান বকশের কাছ থেকে ।
কেবল বাউল গান নয় ; শরীয়তী, মারফতি, দেহতত্ত্ব, গণসংগীতসহ সংগীতের বহুরূপে সৃষ্টি ছিল তার । তার পাঁচশোর বেশী রচিত গানের সম্ভারে ২০টির মত গান ইংরেজিতে অনূদিতও হয়েছে ।
বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের প্রতি রইল শ্রদ্ধা।
(সৌজন্যে)
মোঃ আসিফ শাহ