বাঘা যতীনের দ্বিতীয় মৃত্যু, সাম্প্রদায়িক ভাইরাসে আক্রান্ত মৃতপ্রায় সমাজ

Uncategorized

বাঘা যতীনের দ্বিতীয় মৃত্যু, সাম্প্রদায়িক ভাইরাসে আক্রান্ত মৃতপ্রায় সমাজ
*
ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহান বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের জন্ম বর্তমান কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার কয়া গ্রামে; ৭ ডিসেম্বর ১৮৭৯ এবং মৃত্যু ওড়িশ্যার বালেশ্বর জেলার বালেশ্বর সরকারি হাসপাতালে, ১০ সেপ্টেম্বর ১৯১৫। তাঁর প্রকৃত নাম যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়।

সুঠাম দেহের অধিকারী যতীন কুস্তিতে পারদর্শী ছিলেন। তরুণ বয়সে একবার তিনি গ্রামে উৎপাত করা এক বাঘকে  ধস্তাধস্তি করতে করতে ছোট ছুরি দিয়ে একাই মেরে ফেলেছিলেন। যদিও এতে তার শরীরে তিনশো ক্ষত হয়েছিল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তখন কলকাতার ডাক্তার সুরেশপ্রসাদ তাঁর নাম দেন ‘বাঘা যতীন’। সেই থেকে তিনি বাঘা যতীন নামে পরিচিত।

যুগান্তর দলের প্রধান বাঘা যতীন  ব্রিটিশদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধ করে গুলিবিদ্ধ হলে তাকে বালেশ্বর সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার কাছ থেকে যাতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের স্বীকারোক্তি আদায় করতে না পারে সে জন্য তিনি নিজের শরীরের ব্যান্ডেজ নিজ হাতে ছিঁড়ে রক্তক্ষরণ করে আত্মাহুতি দেন।

তাঁর মৃত্যুতে গোটা ভারতবর্ষ শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, বিপ্লবী ভূপেন্দ্রকুমার দত্তসহ বিখ্যাত ব্যক্তিরা এ মৃত্যুতে গভীর শোকাভূত হয়েছিলেন।

হাসপাতালে ভর্তির পর বাঘা যতীনের রক্তবমী হচ্ছিল। শরীরে গুলি নিয়ে মৃত্যুর চরম মুহূর্তেও তিনি ছিলেন কঠিন, নির্ভীক। ব্রিটিশ বাহিনীর মধ্যে ছিলেন কুখ্যাত পুলিশ অফিসার চার্লস টেগার্ট। বাঘা যতীনের অবস্থা দেখে তিনি জল এগিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু যতীন তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখান করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি যার রক্ত দেখতে চেয়েছিলাম, তাঁর দেওয়া জলে আমার তেষ্টা মেটাতে চাই না।’

চরম শত্রু হলেও, বাঘা যতীনের এই বীরত্ব পুলিশ অফিসার টেগার্টকে স্তম্ভিত করেছিল। পরবর্তীকালে বাঘা যতীনকে সম্মান ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছিলেন টেগার্ট। বলেছিলেন- “Unfortunately, he is dead… I had to do my duties, but I have a great admiration for him. He was the only Bengalee who died fighting from a trench.”

এই অসীম সাহসী বাঙালীর স্মৃতিকে অম্লান রাখার জন্য কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছিলো। সেটিকে ধর্মীয় উন্মাদ সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ভাঙচুর করেছে। এ দেশের একজন বামপন্থী, সাংস্কৃতিক কর্মী, আওয়ামী লীগ কর্মী সবাই সাম্প্রদায়ীক হতে পারে বা সাম্প্রদায়ীক ইস্যুকে কাজে লাগাতে পারে। প্রমিত অসাম্প্রদায়ীক মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। 

এই ভূখণ্ডের মানুষ ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে মানবিক কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে মৃতপ্রায় ধর্মমানুষ হয়ে ধুঁকছে। বিপ্লবী বীর বাঘা যতীনের ভাস্কর্যটি মেরামতের পাশাপাশি এই জাতিকে দীর্ঘমেয়াদি মানসিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা প্রয়োজন। ইমারজেন্সি চিকিৎসা হিসেবে যারা ভাস্কর্যটি ভেঙেছে তাদের শাস্তির আওতায় আনতেই হবে। ( Nazmul Hasan)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *