বাঙ্গালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণে এ যেন এক অনন্য দৃষ্টান্ত ;
**সুন্দরিবালা এরশাদ মোড়লই বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশের হৃদয়ঃ
** ** **
সময়টা ১৯৭১ সালের ২০ মে। খুলনা জেলার চুকনগর গ্রাম, ভদ্রা নদীর পাড়। মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বর্বরতম গণহত্যা সংঘটিত হয়েছিল এখানে। একসঙ্গে ১০ হাজার হিন্দু-মুসলমান নর-নারী ও শিশুকে সেদিন হত্যা করেছিল পাকিস্তান বাহিনী। পাকিস্তানের দোসর এদেশীয় রাজাকার, আলবদর, আলসামস বাহিনী সেই নৃসংশ হত্যাযজ্ঞে সরাসরি সহযোগিতা করেছিল। চুকনগরের প্রতিটি বাড়ি থেকে সব বয়সের নারী-পুরষকে ধরে এনে দাঁড় করিয়েছিল একটি মন্দিরের সামনে। সেদিন সেই মন্দিরের উঠোন শ্মশানে পরিণত হয়। হত্যাযজ্ঞের একদিন পর সেই শ্মশানে লাশের স্তুপে নিজের পিতাকে খুঁজতে আসেন গ্রামের এক সাধারণ কৃষক এরশাদ আলী মোড়ল।অনেক পুরুষ মহিলার লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি তার পিতার লাশ না পেয়ে চলে যাওয়ার সময় একটি শিশুর কাঁন্নার শব্দ শুনে তিনি থমকে দাঁড়ালেন। পেঁচনে ফিরে এসে দেখেন যে মহিলাদের লাশ পড়ে আছে তাঁর মধ্যে একজন মহিলার বুকের উপর হামাগুরি দিয়ে একটি শিশু দুধ পানের চেষ্টা করছে। তিনি শিশুটিকে কোলে তুলে নিলেন এবং মহিলাটির দিকে থাকালেন দেখলেন মহিলাটির হাতে ধবধবে সাদা শাঁখা মাথায় রক্তরাঙা সিঁদুর। বুঝতে বাকি রেইলো না মহিলাটি সনাতন ধর্মের। শিশুটির বয়স আনুমানিক ৬ মাস। কণ্যাশিশু। তিনি বাড়ীতে নিয়ে গেলেন। সনাতন ধর্মের সাথে মিল রেখে নাম রাখলেন রাজকুমারী সুন্দরীবালা। ঘরের কোনে ঠাকুরঘর উঠানে তুলসী গাছ এবং শেখানো হয় গীতা পাঠ। একই ঘরে মাগরিবে আযান ও উলো ধ্বনি একাকার হয়। এযেনো মানুষ ও মনবতার এক অমর গাঁথা দৃষ্টান্ত। রাজকুমারী সুন্দরীবালা ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে ওঠেন। একসময় তিনি হিন্দুরীতি মেনে এক হিন্দু সম্প্রদায়ের পাত্রের কাছে তাঁর বিয়ে দেন।
এই অসাম্প্রদায়িকতার দৃষ্টান্ত যিনি স্হাপন করলেন সেই মানুষটির নাম এরশাদ আলী মোড়ল।
(সংগ্রহ, চুকনগর গনহত্যা)