বাঙ্গালী যে ক্ষণে ধর্মভ্রষ্ট হয়েছে তার বিনাশ প্রারম্ভ হয়েছে – কিন্তু ধর্মের সংজ্ঞা শুধুমাত্র ষোড়শোপচারে পূজা, পাঁচালী পাঠ ও ব্রত উদযাপন, সাধুসঙ্গ, দীক্ষাগ্রহণ নয়। ধর্মের মূল সংজ্ঞা রয়েছে কর্তব্যপালনের মধ্যে। কিন্তু রক্তপাতহীন, উপদ্রবহীন, নিরবিচ্ছিন্ন জীবনলাভের আকাঙ্খা তাকে পরিণত করেছে একটি ধর্ষিত জাতিতে, যার উপর ধর্ম, ভাষার ভিত্তিতে নির্মম অত্যাচার ইচ্ছে করলেই করা যায়।
বীরাষ্টমী ব্রত প্রাচীন ভারতে পালন করতেন মায়েরা শৌর্যশালী সন্তানলাভের প্রত্যাশায়। আধুনিক ইতিহাসে শ্রীমতী সরলা দেবী চৌধুরানীর নেতৃত্বে তার পুনর্জাগরণ ঘটে শুধুমাত্র একটি উদ্দেশ্য নিয়ে – বাঙ্গালী কাপুরুষ নয়, শস্ত্রজ্ঞানে পান্ডিত্যসম্পন্ন এক আদর্শ ক্ষত্রিয় ,প্রতিরোধ ও প্রতিশোধের নীতিতেই আস্থাবান একমাত্র।
প্রতাপাদিত্য উৎসব ও বীরাষ্টমী বাঙ্গালী হিন্দু সমাজে এক প্রবল উদ্দীপনা সৃষ্টি করে; শক্তিচর্চার আহ্বানে সমুচিতভাবে সাড়া দেয় বাঙ্গালী যৌবন শক্তি। কিন্তু অষ্টমীই কেন? কথিত আছে, মহাষ্টমী তিথিতে অসুরবিনাশী শুদ্ধসত্তার আবির্ভাব ঘটে ও এই দিন দেবী মহালক্ষ্মীরূপা বৈষ্ণবী শক্তি। দেবী তাঁর রাজরাজেশ্বরী মহিমায় দু’হাতে বর দেন ভক্তদের। বীরাষ্টমীকে কেন্দ্র করে একত্রে মিলিত হতেন তৎকালীন সশস্ত্র বিপ্লবীরাও; নয়া দেশভক্ত recruit খুঁজে পাওয়া ও জনসংযোগের জন্য।
১৯২৭ সাল থেকে সুভাষচন্দ্র বসুও বিভিন্ন পুজো কমিটির সাথে যুক্ত থাকার দরুন বীরাষ্টমী ও তাতে প্রত্যেক প্রকারের শরীরচর্চার প্রদর্শন – লাঠিখেলা, তলোয়ার ও ছোরা খেলা, বক্সিং, আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণের গুরুত্ব অনুভব করেন ও বাঙ্গালীদের তার বিস্তারে সচেষ্ট হন বিশেষভাবে। কিন্তু এই সকলের মাঝে একজন ব্যক্তির কথা না বললে ধর্মদ্রোহিতা হবে। তিনি হলেন চিরপ্রণম্য বিপ্লবী ও শস্ত্রাচার্য শ্রী পুলিনবিহারী দাস, অনুশীলন সমিতির প্রবাদপ্রতিম পুরুষ ও বঙ্গীয় ব্যায়াম সমিতির ভীষ্ম ও দ্রোণাচার্য একত্রে। তাঁর আদ্যন্ত প্রেরণায় সমগ্র বঙ্গভূমিতে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে বীরাষ্টমী।
স্বাধীনোত্তর ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গে বীরাষ্টমীর রেশ মুছে যায়নি সম্পূর্ণরূপে। তার ফল্গুধারার উপস্থিতি ছিল বেশ কিছু স্থানে, কলকাতা শহরের বাগবাজার পুজোর প্রাঙ্গণসহ। অবশ্যই, অন্নচিন্তা চমৎকারা ও বামপন্থী আন্দোলনের ধ্বংসাবলীর প্রভাব বীরষ্টমীর গুরুত্ব হ্রাস করতে যথেষ্ট সাহায্য করে। অবশ্যই, তার সাথে রয়েছে চিরাচরিত আলস্যতা/শ্রমবিমুখতা –
কিন্তু এতো ব্যর্থতার মধ্যেও রয়েছেন বেশ কিছু ব্যক্তি যাঁরা বীরাষ্টমীর মূল ভাবনাকে গ্রহণ করেছেন মন্ত্রের মতো। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন শ্রী পুলিনবিহারী দাসের পৌত্রদ্বয় শ্রী বিশ্বরঞ্জন দাস ও শ্রী মনীশরঞ্জন দাস – শরীরচর্চা ও শস্ত্রচর্চার অমোঘ বাণী ও তাঁদের পিতামহের সুমহান চিন্তাধারাকে বাঙ্গালীর মধ্যে প্রোথিত করার জন্য। প্রতি বছর তাঁদের নেতৃত্বে বীরাষ্টমী অনুষ্ঠিত হয় কলকাতার প্রাচীন বাগবাজার দুর্গাপূজার প্রাঙ্গণে।
বাঙ্গালীকে বাঁচতে হলে বীরাষ্টমীর পথেই যেতে হবে – আপনিও এগিয়ে আসুন এই পথে যদি ভবিষ্যৎ/সন্তানকে বাঁচাতে চান – or else writing is on the wall/destruction is imminent – সার্বিক ধ্বংস অনিবার্য। আগামী বছর আপনার স্থানীয় দুর্গা পুজোর মন্ডপে অনুষ্ঠিত হোক বীরাষ্টমী –