১৯৫০ সালের পূর্ব পাকিস্তানে হিন্দু গণহত্যা প্রবল আকার ধারণ করলে একটি resistance brigade গড়ে ওঠে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু মহাসভার সাথে সম্পর্কিত বরিষ্ঠ ও প্রাক্তন সশস্ত্র বিপ্লবীদের নেতৃত্বে।… কিন্তু নেহরু তাদের হুমকি দিলে – পূর্ব পাকিস্তানে প্রবেশমাত্রই সেই বাহিনীকে পেছন থেকে গুলি করবে ইন্ডিয়ান আর্মি – পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরেও একটি resistance unit গঠিত হয় প্রাক্তন সশস্ত্র বিপ্লবীদের নেতৃত্বে – একটি নামই তার মধ্যে আসে প্রকাশ্যে – শ্রী সুনীল গুহ (সম্ভবত শ্রী বুদ্ধদেব গুহ-র জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা।) …. পরবর্তী অযুত নির্যাতন ও হিন্দু গণহত্যায় resistance করা যায়নি আর। কেন করা যায়নি? সহিংস রাষ্ট্রীয় জিঘাংসার বিরুদ্ধে নিরস্ত্র জনগণ যে প্রকার অসহায় বোধ করে সেই জন্য। ওপারের বাঙ্গালী হিন্দুর বৃহত্তম অপরাধ হয়েছে হিন্দু – সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতবর্ষের উপর নির্ভর করার। এই অতি নির্ভরতা, আদ্যন্ত বিশ্বাস যে ভারতের রাষ্ট্রযন্ত্র তাদের পাশে থাকবে সর্বদা – এটিই তাদের জীবনে সৃষ্টি করেছে কালরাত্রির। যদি নিপীড়িত হিন্দুরা ভিয়েতনামের সাহায্য প্রার্থনা করতো? ইতিহাস অন্য হতো হয়তো। কিন্তু তার জন্য যে political maturity & pragmatism – এর প্রয়োজন তা অধ্যাত্মবাদের ছায়ায় নিমজ্জিত ও বস্তুবাদের শুধুমাত্র আস্বাদনে (mere benefits) সিক্ত হিন্দু সমাজের নেই – একান্ত চর্চার অভাবেই। এবং শুধু বাঙ্গালী নয়, কাশ্মীর থেকে গুজরাট, মহারাষ্ট্র, রাজস্থানের বৃহৎ অংশে সেই ব্যর্থতারই ছায়া প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
গুজরাট থেকে যে হিন্দুরা পালাচ্ছেন নিজেদের শতবর্ষ উত্তীর্ণ মন্দির বিক্রি করে তাদের কি বলা যেতে পারে? ভাগোড়ার আর এক নাম গুজরাটি? সেখানে তো বিগত প্রায় ৩০ বছর ধরে হিন্দুত্বের চাষ হয়েছে প্রতিনিয়ত। রাজস্থানের আলোয়াড়, টংক থেকে যে হিন্দুরা পালাচ্ছেন তাঁদের সম্বন্ধে কি বলা যায় – রাজপুত মতলব ডরপোক?
সমস্যা হচ্ছে, ইতিউতি বই লিখে আবার তা চরম হিন্দু বৈরী মুজিবকে উৎসর্গ করে বাজার বজায় রাখার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার সাথে যার সম্পর্ক নেই তা হল একটি বিচারধারা – হিন্দু জাতীয়তাবাদ, যা আহরণ করার জন্য পুলিনবিহারী দাস, প্রমথনাথ মিত্র, বিনয় সরকার, রাজনারায়ণ বসু, শশধর তর্কচূড়ামণির পথেই গমন করতে হবে।…. ওপার থেকে যখন ধর্ষিতা হিন্দু নারীরা পালিয়ে এপারে এসেছেন তাঁদের মধ্যে বহু এপারে পুনরায় ধর্ষিতা হয়েছেন…. তখন তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন ক’জন তা হাতের কর গুনে বলা যায়।
এবং এখন অনেকেই আছেন যাঁরা আবার সোৎসাহে সমর্থন করবেন – বাঙাল মানেই পালায়। কিন্তু একই পরিস্থিতিতে তাঁরা নিজেরা পড়লে কি করবেন? স্রেফ পালাবেন: যঃ পলায়তি স জীবতি। কারণ তাঁরাও সেই defeatist environment – এর মধ্যেই রয়েছেন। এবং বেরিয়ে আসার চেষ্টা নেই এক ছটাকও। সোশ্যাল মিডিয়ায় মস্তি, খিস্তি ও খাপের বন্যা বইয়ে আর যাই হোক বিচারধারা সৃষ্ট হয় না। মাটিতে দাঁড়িয়ে আন্দোলন তো নয়ই। রিভলভারের স্বপ্ন দেখতে ভালোই লাগে কিন্তু তা চালাতে গেলে প্রয়োজন হিম্মতের। হিম্মৎ আসে নিজের শরীর থেকে রক্ত পড়লেই।…….
কয়েক বছর আগে যে বাংলাদেশের হিন্দুদের সম্পর্কে বলা হতো তারা ওপারে ভালোই আছে তারা আজ হঠাৎ escapist হয় কি করে? ভালো অবস্থা থেকে তো কেউ escape করে না। অর্থাৎ সেই analysis টিও ছিল নিজ স্বার্থবাহী। বই বিক্রি করতে হবে, তাই বাংলাদেশকে ভালো বলতে হবে, যেখান থেকে পালানোর প্রয়োজন নেই। এখন সম্ভবত অন্য কিছু। কিন্তু একটি কথা অবশ্যই বলার – ওপার থেকে যারা এসেছেন তাঁদের জন্য সোনার থালা নিয়ে বসে থাকেনি এপারে কেউ। তাদের নিজেদের বুকের রক্তেই লাল হয়েছে কলকাতার রাজপথ।… হিসেব ছিনিয়ে নিতে হয়েছে। যদি ক্ষমতা থাকে প্রকাশ্যে আসুন – পরবর্তী ছিনিয়ে নেওয়ার লড়াই হবে ওপারেই।