বিসিএসের প্রস্তুতি : শেষ সময়ে হাহুতাশ যাদের

অনুপ্রেরণা

বিসিএসের প্রস্তুতি : শেষ সময়ে হাহুতাশ যাদের

যেসময় আপনার বন্ধুরা নিশ্বাস ফেলার ফুসরতটুকু না রেখে রাতদিন
চব্বিশ ঘন্টা বই নিয়ে পড়ে আছে। সেসময়ে আপনি সময়ের কাজ সময়ে করতে পারছেন না। পরীক্ষার সময় ঘনিয়ে আসায় তীব্র অনুশোচনা আর যন্ত্রণায় কাটছে সকাল দুপুর। এখন বইয়ের স্তুপের দিকে তাকালেই রাজ্যের হতাশা ভর করে। বিক্ষিপ্ত মনে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা হয়ে উঠে না যাদের। বিসিএস প্রিলিমিনারি প্রার্থী সেই চিরদুঃখীদের উদ্দেশে আমার কয়েকটি পরামর্শ :

১. হাল ছেড়ে দেবেন না : এমন এক সময় ছিল, যখন বিগত বছরের প্রশ্নসমূহ মুখস্থ করেই দিব্যি প্রিলি পাস করার আশা করা যেত। অথচ পিএসসি বর্তমানে নির্ধারিত সিলেবাসের অধীনে প্রশ্ন করলেও গতানুগতিকতার বাইরে যাওয়ার একটি প্রবণতা তাদের প্রণীত বিভিন্ন পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে লক্ষ্য করা যায়।

ফলে প্রথাগত বই বা কোচিংয়ের লেকচারশিট মুখস্থ করে নিশ্চিত সাফল্যের গ্যারান্টি কমছে। আমি বলছি না যে, যারা দিনরাত কষ্ট করে প্রস্তুতি নিয়েছেন তাদের সাথে আপনি সমান্তরালে অবস্থান করছেন। কিন্তু পিএসসি যখন নোট- গাইড মুখস্থের প্রবণতা কমাতে চাইছে (যেমন : সম্ভবত ৩৫তম বিসিএসে এসেছিল, বুড়ি হইলাম তোর কারণে গানের গীতিকার কে? বলুন, কোন বই/গাইডে এর উত্তর পাবেন? এটি তারাই জানবে, সংগীত সম্পর্কে যাদের ধারণা রয়েছে) [ fb/BDCareerGuide ]

তাই আহামরি প্রস্তুতি না থাকা সত্ত্বেও প্রশ্নপত্র একটু এদিক ওদিক হলেই আপনার পক্ষে পাশার দান উলটে যেতে পারে। আর এ জন্য, যে সামান্য সময়টুকু আছে, এর মধ্যে প্রস্তুতি গুছিয়ে ফেলার বিকল্প নেই। “আমার দ্বারা কিচ্ছুটি হবে না” ভেবে যদি হাতপা গুটিয়ে বসে থাকেন তাহলে সুদূরে জ্বলা সম্ভাবনার এই মিটিমিটি প্রদীপটিও তিরোহিত হয়ে যাবে, নিশ্চিত থাকুন।

২. কি পড়বেন কতটুকু পড়বেন : এই সামান্য সময়ে জ্ঞানের জাহাজ হবার চেষ্টা দূরে থাকুক সিলেবাসের প্রয়োজনীয় টপিকগুলো টাচ করাও সম্পূর্ণ অসম্ভব ব্যাপার। আমি শুধু কয়েকটা বইয়ের নাম বলি (জানি, অনেকে ঠোঁট উল্টে বলবেন, এ আর নতুন কি। অনেক অনেক আগ থেকেই আমরা এসব জানি – প্লিজ, আমার এ লেখা আপনার জন্য নয় জনাব)

১. কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স ও ওয়ার্ল্ড বিশেষ সংখ্যা।
২. এশিওরেন্স ও প্রফেসরস ডাইজেস্ট। [ fb/BDCareerGuide ]
৩. সকল বিষয়ের বিগত সালের প্রশ্নসমূহ।
৪. সময় করতে পারলে mp3 সিরিজের বইগুলোর শুধু এমসিকিউ প্রশ্নসমূহ।

পরীক্ষার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত এই বইগুলোতে যতটুকু পারেন চোখ বুলাতে থাকুন। (বিশেষ করে ১ ও ২ নং বই)। প্রিলি পাস করতেই হবে বা সব তথ্য মুখস্থ করে ফেলতে হবে, এমনটা ভেবে নিজেকে অযথা চাপে ফেলবেন না। মনে মনে ভাবুন, “আমার কোন পরীক্ষা-টরীক্ষা নেই, আমি এই দেড় মাস বই কয়েকটা শুধু রিডিং পড়ে যাব”। আবারো বলছি, কোন অজানা তথ্য এখন আর মুখস্ত নয়, শুধু বারবার নজর বুলিয়ে যেতে থাকুন, যত বেশি পারেন।

৩. প্রস্তুতি আছে এবং নেই : আপনার প্রস্তুতি একদমই নেই, কবে কে একথা বলেছে। আপনি কি মাধ্যমিক পর্যায়ের বাংলা, অংক, ইংরেজি, সাধারণ বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান না পড়েই এ পর্যায়ে চলে এসেছেন? বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময় কিছুই পড়েননি!! মাঝেসাজে রেডিও-টিভির খবর বা পেপার পত্রিকার পাতা খুলে দেখেননি!

মনে রাখবেন, বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার সিলেবাসের একটি বড় অংশ আপনি এরই মধ্যে কাভার করে এসেছেন। কেউ কেউ রাজ্যের আধাঁর ভরা মুখে, ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলবেন, ভাইয়া, সবতো ভুলে গেছি”। আরে ভাই, ভুলে গেছেন বলেইতো উপরের বই কয়েকটা পড়তে বলেছি। শুরু করে দেখুন, আপনার জানার মধ্যে দেখবেন অনেক কিছুই রিভাইজ হয়ে যাচ্ছে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, প্রথাগত বই পড়ে প্রস্তুতি না নিলেও যা ভাবছেন, আপনার প্রস্তুতি আসলে অতটা ‘জিরো’ না। তাই আত্মবিশ্বাস হারাবেন না। এই শেষ সময়টার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করুন।

৪. লড়াইয়ের সময় কোনদিন শেষ হয় না :দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। জীবনভর মেধা-যোগ্যতায় আপনার পেছনে পরে থাকা অনেকের সাড়ম্বর বিজয়োল্লাস অসহায়ভাবে প্রত্যক্ষ করার সময় ঘনিয়ে আসছে ক্রমশ। এখনও কি জেগে উঠবেন না! হাতপা বাঁধা জবাই হতে যাওয়া অবোধ পশুটিওতো মরে যাওয়ার আগে সর্বশক্তি উজাড় করে বাঁধন ছিন্ন করে বাঁচার শেষ চেষ্টা করে! [ fb/BDCareerGuide ]

রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো ছাইভস্ম থেকেও জেগে উঠার প্রত্যয়ে পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে নিজেকে প্রকৃত বীরপুরুষ প্রতীয়মান করে তুলুন। বিপদ যতই অবধারিত আর অত্যাসন্ন হোক, হারার আগে হেরে না যাওয়ার ইস্পাতকঠিন সংকল্পে দাঁতে দাঁত চেপে আপাত অসম্ভব লক্ষ্যটাকে জয়-পরাজয়ের মাঝামাঝি পেন্ডুলামে ঝুলিয়ে দিন না!

সাহসিকতার, অদম্য লড়াকু সৈনিকদের জয় হোক।

লেখক : শামীম আনোয়ার
এএসপি, ৩৪ তম বিসিএস (পুলিশ)

সূত্র: (ক্যাম্পাসলাইভ২৪.কম)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *