
গোঁসাই আখড়া, নাটোর
গোঁসাই আখড়া বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত একটি প্রাচীন স্থাপনা। এটি মূলত নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান।
অনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম পাদে নির্মিত ফকির চাঁদ বৈষ্ণব গোঁসাইর মন্দির, সমাধি ও যোগী সম্প্রদায়ের বিরাট আখড়া রয়েছে। এককালে এই আখড়াটিই ছিল এদেশের যোগী সম্প্রদায়ের একটি কেন্দ্র। শৈব, বৌদ্ধ, তান্ত্রিক, সহজিয়া ও যোগী এই কয়টি ধর্মমতের সমন্বয়ে উদ্ভূত ধর্মই নাথধর্ম। এই ধর্মের মূল হলো মানবদেহ। দেহেই বিশ্বব্রহ্মান্ডের ন্যায় নিয়ত সৃষ্টিকর্ম চলছে অর্থাৎ মানব দেহই বিশ্বব্রহ্মান্ডের ক্ষুদ্ররুপ বা অংশ। অপরিপক্ব দেহকে যোগ বা সাধনার দ্বারা পরিপক্ব করতে পারলে শিবত্ব বা অমরত্ব লাভ করা যায়। এই অমরত্ব লাভের সাধনার নামই ‘যোগ’। যোগসাধনপন্থী উক্ত সম্প্রদায়েরর গুরু ছিলেন মীননাথ। গুরুদের নামের শেষে ‘নাথ’ থাকায় ‘নাথযোগী’ সম্প্রদায় নামে পরিচিত। সাধক পদ্ধতির ভিন্নতায় নাথপন্থিরা নাথযোগী, কাপালীযোগী ও অবধূতযোগী শ্রেণীতে বিভক্ত ছিল। সিদ্ধাছাড়া অন্যান্যরা গৃহী। সিদ্ধাযোগী ও যোগিনীরা বিশেষ ধরনের পরিচ্ছদ, গলায় রুদ্রাক্ষের মালা ও কালে কুন্ডল পড়ে লোকালয়ে ঘুরে বেড়াতো এবং গোরক্ষনাথ, গোপীচন্দ্রের সন্যাস, নাথগীতিকা, দোহা ইত্যাদি নাথ ধর্মের মাহাত্মামূলক গান পরিবেশন করে ভিক্ষালব্দ অন্নে জীবিকা নির্বাহ করতো।

কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির, কিশোরগঞ্জ
চন্দ্রাবতী মন্দির বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলায় অবস্থিত বাংলা আদি মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবাহী একটি স্থাপনা। চন্দ্রাবতী বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে প্রথম বাঙালি মহিলা কবি হিসেবে সুবিখ্যাত। প্রকৃতপক্ষে মন্দিরটি একটি শিব মন্দির।
কবি চন্দ্রাবতী ছিলেন অত্যন্ত প্রতিভাধারী ও সম্ভাবনাময় সাহিত্যিক। নয়নঘোষ প্রনীত পালাগান ‘চন্দ্রাবতী’ থেকে জানা যায় যে, কৈশোরে চন্দ্রাবতী ও স্থানীয় এক ব্রাহ্মন যুবক জয়ানন্দের মধ্যে মনের আদান-প্রদান হয়। তাদের এ ভালবাসার কথা চন্দ্রাবতীর পিতা বংশীদাস মেনে নেন। তিনি তাদের বিয়ের ব্যবস্থাও করেন। কিন্তু পরিশেষে জয়ানন্দ চন্দ্রাবতীকে বিয়ে না করে অপর এক মুসলিম রমণী কমলাকে বিয়ে করেন। এই বিয়ের জন্য জয়ানন্দ ধর্মান্তরিত হন। এই ঘটনায় চন্দ্রাবতী ভীষণভাবে ভেঙে পড়েন। তিনি পিতার কাছে এসময় তাঁর উপাসনার জন্য একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য অনুরোধ করেন। এছাড়া চন্দ্রাবতী সিদ্ধান্ত নেন তিনি চিরকুমারী থাকবেন। তাঁর পিতা কন্যার আবদার অনুযায়ী ফুলেশ্বরী নদী তীরে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে এটি চন্দ্রাবতী মন্দির নামে দাঁড়িয়ে আছে ফুলেশ্বরী নদীতীরে।

গোপালগঞ্জ মন্দির, দিনাজপুর, রংপুর
গোপালগঞ্জ মন্দির বা শ্রী গোপাল মন্দির বাংলাদেশের রংপুর বিভাগের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন স্থাপনা।
গোপালগঞ্জ মন্দিরটি একটি প্রাচীন উঁচু গোলাকার মন্দির। এর অভ্যন্তরে একটি কক্ষ আছে। এর পাশে আরেকটি মন্দির আছে। এজন্য একে গোপালগঞ্জ জোড়া মন্দিরও বলা হয়। বর্তমানে মন্দিরটি চতুর্দিক পরিচর্যার অভাবে গাছগাছালিতে ঢাকা পড়েছে।

ছোট আহ্নিক মন্দির, পুঠিয়া, রাজশাহী
ছোট আহ্নিক মন্দির পুঠিয়া রাজবাড়ীর সংলগ্ন দক্ষিণ পাশে উত্তর দক্ষিণ দিকে লম্বালম্বি ভাবে এ মন্দিরের অবস্থান। ১৮শ খ্রিষ্টাব্দে প্রেম নারায়ণ কর্তৃক এই মন্দিরটি নির্মাণ করা হয় বলে জানা যায়।
দোচালা আকৃতির এই মন্দিরটির পূর্ব দিকে পাশাপাশি তিনটি এবং দক্ষিণ দিকের দেয়ালে একটি খিলান দরজা আছে। উত্তর ও পশ্চিম পাশের পাশের দেয়ালের বহিরাংশে কোন অলঙ্করণ নেই এবং তা সমতল। এর কর্নার ও কার্নিশ সমূহে পোড়ামাটির চমৎকার চিত্রফলক পরিলক্ষিত হয়। পাতলা ইট ও চুনসুরকি দ্বারা নির্মিত এ মন্দিরের ভেতরের চার পাশের দেয়ালে চারটি পদ্ম এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকের দেয়ালে দুইটি তাক আছে। মন্দিরের পূর্ব দেয়ালের বাইরের দিক শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবনলীলা, জীব-জন্তর ও লতা-পাতার পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা সজ্জিত।

মুরাপাড়া জমিদার বাড়ির মন্দির, রূপগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ
মুড়াপাড়া রাজবাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার অন্তর্গত রূপগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত একটি শতবর্ষী জমিদার বাড়ি।
মুড়াপাড়া রাজবাড়িটি ৬২ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেন বাবু রামরতন ব্যানার্জী যিনি এ অঞ্চলে মুড়াপাড়া জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জমিদার বাড়িটিতে ৯৫টি কক্ষ রয়েছে, রয়েছে সংলগ্ন ২টি পুকুর বেশকিছু নাচঘর, আস্তাবল, মন্দির, ভাণ্ডার ও কাচারি ঘর। মন্দিরের ওপরের চূড়াটি প্রায় ৩০ ফুট উঁচু।

ঢাকেশ্বরী মন্দির, ঢাকা
ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত একটি মন্দির। এই মন্দিরটি বাংলাদেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এটি একটি সতীপীঠ। সতী দেহ ছিন্ন হওয়ার পর তার কিরিটের ডাক (উজ্জ্বল গহনার অংশ) এই স্থানে পড়েছিল।
ধারণা করা হয়, এটি ঢাকার আদি ও প্রথম মন্দির। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, ঢাকেশ্বরী শব্দ থেকেই ঢাকা নামের উৎপত্তি। ঢাকেশ্বরী দেবী ঢাকা অধিষ্ঠাত্রী বা পৃষ্ঠপোষক দেবী। কিংবদন্তি অনুযায়ী, রাজা আদিসুর তার এক রানীকে বুড়িগঙ্গার এক জঙ্গলে নির্বাসন দেন। জঙ্গলে রানী প্রসব করে পুত্র বল্লাল সেন কে। জঙ্গলেই বেড়ে ওঠে বল্লাল সেন। শৈশবে জঙ্গলের মধ্যে বল্লাল সেন একটি দেবী মূর্তি পান (মতান্তরে, রাজ ক্ষমতায় বসার পর এই জঙ্গলে তিনি মূর্তিটি পান)। বল্লাল সেন বিশ্বাস করতে শুরু করেন, জঙ্গলে সকল বিপদ-আপদ থেকে এই দেবী দুর্গাই তাকে রক্ষা করছে। পরে বল্লাল সেন রাজ ক্ষমতায় আসিন হলে, তার জন্মস্থানে যেখানে দেবীর মূর্তি পেয়েছিলেন সেখানে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। মূর্তিটি জঙ্গলে ঢাকা অবস্থায় পেয়েছিলেন যায় বলে দেবীর নাম হয় ‘ঢাকা+ঈশ্বরী’ বা ‘ঢাকেশ্বরী’। মন্দিরটিও ‘ঢাকেশ্বরী মন্দির’ নামে পরিচিতি পায়।
এই মন্দিরের দেবী ঢাকেশ্বরীর আসল ৮০০ বছরের পুরোনো বিগ্রহটি কলকাতার কুমারটুলি অঞ্চলে দুর্গাচারণ স্ট্রিটের শ্রী শ্রী ঢাকেশ্বরী মাতার মন্দিরে রয়েছে। দেশ ভাগের সময় বিগ্রহটি ঢাকা থেকে কলকাতায় আনা হয়। দেশভাগ-পরবর্তী দাঙ্গার সময় সম্ভাব্য আক্রমণ এবং লুন্ঠনের হাত থেকে দেবীকে রক্ষা করতে বিশেষ একটি বিমানে ঢাকেশ্বরী দেবীর আসল বিগ্রহটি কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল।
বর্তমানে ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে থাকা বিগ্রহটি মূল মূর্তির প্রতিরূপ। এখানে প্রতি বছর ধুমধামের সাথে দূর্গা পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

ঢোলহাট মন্দির, ঠাকুরগাঁও, রংপুর
বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত একটি প্রাচীন স্থাপনা। এটি মূলত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার অন্তর্গত একটি প্রাচীন মন্দির।
ঢোলহাট মন্দিরটি একটি লম্বা প্রাচীন উঁচু গোলাকার এক কক্ষের মন্দির। উপরে ওঠার জন্য সিঁড়ি আছে। একসময় এর দেয়ালে কারুকার্য ছিল তা বর্তমান জীর্ন অবস্থা দেখেও বুঝা যায়।

জোড়া শিব মন্দির, যশোর
যশোর পৌরসভার অন্তর্গত মুরলীতে অবস্থিত ঐতিহাসিক জোড়া শিব মন্দির। সেন রাজবংশের সর্বশেষ রাজা ছিলেন লক্ষ্মণ সেন। তিনি শিব ভক্ত পরায়ণ নৃপতি ছিলেন। রাজা লক্ষ্মণ সেন শিব ভক্ত প্রজাদের জন্য ভৈরব নদের পশ্চিম তীরে ১১৮৯ খ্রীষ্টাব্দে পাশাপাশি এই মন্দির দুইটি প্রতিষ্ঠা করেন। সেই হিসাবে মন্দিরের বয়স হয় প্রায় ৮২৩ বছর। এত বৎসর পার হলেও নির্মাণ শৈলী এত মজবুত এবং স্থানীয় জনগণের রক্ষা করার কারণে সেই প্রমাণে ক্ষয় প্রাপ্ত হয়নি।
মন্দিরের মধ্যে বেদীর উপর স্থাপন করেন যোগাসনে অধিষ্ঠিত প্রস্তর নির্মিত শিব মূর্তি। পাশে শুয়ে আছে বৃষভ। মন্দির দুটি প্রত্নতাত্ত্বিক এবং ধর্মীয় ঐতিহ্য বহন করে। এর নির্মাণ কুশলতা অতীব দৃষ্টিনন্দন। এই মন্দিরের উচ্চতা প্রায় ৪০ ফুট। মন্দিরের গায়ে লেখা আছে ১১৮৯ ইং সন।

পঞ্চরত্ন মহাদেব মন্দির, মুন্সিগঞ্জ
মুন্সিগঞ্জের রাজেন্দ্র বাবুর বাড়িটিকে কেউ কেউ জমিদার বাড়ি বলে। রাজেন্দ্র বাবুর বাড়ির পাশেই এই প্রাচীন পঞ্চরত্ন মহাদেব মন্দিরটির অবস্থান।

নলডাঙ্গা রাজবাড়ির পঞ্চরত্ন মন্দির, ঝিনাইদহ
নলডাঙ্গা রাজবংশের প্রখ্যাত রাজা ছিলেন ইন্দ্রনারায়ণ। ১৬৮৫ খ্রীষ্টাব্দে তিনি একটি অতি সুন্দর মন্দির নির্মাণ করেছিলেন। মন্দিরটি বর্গাকারে নির্মিত। সন্ন্যাসী ব্রহ্মনগিরির আদেশে কাশী থেকে ভাস্কর এনে মন্দিরটি প্রস্তুত করা হয়েছিল।
মন্দিরের গর্ভগৃহের উপর একটি এবং চারকোনে চারটি মোট পাঁচটি চুড়া বা রত্ন ছিল। এজন্য মন্দিরকে পঞ্চরত্ন মন্দির বলা হত। পঞ্চরত্ন মন্দির নির্মাণ করার সময় একটি কালি মুর্তিও প্রস্তুত করা হয়েছিল। ইন্দ্রনারায়ণের নামানুসারে মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের নাম হয়েছিল ইন্দ্রেশ্বরী। পরে এর নাম সিদ্ধেশ্বরী হয়।

লাখুটিয়া জমিদার বাড়ি
লাখুটিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর বরিশাল জেলার লাখুটিয়া গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।
জমিদার বাড়িটি আনুমানিক ১৬০০ কিংবা ১৭০০ সালে জমিদার রাজচন্দ্র রায় নির্মাণ করেন। জমিদার বংশের লোকেরা অনেক জনহিতকর কাজ করে গেছেন। তারা তখনকার সময়ে উল্লেখযোগ্য “রাজচন্দ্র কলেজ” ও “পুষ্পরানী বিদ্যালয়” নির্মাণ করেছিলেন। বর্তমানে এখানে তাদের কোনো উত্তরসূরি নেই। এখানে শেষ জমিদার ছিলেন দেবেন রায় চৌধুরী। পরে তিনি সপরিবারে ভারতের কলকাতায় চলে যান এবং সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
জমিদার পরিবারের বসবাসের জন্য দ্বিতল একটি প্রাসাদ, একটি মন্দির ও দিঘী রয়েছে। বর্তমানে প্রাসাদের ও মন্দিরের অনেকাংশ প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। ভবনগুলি শ্যাওলা পরে আচ্ছাদিত হয়ে আছে৷

চৌধুরী বাড়ির মঠ, বিক্রমপুর, মুন্সিগঞ্জ
এক সময় এই জনপদে হিন্দু সম্প্রদায়ের একক আধিপত্য ছিল। সেই সময় শ্রীনাথ চৌধুরী প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। জনশ্রুতি আছে যে, শ্রীনাথ চৌধুরী তার পিতার সমাধি স্থলের ওপর এ মঠটি নির্মাণ করে ছিল। এ মঠটির যাবতীয় ব্যয় ভার রাজা জগৎ কিশোর আচায্য চৌধুরী বহন করেন।
চৌধুরী বাড়ির মঠ ও মন্দিরের সাবিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রয়াত কেদারেশ্বর চৌধুরী। ওরফে জলা মোক্তার। তিনি পেশায় একজন অভিজ্ঞ মোক্তার ছিলেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর দালালরা জলা মোক্তার সহ চৌধুরীবাড়ি থেকে ধরে এনে ১৭ জনকে হত্যা করে।
মঠের নিচে যে মন্দির ছিল, সেখানে কয়েকটি কষ্টি পাথরের বিষ্ণু মূর্তি ছিল। এ মূর্তিগুলো স্বর্ণের চোখে অলংকৃত ছিল। এগুলো ’৭১-এর যুদ্ধের আগেই চুরি হয়ে যায়। মঠটির আনুমানিক উচ্চতা ২০০ ফুট।

চন্ডিমুড়া মন্দির, কুমিল্লা
চন্ডিমুড়া মন্দির কুমিল্লা জেলা সদরে অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা।
চন্ডী মুড়ার মন্দির উচুঁ ঢিবির উপর অবস্থিত। মন্দিরের প্রবেশ পথে রয়েছে ১৪২টি সিঁড়ি। সিঁড়ির শেষ মাথায় মন্দিরের প্রধান প্রবেশপথ। স্থানীয় জনশ্রুতি থেকে জানা যায়, সপ্তম শতাব্দীতে বৌদ্ধ রাজা দেব খড়গ তার স্ত্রী প্রতীভা দেবীর অনুরোধে তার স্মৃতিকে অমর করে রাখতে এখানে চন্ডী মন্দির ও এর পাশে আরও একটি শিব মন্দির নির্মাণ করেন। এর মধ্যে চন্ডী মন্দিরে সরস্বতী ও শিব মন্দিরে শিবকে স্থাপন করে দুজনের আলাদা আলাদা পূজা অর্চনা করা হত।
মন্দিরের গায়ে পাওয়া শিলালিপি থেকে অনেকেই ধারণা করেন হিন্দু ধর্মের আভির্বাবেরও পূর্বে মন্দিরটি এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।

গোরক্ষনাথ মন্দির, ঠাকুরগাঁও
ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার একটি ইতিহাস সমৃদ্ধ স্থান হলো গোরকই বা গোরকুই। আর এখানেই রয়েছে বিখ্যাত গোরক্ষনাথ মন্দির ও নাথ আশ্রম। ভারত থেকে আসা গোরক্ষনাথ নামে এক ঠাকুর এই এলাকায় বসবাস করছিলেন। তার নামানুসারে গ্রামের ও মন্দিরের নামকরণ হয় গোরকই।
মন্দির চত্বরটিতে মোট ৫টি মন্দির রয়েছে। ৩টি শিব মন্দির ও একটি কালিমন্দির ছাড়াও একটি প্রধান মন্দির আছে যা নাথ মন্দির নামে পরিচিত। দক্ষিণমুখী নাথমন্দিরটি চত্বরের প্রায় মধ্যস্থলে অবস্থিত। এর পেছনে কালো পাথরের খন্ড দিয়ে ঘেরা এক অলৌকিক কুয়ো আছে। কুয়োর একেবারে নিচু অংশটুকুও পাথর দিয়ে বাঁধানো। কিন্তু মাঝে একটি ছিদ্র আছে যা দিয়ে নিচ থেকে কুয়োতে জল আসে। কুয়োর চারপাশে দাঁড়িয়ে একসঙ্গে অনেক লোক পূণ্যস্নান করলেও কুয়োর জল কমেনা।
রক্ষণাবেক্ষণে অবেহলা, অযত্ন আর নিয়মিত তদারকির অভাবে ঐতিহ্য হারাতে বসেছে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রাচীন গোরকই আশ্রম ও দুর্গা ও শিব মন্দির। দায়িত্বে থাকা লোকজনের অবহেলার কারণে মন্দিরটির ভিতরে এখন গরু-ছাগলের অবাধ বিচরণ।

কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দির, পুঠিয়া, রাজশাহী
কৃষ্ণপুর গোবিন্দ মন্দির, পুঠিয়া, রাজশাহী জেলার অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে বিবেচিত।
মন্দিরটি বর্গাকারে নির্মিত। পূর্ব ও দক্ষিণ দেয়ালে একটি করে দরজা আছে। তবে পূর্ব প্রবেশ পথটির বাইরের দুপাশে এবং উপরে পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা নান্দনিকভাবে অলংকৃত। অলংকুত পূর্ব পাশের খিলান দরজাটিই মূলত প্রধান প্রবেশ পথ। পূর্ব পাশের প্রবেশ প্রথের পাশে ও উপরে তেমন কোন অলংকরণ নেই।
ছাদের কার্ণিশ পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা চমৎকারভাবে সজ্জিত। পশ্চিম পাশের দেয়ালের বহিরাংশ সমতল এবং কোন অলংকরণ নেই। এ মন্দিরের কোন শিলালিপি পাওয়া যায় নি। তবে নির্মাণ শৈলির বিচারে এটি ১৮০০-১৮৭০ খ্রিষ্ঠাব্দে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়।

রামসাগর মন্দির, দিনাজপুর
রামসাগর মন্দির বাংলাদেশের রংপুর বিভাগে অবস্থিত একটি প্রাচীন স্থাপনা। এটি মূলত দিনাজপুর জেলার দিনাজপুর সদর উপজেলার অন্তর্গত; রামসাগরের উত্তর পার্শ্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির।
রামসাগর মন্দিরটি একটি প্রাচীন উঁচু গোলাকার মন্দির। এর অভ্যন্তরে তিনটি কক্ষ আছে। বর্তমানে মন্দিরটির ভগ্নাবশেষ টিকে আছে এবং চতুর্দিক পরিচর্যার অভাবে গাছগাছালিতে ঢাকা পড়েছে।

কাথুলি মন্দির, মেহেরপুর, বাংলাদেশ।

গোবিন্দদেব জোড়বাংলা মন্দির, নড়াইল, বাংলাদেশ।

জগন্নাথ রথ মন্দির, পুঠিয়া, রাজশাহী
জগন্নাথ রথ মন্দির পুঠিয়ার মন্দির চত্বরে অবস্থিত ১৩টি মন্দিরের একটি। স্থানীয়ভাবে এটি জগন্নাথ মন্দির নামেও পরিচিত। এটি ১৮২৩ খ্রিষ্টাব্দ মতান্তরে ১৮৩০ খ্রিষ্টাব্দে রানী ভূবনময়ী নির্মাণ করেন বলে জানা যায়।
এটি পাতলা ইট, চুন-সুরকি দ্বারা নির্মিত। চমৎকার নির্মাণশৈলী বিশিষ্ট এ মন্দিরে পুঠিয়ার মন্দির চত্বরে অবস্থিত অন্যান্য মন্দিরের মত পোড়ামাটির কোন ফলক দেখা যায় না। চারপাশে বারান্দা বিশিষ্ট অষ্টকোণাকৃতি এ মন্দিরে বাইরের দিকে ৮টি পিলার আছে। উত্তর ও পূর্ব দিকে রয়েছে দুইটি খিলান দরজা। দরজার চৌকাঠ বেলে পাথরের তৈরি এবং এতে চমৎকার অলঙ্করণ রয়েছে। গম্বুজ আকৃতির এই মন্দিরের ছাদের উপরের অংশ কলস আকৃতির ফেনিয়েল দ্বারা সজ্জিত। দোতলাবিশিষ্ট এ মন্দিরের উপরের কক্ষটি নিচের কক্ষের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট এবং এই কক্ষের চারপাশে উন্মুক্ত প্রবেশ পথ রয়েছে।

আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাড়ির ঠাকুরদালান, বাড়ুলী, খুলনা
আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের বাড়ি খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলায় অবস্থিত বাংলাদেশের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা। এটি উপজেলার বাড়ুলী গ্রামে অবস্থিত। ২রা আগস্ট ১৮৬১ সালে বাংলাদেশী বিজ্ঞানী ও রসায়নবিদ আচার্য্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় এ বাড়িতেই জন্মগ্রহণ করেন।
পরিত্যক্ত হওয়ার পর বাড়িটি বেশ কয়েকবার দখল হওয়ার পর বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটিকে সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। বাড়িটির অবস্থান কপোতাক্ষ নদের তীরে।
বাড়িটির সামনেই রয়েছে পাথরে অঙ্কিত প্রফুল্ল চন্দ্র রায়ের একটি ছবি। এর একপাশে রয়েছে একটি পুকুর। মাঝখানে একটি ফাঁকা স্থানকে ঘিরে তৈরি করা হয়েছে পুরো বাড়িটির নকশা। দোতালা মূল ভবনের পাশেই রয়েছে ছোট মন্দির ও একতলা আরও কয়েকটি ভবন।
প্রায় ১৭০টি স্তম্ভের উপর বসানো পুরো কমপ্লেক্সটিতে মোট ৪৫টি দরজা ও প্রায় ১৩০টি জানলা রয়েছে। মূল ভবনের ছাদের উপর রয়েছে একটি সিংহমূর্তি। বাড়িটির বিভিন্ন দেয়াল ও স্তম্ভে ফুল, লতা ও হরেক রকমের নকশা অঙ্কিত রয়েছে।