বিস্মৃতির অতলে তলিয়ে যাওয়া বাংলাদেশের হিন্দু মন্দির -৪র্থ পর্ব

Blog ইতিহাস ধর্ম বাংলাদেশ

আঁচলাই শিব মন্দির, শিবগঞ্জ, বগুড়া

মন্দিরটি প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সঠিক কোনও ইতিহাস জানা যায় না। সম্রাট শেরশাহের শাসনামলে বা তার আগে শাসকরা আঁচলাই এলাকায় শিব মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।

বিলুপ্ত প্রায় মন্দিরের দেওয়ালে পোড়ামাটির টেরাকোটার বিভিন্ন কারুকাজ রয়েছে।

শ্যামসিদ্ধির মঠ, মুন্সীগঞ্জ

শ্যামসিদ্ধির মঠ বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর উপজেলার শ্যামসিদ্ধি গ্রামে অবস্থিত একটি মঠ। আনুমানিক ২৪৭ বছরের পুরনো এই মঠটি ভারত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ মঠ এবং সর্বোচ্চ স্মৃতিস্তম্ভ বলে বিবেচিত। অষ্টভুজ আকৃতির শ্যামসিদ্ধির মঠটির উচ্চতা ২৪১ ফুট।

বিক্রমপুরের ধর্নাঢ্য ব্যক্তি সম্ভুনাথ মজুমদার এই মঠটি নির্মাণ করেন। কথিত আছে সম্ভুনাথ স্বপ্নে তার পিতার চিতার উপরে মঠ নির্মাণের নির্দেশ পেলে তিনি এই মঠটি নির্মাণ করেন।

শ্যামসিদ্ধির মঠের এখন কেবল ধ্বংসাবশেষই অবশিষ্ট রয়েছে। মঠের গায়ের মূল্যবান পাথর এবং পিতলের কলসির এখন আর অস্তিত্ব নেই। এর মূল কাঠামো নকশা করা দরজা জানালা অনেক আগেই চুরি হয়ে গিয়েছে। মঠের ভিতরে ৩ ফুট উচ্চতার কষ্টি পাথরের একটি শিবলিঙ্গ স্থাপিত ছিল, যা ১৯৯৫ সালে চুরি হয়ে যায়।

চাচঁড়া শিব মন্দির, যশোর

চাঁচড়া শিব মন্দির বাংলাদেশের যশোর জেলার চাঁচড়ায় অবস্থিত। মন্দিরটি ১৬৯৬ খ্রিস্টাব্দে মনোহর রায় নির্মাণ করেন।

মন্দিরটি ‘আট-চালা’ ধরনের মন্দির। শিব মন্দিরটির সামনের দিকের তিনটি খিলান যুক্ত প্রবেশদ্বার আছে এবং পুরো মন্দিরের সন্মুখভাগ পোড়ামাটির ফলকে চমৎকার ভাবে অলংকৃত।

তবে যে টেরাকোটার ব্যবহারের কারণে মন্দিরটির বাইরের দিকের নান্দনিকতাটুকু পূর্ণতা পেয়েছে, সেগুলো বেশ নতুন। বছর বারো আগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের মাধ্যমে লাগানো। অরিজিনাল কাজগুলো ধ্বংস বা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

যশোরেশ্বরী কালী মন্দির, ঈশ্বরীপুর, যশোর

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের যশোরেশ্বরী কালী মন্দির বাংলাদেশের একটি বিখ্যাত মন্দির। এই শক্তিপীঠটি সাতক্ষীরার ঈশ্বরীপুর গ্রামে অবস্থিত। যশোরেশ্বরী নামের অর্থ “যশোরের দেবী”। যশোরেশ্বরী কালী মন্দির সনাতন ধর্মালম্বীদের কাছে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। সনাতন ধর্মের ৫১ পীঠের একটি যশোরেশ্বরী মন্দির। যশোরে সতীর পাণিপদ্ম বা করকমল পড়েছে। দেবীর নাম যশোরেশ্বরী, ভৈরব হলেন চণ্ড।

ধারনা করা হয় যে, মন্দিরটি আনারি নামের এক ব্রাহ্মণ কর্তৃক নির্মিত হয়। পরবর্তীকালে লক্ষ্মণ সেন ও প্রতাপাদিত্য কর্তৃক তাদের রাজত্বকালে এটির সংস্কার করা হয়েছিল। কথায় আছে যে মহারাজা প্রতাপাদিত্যের সেনাপতি এখানকার জঙ্গল থেকে একটি আলৌকিক আলোর রেখা বের হয়ে মানুষের হাতুর তালুর আকারের একটি পাথরখণ্ডের উপর পড়তে দেখেন। পরবর্তীতে প্রতাপাদিত্য কালীর পূজা করতে আরম্ভ করেন এবং এই কালী মন্দিরটি নির্মাণ করেন।

মূল মন্দির সংলগ্ন স্থানে একটি নাটমন্দির নির্মাণ করা হয়েছিল। ১৯৭১ সালের পর এটি ভেঙে পড়ে। সেই সুদৃশ্য, লম্বা-চওড়া বিরাট নাটমন্দিরের আজ কিছুমাত্র অবশিষ্ট নেই। এখন শুধুমাত্র স্তম্ভগুলি দেখা যায়। দু-একটা স্তম্ভ কয়েকশো বছরের নীরব সাক্ষী হয়ে ইটের পাঁজর বের করে দাঁড়িয়ে আছে কোনওরকমে। একদা মন্দিরের চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর ছিল। মূল মন্দিরটি বাদে আর সবকিছুই আজ কালের গর্ভে বিলীন।

প্রতাপাদিত্যের কালী মন্দির, সুন্দরবন

সুন্দরবনের শিবসা নদী সংলগ্ন দূর্গম স্থানে মহারাজা প্রতাপাদিত্য গড়ে তোলেন “শিবসা দূর্গ”। শেখের টেকের গহীন বনের মাঝে এখনো দূর্গের ধ্বংসাবশেষ, প্রাচীর ও প্রতাপাদিত্যের কালী মন্দির দেখা যায়। ধারনা করা হয় এই মন্দিরটি ৩৫০ বছরের প্রাচীন।

এত গহীন জঙ্গলে মন্দিরটি এখনও টিকে আছে তবে মন্দিরের মধ্যে কোন মূর্তী নেই, অনেক আগেই চুরি হয়ে গিয়েছে।

রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির, সিলেট

সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চন্দ্রগ্রামে অবস্থিত অনন্য প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি নির্মিত হয় প্রায় ছয়শত বছর পূর্বে। জৈন্তা রাজ্যের সেনাপতি থাকাকালীন সময়ে বিজয় মানিক সেনাপতি এ মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছিল এটি।

জরাজীর্ণ ও ভগ্নপ্রায় ঐতিহাসিক রাজ-রাজেশ্বরী মন্দিরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নানা পুরাকীর্তির নিদর্শন। বর্তমানে গাছপালা আর লতাগুল্মে ছেয়ে গিয়েছে পুরো দ্বিতল ভবনটি। সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বিলীন হবার পথে ৬০০ বছরের পুরোনো “রাজ-রাজেশ্বরী মন্দির”। অযত্ন-অবহেলায় মন্দিরের ভবন ও দেয়ালে গাছপালা জন্মানোর পাশাপাশি ফাটলের সৃষ্টি হয়েছে।

ডিমলা কালী মন্দির, রংপুর

ডিমলা কালী মন্দির বাংলাদেশের রংপুর শহরে অবস্থিত। এটি একটি অষ্টকৌণিক হিন্দু মন্দির। ডিমলার রাজা জানকীবল্লভ সেনের সেবামূলক কাজের স্মৃতিস্বরূপ ১৯০৮ সালে মন্দিরটির নির্মাণ শুরু হয়। প্রায় আট বছর পর ১৯১৬ সালে মন্দিরটির নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়।

দ্বিতল বিশিষ্ট মন্দিরটির নিচ তলায় শীর্ষদেশে রয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, বিষ্ণু, শিব প্রভৃতি দেব-দেবীর মূর্তি। শীর্ষে পিতলের কলস ও ত্রিশুল স্থাপন মূলত শিব মন্দিরের চিহ্ন হলেও স্থানীয়ভাবে এটি কালী মন্দির হিসাবে বিবেচিত। অষ্টকৌণিক টাওয়ার সদৃশ্য কালী মন্দিরটির খিলানে রয়েছ ব্রাক্ষী, মহেশ্বরী, চামুন্ডা, নরসিংহ, নারায়নী, বারাহী, কৌমারী, ও অপরাজিতা রুপে নির্মিত বিভিন্ন দেবীমূতি।

মন্দিরটিতে নিত্য পূজা অর্চনা ও সন্ধ্যা আরতির পাশাপাশি বাংলা বর্ষবরণ উৎসব, শারদীয় দূর্গোৎসব, অমাবস্যা, জন্মাষ্টমী, কোজাগরী লক্ষী পূর্ণিমা, দোলযাত্রা, শিবরাত্রি, রাম জন্মজয়ন্তি সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজিত হয়।

দোচালা কৃষ্ণমন্দির, সিরাজগঞ্জ

হাটিকুমরুল নবরত্ন মন্দিরের পাশে অবস্থিত দোচালা কৃষ্ণমন্দির।

শ্রীশ্রী সতী মন্দির, ভবানীপুর, বোগরা, বাংলাদেশ।

কলসকাঠি শিবমন্দির, বরিশাল, বাংলাদেশ।

মত্তের মঠ, তেওতা, মানিকগঞ্জ

মানিকগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই মঠ। বৈচিত্র্যময় নির্মাণশৈলী আর কারুকার্য খচিত নকশার কারণে এ মঠের সুনাম রয়েছে দেশেজুড়ে। এ মঠের তিনশ গজের ভেতরেই অবস্থিত প্রখ্যাত নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. অমর্ত্য সেনের বাড়ি।

জনশ্রুতি রয়েছে, এ গ্রামে বসবাস করা হেমসেন নামের এক অত্যাচারী জমিদার দুইশ বছর আগে এ মঠটি নির্মাণ করেন। তার শাসনামলে কেউ জুতা পায়ে দিয়ে, ছাতা মাথায় দিয়ে চলাচল করতে পারতেন না। এছাড়া, এ মঠের সামনে দিয়ে কেউ সাইকেল নিয়ে যাতায়াত করতে পারতেন না। তবে তিনি ছিলেন পিতৃভক্ত। বাবার মৃত্যূর পর শেষকৃত্যের ওই স্থানে স্মৃতি ধরে রাখতে এ মঠটি নির্মাণ করেন।

নিটল দিঘীর পাড়ে এ মঠ নির্মাণ করা হয়। মঠ নির্মাণ করতে ইরাক থেকে কারিগর আনা হয়। মঠটির উচ্চতা ও কারুকার্যময় সৌন্দর্যের জন্য তৎকালীন সময়ে অবিভক্ত পূর্ব বাংলার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে বেশ কদর ছিল। ১৩২৬ সালে আশ্বিন মাসের ঝড়ে মঠের ২০ ফুট অংশ ভেঙে নিটল দিঘীতে পড়ে যায়। তারপর মঠের মাথায় বসানো ৫টি সোনার কলস আর পাওয়া যায়নি।

পুঠিয়া শিবমন্দির, পুঠিয়া, রাজশাহী, বাংলাদেশ।

একাদশ শিব মন্দির, অভয়নগর, যশোর, বাংলাদেশ।

হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির ঠাকুরদালান, নড়াইল

হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর নড়াইল জেলার নড়াইল সদর উপজেলার হাটবাড়িয়া এলাকায় চিত্রা নদীর তীরে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।

আনুমানিক ১৯০০ শতকের প্রথমদিকে জমিদার জয় নারায়ণ রায়ের হাত ধরে এই জমিদার বাড়ির গোড়াপত্তন হয়। জয় নারায়ণ রায় নড়াইল জমিদার বংশের বংশধর ছিলেন। নড়াইল জমিদার বংশের গোড়াপত্তনকারী জমিদার কালী শঙ্কর রায়ের দুই পুত্রকে দুইভাগে জমিদারী ভাগ করে দেন। বড় ছেলে রাম নারায়ণ রায়কে নড়াইল জমিদার বাড়ি এবং ছোট ছেলে জয় নারায়ণ রায়কে হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ি দেন। হাটবাড়িয়া জমিদার বংশের শেষ জমিদার ছিলেন জমিদার জিতেন্দ্রনাথ রায়। অনেকের কাছে এই জমিদার বাড়ি তার নামেই বেশ পরিচিত। ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার আগেই এই জমিদার বংশধররা ভারতে পাড়ি জমান।

হাটবাড়িয়া জমিদার বাড়ির সকল স্থাপনা এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে জমিদারদের তৈরি করা একটি মন্দির ও সাঁন বাঁধানো পুকুর ঘাট রয়েছে। 

ভোলাহাট শিবমন্দির, নবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ।

কাশীপুর মঠ, কুমিল্লা, বাংলাদেশ।

পরিত্যক্ত মন্দির, দিনাজপুর, বাংলাদেশ।

রায়গ্রাম শিব মন্দির, নড়াইল, বাংলাদেশ।

পরিত্যক্ত মন্দির, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, বাংলাদেশ।

লক্ষণ সাহা জমিদারবাড়ির পূজা মণ্ডপ, নরসিংদী, বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *