
৩০০ বছরের প্রাচীন মন্দিরের ভগ্নস্তূপ, কুড়িগ্রাম, বাংলাদেশ।

জোড়া শিব মন্দির, ঢাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত।

প্রমথ চৌধুরীর পৈত্রিক ভিটার মন্দির, চাটমোহর
তিন দশকের বেশি সময় ধরে বেদখল হয়ে আছে বাংলা সাহিত্যের চলিত গদ্য রীতির পুরোধা প্রমথ চৌধুরীর পাবনার পৈর্তৃক ভিটে। এরই মধ্যে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে মার্বেল পাথর খচিত দৃষ্টিনন্দন জমিদার বাড়ি।
প্রমথ চৌধুরীর বাবা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট দুর্গা দাশ চৌধুরী ছিলেন পাবনার হরিপুরের বরেন্দ্র এলাকার জমিদার পরিবারের সন্তান। আর পাবনা শহর-সহ চাটমোহরে ছড়ানো ছিল পরিবারটির বিপুল বিষয়সম্পত্তি। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে হারাতে বসেছে এই জমিদার পরিবারটির শেষ স্মৃতি চিহ্নও।
দেশ বিভাগের এক বছর আগে মারা যান প্রমথ চৌধুরী। পরে স্বজনেরা ভারতে চলে যাওয়ায় পৈত্রিক তিনটি ভিটে বাড়িকে ঘোষণা করা হয় অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে। আর এই আইনে প্রমথ চৌধুরীদের বিশাল পুকুর, জমি, বসতবাড়ি, মন্দিরের প্রায় পুরোটাই এখন বেদখল। বর্তমানে তেরোটি পরিবার কাচাপাকা ঘর তুলে বাস করছে এখানে।

পরিত্যক্ত শিব মন্দির, অভয়নগর, যশোর, বাংলাদেশ।

অভয়নগর শিব মন্দির, যশোর, বাংলাদেশ।

রুদ্রকর মঠ, শরিয়তপুর, বাংলাদেশ।
রুদ্রকর মঠ, শরীয়তপুর
রুদ্রকর মঠ হল বাংলাদেশের শরীয়তপুর জেলায় অবস্থিত একমাত্র মঠ। প্রায় দেড়শত বছরের পুরাতন প্রাচীন এই মঠ শরীয়তপুর জেলার শরীয়তপুর সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নে অবস্থিত। যা রুদ্রকর জমিদার বাড়ির জমিদাররা তৈরি করেছিলেন।
প্রায় দেড়শত বছর আগে রুদ্রকর জমিদার বাড়ির জমিদার গুরুচরণ চক্রবর্তী এই মঠটি তৈরি করেন। আনুমানিক ১৩০৫ – ১৩১৫ বঙ্গাব্দেরর মধ্যে মঠটি তৈরি করা হয়। কথিত আছে মা রাসমনি দেবীর সমাধীকে অমর করে রাখার জন্য নাকি এই মঠটি তৈরি করা হয়েছিল।
মঠটিতে নিচের অংশে বড় একটি মন্দির ও মন্দিরটির মূল উপাসনালয় কক্ষের সঙ্গে থাকা বারান্দার চার কোণায় চারটি ছোট মন্দির (মঠ)। পরিচর্যা না থাকাতে মঠটি এখন প্রায় জীর্ণশীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এখনো প্রতিবছর এখানে সাড়ম্বরে পূজা ও কীর্তনের অনুষ্ঠান হয়ে থাকে।

মুকুন্দিয়া জমিদার বাড়ির মন্দির, রাজবাড়ী
মুকুন্দিয়া জমিদার বাড়ি বাংলাদেশ এর রাজবাড়ী জেলার মুকুন্দিয়া গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।
এ গ্রামের প্রভাবশালী জমিদার দ্বারকানাথ সাহা চৌধুরী এই জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি রাজা সূর্যকুমারের সমসাময়িক। রাজা সূর্যকুমার ও জমিদার দ্বারকানাথ সাহার প্রজা হিতৈষী ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অনেক স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে। তাঁদের আনুকূল্যে রাজবাড়ি পাবলিক লাইব্রেরি সমৃদ্ধ হয়। পল্লী চিকিৎসা ও শিক্ষা বিস্তারে দ্বারকানাথ সাহা এলাকায় স্মরণীয়।
দ্বারকানাথ সাহার মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র সরজেন্দ্রনাথ সাহা পিতার স্মৃতি রক্ষার্থে নির্মাণ করেন সুদৃশ্য মঠ। পাশেই দ্বারকানাথ সাহার স্ত্রী মঠটি বিদ্যামান রয়েছে। মঠটি জেলার পত্নতত্ত্বের নিদর্শন বহন করছে।

দেবী যশোরেশ্বরীর প্রাচীন মন্দির, ঈশ্বরীপুর, যশোর, বাংলাদেশ।

শিব মন্দির, বাগেরহাট, বাংলাদেশ।

সরকার মঠ বা হেলানো মঠ, মাহিলারা, বরিশাল
সরকার মঠ (মাহিলারা মঠ নামেও পরিচিত) বরিশাল বিভাগের গৌরনদী উপজেলাধীন মাহিলারা গ্রামে অবস্থিত।
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে মঠটি নবাব অলীবর্দি খানের (১৭৪০-১৭৫৬) শাসনামলে বানানো হয়েছিল। সরকার রূপ রাম দাশ গুপ্ত নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এই মঠটি নির্মাণ করেছিলেন বলে জানা যায়। এটি মাহিলারা মঠ নামেও অনেকের কাছে পরিচিত। এই মঠটির সাথে ইটালির লিসা টাওয়ারের মিল রয়েছে বলে অনেকে অভিমত করেন।
প্রথমে এটি জঙ্গল আবৃত ছিল।পরবর্তীতে শ্রী হরলাল গোস্বামী এই স্থানের মাহাত্ম্য বুঝতে পারেন। তিনি ছিলেন নিগমান্দ সরস্বতীর শিষ্য। তিনি এখানে প্রথম সাধনা শুরু করেন। লোক মুখে শোনা যায়, এ স্থানের মাহাত্ম্য হল: এখানে মঠ প্রতিষ্ঠার মার সমাধি স্থল। প্রতিষ্ঠাতা এই মঠ স্থাপন করে দম্ভের সহিত বলে, “মা, তোমার সব ঋণ শোধ করে দিলাম”। বলার সাথে সাথে মঠ বেকে যায়। এতে সকলে ভয় পায়।। কিন্তু শ্রী শ্রী হরলাল গোস্বামী এর মূল ব্যাখা দেন। তার মতে, “মা এর ঋণ শোধ সম্ভব না। তাই, ভগবান তাকে এভাবে বুঝিয়েছেন”।
বর্তমানে এটি বাংলাদেশের মধ্যে সুন্দর মন্দির গুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে এর গুরুত্ব কমছে।

শ্রীশ্রী কালীবাড়ি, মুন্সিগঞ্জ, বাংলাদেশ।

চাকলানবীশ পরিবারের দোলমন্দির, নড়াইল, বাংলাদেশ।

রাওড়া মঠ, কুমিল্লা, বাংলাদেশ।

শ্যামসুন্দর মন্দির, কলারোয়া, সাতক্ষীরা
শ্যাম সুন্দর মন্দির সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার সোনাবাড়িয়া নামক স্থানে অবস্থিত বাংলাদেশের একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা ও দর্শনীয় স্থান। স্থনীয়ভাবে একে সোনাবাড়ীয়া মঠ বা মঠবাড়ি নামেও ডাকা হয়। মন্দিরটির দেয়ালে খোদাই করে লেখা রয়েছে শ্যাম সুন্দর নবরত্ন মন্দির। এই মন্দিরটি ছাড়াও এ অঞ্চলে আরও বেশকিছু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায়।
শ্যামসুন্দর মন্দির নির্মাণ প্রসঙ্গে দুরকম মত পাওয়া যায়। কেউ কেউ মনে করেন, ৪০০ বছর পূর্বে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে বুদ্ধদেবের শিষ্যরা এই মন্দিরটি তৈরি করেন। এরপর ধর্ম প্রচারে ব্যর্থ হয়ে প্রচারকগণ যখন চলে যান তখন মন্দিরটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ১৭৬৭ সাল থেকে তৎকালীন জমিদার দুর্গাপ্রিয় চৌধুরীর পূর্বপুরুষ সেটিকে ব্যবহার শুরু করেন।
আবার কেউ কেউ মনে করেন, মন্দিরটি ১৭৬৭ সালে জমিদার হরিরাম দাশ বা দুর্গাপ্রিয় চৌধুরীই নির্মাণ করেছিলেন। শ্যামসুন্দর মন্দিরের আশেপাশে আরও প্রায় ৯টি মন্দির ছিল বলে ধারণা করা হয়ে থাকে ও জনশ্রুতি অনুসারে, শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব-ও এ মন্দিরগুলো পরিদর্শন করেছিলেন।
তিনতলা বিশিষ্ঠ পিরামিড অবয়বের এই মন্দিরটির উচ্চতা ৬০ ফুট। পূর্বে এই মন্দিরের পূর্ব দিকে স্থাপন করা ছিল কষ্টি পাথরের তৈরি ১২টি শিবলিঙ্গ। এছাড়াও দোতালায় ছিল স্বর্ণের তৈরি রাধা-কৃষ্ণ মূর্তি। মন্দিরটি নির্মাণ করা হয়েছে ইট ও সুড়কি ব্যবহারের মাধ্যমে। শ্যামসুন্দর মন্দিরের পাশে আরও দুটি মন্দির রয়েছে যেগুলো দুর্গা ও শিবের পূজা করার জন্য ব্যবহার করা হত। এই তিনটি মন্দিরের সামনেই রয়েছে একটি ছোট দীঘি।

বসু রায় চৌধুরী পারিবারিক মন্দির, উলপুর, গোপালগঞ্জ, বাংলাদেশ
উলপুর বাংলাদেশের গোপালগঞ্জের উত্তরে অবস্থিত একটি গ্রাম। গ্রামটিকে উলপুর বসু রায়চৌধুরী পরিবার তাদের জমিদারী ও জগিরের হিসাবে শাহপুর নামে নামকরণ করেছিলেন।দশরথ বসু বাংলায় একাদশ শতাব্দীতে এসেছিলেন। তাঁর এক বংশধর, রঘুনন্দন বসু ষোড়শ শতাব্দীতে মোগল সম্রাটের ( জাহাঙ্গীর ) নির্দেশে উলপুর / শাহপুরের জমিদারী পুনর্নির্মাণ করেছিলেন, যেখানে তাঁর বংশধররা পরবর্তীতে বসতি স্থাপন করেছিলেন। বসু রায়ের অনেক লোকজন ১৯৪৭ এর ভারত বিভক্তির পর পূর্ব বাংলায় (বর্তমান বাংলাদেশ) উলপুুরে তাদের পৈতৃক ভিটা ছেড়ে ভারতে চলে যায়।
পরিবারের বিভিন্ন সদস্যের সম্পদগুলি এখনও উলপুরে পাওয়া যায় এবং এখন গ্রামবাসীরা তাদের বাড়ি হিসাবে ব্যবহার করে। ছোট মন্দির এবং পুকুরগুলি ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় রয়েছে, তবে প্রধান কালী মন্দিরটি এখনও ব্যবহারের মধ্যে রয়েছে এবং সম্প্রতি এটি সংস্কার করা হয়েছে।

বড় আহ্নিক মন্দির, পুঠিয়া, রাজশাহী
বড় আহ্নিক মন্দির পুঠিয়া মন্দির চত্বরের সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত মন্দির। এটি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় অবস্থিত। পুঠিয়ার রাজারা এটি নির্মাণ করেন।
পুর্বমুখী এই মন্দিরে পাশাপাশি তিনটি কক্ষ আছে। মাঝের কক্ষটি তুলনামুলকভাবে বড় এবং পাশের কক্ষ দুইটি বর্গাকৃতির ও সম আয়তনের। এই কক্ষ দুইটিতে একটি করে সরু প্রবেশ পথ আছে। মন্দিরের পুর্ব দিকে তিনটি খিলান দরজা এবং উপরে দৌচালা আকৃতির ছাদ আছে। আয়তাকার এ মন্দিরের উত্তর, দক্ষিণ ও পশ্চিম পাশের দেয়াল সমতল এবং সেখানে কোন অলংকরণ নেই। তবে সামনের দিকের দেয়াল পোড়ামাটির চিত্রফলক দ্বারা সজ্জিত।

আমিনপুর মঠ, সোনারগাঁও, নারায়ণগঞ্জ।
সোনারগাঁয়ের পানাম শহর পরিদর্শনে আসা পর্যটকদের কাছে আমিনপুর মঠ তেমন পরিচিত নয়। এটি পানাম খালের ঠিক পিছনে। পানাম শহরের পিছনে আপনি একটি মাঠ পাবেন, মাঠের কোণে দুটি মঠের মধ্যে একটির ধ্বংসাবশেষ খুঁজে পাবেন।
মাঠের উত্তর দিকে সবুজ গাছের মধ্য দিয়ে সেই মঠের চূড়া দূর থেকে সহজেই দেখা যায়।

রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ির মন্দির, পিরোজপুর
রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি বাংলাদেশের পিরোজপুর জেলার পিরোজপুর সদর উপজেলার রায়েরকাঠি গ্রামে অবস্থিত এক ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি।
ভারতবর্ষে মোগল সম্রাট শাহজাহান শাসনামলে পিরোজপুরের রায়েরকাঠি নামক জায়গা এই জমিদার বাড়িটির গোড়াপত্তন হয়। মূলত এখানে বন-জঙ্গল ছিল। রাজা শ্রীনাথের ছেলে রুদ্র নারায়ণ রায় চৌধুরী বর্তমান পিরোজপুরের রায়েরকাঠি এলাকায় বিশাল বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠা করেন, যার ফলে এখানের নামকরণ করা হয় রায়েরকাঠি।
এখানে তৈরি করা হয়েছিল রাজভবন, নহবৎখানা এবং অসংখ্য মন্দির। ছোট বড় প্রায় দু’শ অট্টালিকা ছিলো। এছাড়াও রয়েছে মন্দিরের নকশায় নির্মিত কয়েকটি মঠ।

ভোলাহাট শিব মন্দির, নবাবগঞ্জ, বাংলাদেশ।

কান্তজিউ মন্দির, কান্তনগর, দিনাজপুর
কান্তজিউ মন্দির বাংলাদেশের দিনাজপুরে অবস্থিত একটি প্রাচীন মন্দির। মন্দিরটি হিন্দু ধর্মের কান্ত বা কৃষ্ণের মন্দির হিসেবে পরিচিত যা লৌকিক রাধা-কৃষ্ণের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে বাংলায় প্রচলিত। ১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দের ভূমিকম্পে এই মন্দির ধ্বংস হওয়ার আগে জন হেনরি এর ১৮৭১ খ্রিস্টাব্দে তোলা ছবিতে মন্দিরের নয়টি রত্ন দৃশ্যমান।
মন্দিরের উত্তর দিকের ভিত্তিবেদীর শিলালিপি থেকে জানা যায়, দিনাজপুরের মহারাজা জমিদার প্রাণনাথ রায় তার শেষ বয়সে মন্দিরের নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৭২২ খ্রিষ্টাব্দে তার মৃত্যুর পরে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী তার পোষ্যপুত্র মহারাজা রামনাথ রায় ১৭৫২ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটির নির্মাণ কাজ শেষ করেন। শুরুতে মন্দিরের চূড়ার উচ্চতা ছিলো ৭০ ফুট। ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দে মন্দিরটি ভূমিকম্পের কবলে পড়লে এর চূড়াগুলো ভেঙে যায়।
মন্দিরের বাইরের দেয়াল জুড়ে পোড়ামাটির ফলকে লেখা রয়েছে রামায়ণ, মহাভারত এবং বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী। পুরো মন্দিরে প্রায় ১৫,০০০-এর মতো টেরাকোটা টালি রয়েছে। মন্দিরের চারদিকের সবগুলো খিলান দিয়েই ভেতরের দেবমূর্তি দেখা যায়। মন্দির প্রাঙ্গণ আয়তাকার হলেও, পাথরের ভিত্তির উপরে দাঁড়ানো ৫০ ফুট উচ্চতার মন্দিরটি বর্গাকার। নিচতলার সব প্রবেশপথে বহু খাঁজযুক্ত খিলান রয়েছে। দুটো ইটের স্তম্ভ দিয়ে খিলানগুলো আলাদা করা হয়েছে, স্তম্ভ দুটো খুবই সুন্দর এবং সমৃদ্ধ অলংকরণযুক্ত।