এখন তথ্য প্রযুক্তির যুগ। যে কোনও তথ্যই দু’সেকেণ্ডে হাতে চলে আসে। আজ থেকে বিয়াল্লিশ/তেতাল্লিশ বছর আগে যখন কোরান হাদিসে দাসপ্রথার কথা কী লেখা, নারীর সম্পর্কে কী লেখা, এসব জানতে চাইতাম, আমাকে সম্পূর্ণ কোরান পড়তে হতো। আরবি পড়তে জানলেও আরবির অর্থ জানিনা বলে বাংলায় পড়তাম কোরান, একজনের নয়, ভালো ভালো কয়েকজনের অনুবাদ। কতবার যে পড়েছি কোরান। বিশ্বাসের জন্য নয়, অনুসন্ধানের জন্য। কোনও ধর্মে বিশ্বাস আমার কোনওদিনই ছিল না। ধর্মের গল্পগুলো আমার কাছে ভুতের গল্পের মতো ছিল। ভুতের গল্প শুনলে আমার ভুত দেখতে ইচ্ছে হতো, ভুত না দেখলে ভুতে বিশ্বাস আসতো না। জিন পরীর কথা যারা শোনাতো, তাদের বলতাম, জিন পরী আছে তার কিছু প্রমাণ দেখাও, তা না হলে বিশ্বাস করছি না। কেউ কোনওদিন আল্লাহ, ভুত, জিন কিছুর অস্তিত্বেরই প্রমাণ দেখাতে পারেনি। কিছু গবেট বলে কোরানই তো প্রমাণ আল্লাহ জিন ইত্যাদি অলৈকিক জিনিসপত্র আছে। কোরান পড়ার পর কিন্তু আমার সন্দেহ হয়েছে এ কার লেখা।
৯১/৯২ সালে আমি প্রচুর খেটে খুটে বইয়ের জন্য একটি পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছিলাম। নাম ছিল ”বেদ বাইবেল এবং কোরানের নারী”। দিন রাত বেদ বাইবেল এবং কোরান পড়তে পড়তে প্রায় মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। বেদের তো আবার অনেকগুলো খণ্ড। এই গ্রন্থগুলোর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নারী সম্পর্কে কী লেখা আছে, সব উল্লেখ করে আমি সেসব সম্পর্কে আমার মন্তব্য তুলে ধরেছিলাম। বাংলাদেশের ভোরের কাগজ পত্রিকায় কিছু অংশ বেরিয়েছিল তখন। বই হয়ে বেরোবার আগেই আমাকে নির্বাসনে পাঠিয়ে দিয়েছিল দেশের সরকার। ওদিকে দেশে আমার ডেস্কটপ কম্পিউটারের হার্ড ডিস্ক নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পাণ্ডুলিপিটিও উবে গেছে। যা বলতে চাইছি, তা হলো, কী না খাটতে হয়েছিল আমাকে বইটি লেখার জন্য। আজকাল তো গুগলে সার্চ করলেই হুড়মুড় করে সব বেরিয়ে আসে।
পরে আর নতুন করে পাণ্ডুলিপি তৈরি করতে ইচ্ছে হয়নি আমার। নারীর সম্পর্কে কোন ধর্ম গ্রন্থ কী লিখেছে তা জেনে গিয়েছি। তাছাড়া লেখার তো কত কিছুই আছে। আমি সেই কত কিছুতে আজ বহু বছর।