ভগবান শ্রীরাম চন্দ্রকে ২৫ বছর বয়সে বনবাসে যেতে হয়েছিল। ভগবান শ্রীরাম চন্দ্র এই ১৪টি স্থানে ১৪ বছর বনবাস কাটিয়েছিলেন__
(১) তমসা নদীর তীর।
মাতা সীতা এবং লক্ষ্মণের সাথে সুমন্ত্রের রথে চড়ে ভগবান শ্রীরাম চন্দ্র বনবাসের সময় প্রথম তমসা নদীর তীরে পৌঁছেছিলেন। এটি অযোধ্যা থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ভগবান শ্রীরামচন্দ্র এখানে একরাত্রি শয়ন করেছিলেন।
(২) শৃঙ্গবেরপুর।
এরপর ভগবান শ্রীরামচন্দ্র তিনটি নদী পার হয়ে অয্যোধ্যার সীমান্ত পার হন। গঙ্গার শাখানদী গোমতী, বেদশ্রুতি ও সান্দিক্য নদী পার হয়ে প্রয়াগরাজ থেকে ২০ থেকে ২২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত শৃঙ্গবেরপুরে পৌঁছান। শৃঙ্গবেরপুর ছিল নিষাদরাজ বন্ধু গুহকের রাজ্য। গুহক অনুরোধ করেছিলেন এই নিষাদ রাজ্যেই চৌদ্দ বছর অবস্থান করতে। কারণ নিষাদেরা বনে জঙ্গলে থাকতো। সেখানে অবস্থান করলেও চৌদ্দ বছরের বনবাসের শর্ত পালন করা যেতো। কিন্তু নিষাদ রাজ্য অয্যোধ্যার কাছাকাছি হওয়ায় ভগবান শ্রীরাম এখানে একদিনই অবস্থান করেছিলেন। সারথি সুমন্ত্র নিষাদ রাজ্য থেকে বিদায় নিলে নিষাদরাজ গুহক নিজে নৌকার মাঝি হয়ে শ্রীরাম, মা সীতা ও লক্ষ্মণকে গঙ্গা পার করিয়ে দিয়েছিলেন। গঙ্গা পার হয়ে শ্রী রাম, লক্ষ্মণ এবং মা সীতা প্রয়াগে ঋষি ভরদ্বাজের আশ্রমে উপস্থিত হন। ঋষি ভরদ্বাজ তাঁদের চিত্রকূটে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
(৩) চিত্রকূট।
সঙ্গম পেরিয়ে শ্রীরামচন্দ্র যমুনা নদী পার হয়ে চিত্রকূটে পৌঁছান। এই সেই জায়গা যেখানে ভরত তার গুরু এবং সেনাবাহিনী সহ বড় ভাই রামচন্দ্রকে অযোধ্যায় ফিরিয়ে নিতে এসেছিলেন। এখানেই শ্রীরামচন্দ্র তাঁর পাদুকা ভরতকে দিয়েছিলেন এবং তিনি তা রেখেই রাজ্যের ভার গ্রহণ করেছিলেন।
(৪) ঋষি অত্রির আশ্রম।
চিত্রকূটের কাছে সাতনায় ঋষি অত্রির একটি আশ্রম ছিল। এখানেও শ্রীরামচন্দ্র কিছু সময় কাটিয়েছিলেন। এখানেই ঋষি অত্রির স্ত্রী অনুসূয়ার আশীর্বাদ থেকে ভাগীরথী গঙ্গার একটি পবিত্র স্রোত বের হয়েছিল। এই স্রোত মন্দাকিনী নামে বিখ্যাত। তাঁরা তাঁদের দণ্ডকারণ্যে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
(৫) দণ্ডকারণ্য।
শ্রীরাম দণ্ডকারণ্যে দশ বছরের বনবাস কাটিয়েছিলেন। এটি ছিল সেই বনাঞ্চল যেটিকে শ্রীরাম তাঁর আশ্রয়স্থল বানিয়েছিলেন।
(৬) শাহদোল।
এরপর তিনি শাহদোল অর্থাৎ অমরকণ্টকে যান। এই স্থানে একটি জলপ্রপাত আছে। যে জলাশয়ে জলপ্রপাত পড়ে তার নাম সীতাকুন্ড। বশিষ্ঠ গুহাও এখানে অবস্থিত।
(৭) অগস্ত্য মুনির আশ্রম।
শ্রীরাম দণ্ডকারণ্য পঞ্চবটী অর্থাৎ নাসিকে পৌঁছানোর পর। সেখানে তিনি ঋষি অগস্ত্যের আশ্রমে কিছু সময় অতিবাহিত করেন। এই সময় ঋষি তাকে অগ্নিকুণ্ডে তৈরি অস্ত্র উপহার দেন। এই জায়গার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক গল্প। এটা বিশ্বাস করা হয় যে পঞ্চবটী অর্থাৎ পাঁচটি গাছ (অশ্বত্থ, বট, আমলকী, বেল এবং অশোক) জানকী, রাম এবং লক্ষ্মণ নিজ হাতে রোপণ করেছিলেন। এই স্থানেই লক্ষ্মণ শূর্পণখার নাক কেটে দেন এবং রাম-লক্ষ্মণের সঙ্গে খর-দুষণের যুদ্ধ হয়।
(৮) সর্বতীর্থ।
নাসিক থেকে ৫৬ কিলোমিটার দূরে সর্বতীর্থ অবস্থিত। এই স্থানে রাবণ-জটায়ুর যুদ্ধ হয় এবং জটায়ুর মৃত্যু হয়। বনবাসের ১৩ তম বছরে এই স্থানে সীতাকে অপহরণ করা হয়েছিল।
(৯) মাতা শবরীর আশ্রম।
সর্বতীর্থের পর সীতার সন্ধানে শ্রীরাম অনুজ লক্ষ্মণ সহ ঋষ্যমূক পর্বতে পৌঁছেন। এরপর তিনি মাতা শবরীর আশ্রমে যান যা বর্তমানে কেরালায় রয়েছে। এই আশ্রমটি পম্পা নদীর কাছে অবস্থিত।
(১০) ঋষ্যমুক পর্বত।
ঋষ্যমূক পর্বত ছিল বানরদের রাজধানী কিষ্কিন্ধার কাছে। এখানেই শ্রীরাম ও লক্ষ্মণ হনুমান ও সুগ্রীবের দেখা পেয়েছিলেন, যারা সীতার সন্ধানে গিয়েছিলেন।
(১১) রামেশ্বরম্।
সীতার সন্ধানে, মর্যাদা পুরুষোত্তম লঙ্কায় আরোহণের আগে রামেশ্বরমে ভোলেনাথের পূজা করেছিলেন। এখানে তিনি শিবলিঙ্গ স্থাপন করেন।
(১২) ধানুশকোডি।
বাল্মীকি রামায়ণে উল্লেখ আছে যে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র রামেশ্বরমের সামনে ধনুশকোডি নামক একটি স্থান আবিষ্কার করেছিলেন। এটি ছিল সমুদ্রের সেই বিন্দু যেখান থেকে সহজেই শ্রীলঙ্কায় পৌঁছানো যায়।
(১৩) নুয়ারা এলিয়া পর্বতশ্রেণী।
নুওয়ারা এলিয়া পাহাড় থেকে প্রায় ৯০ কিমি দূরে বান্দ্রভেলার পাশে রাবণের প্রাসাদ ছিল। এই স্থানটি মধ্য লঙ্কার উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে ছিল।
(১৪) লঙ্কা।
ভগবান শ্রীরাম এবং লঙ্কাপতি রাবণের মধ্যে যুদ্ধ ১৩ দিন ধরে চলেছিল। এরপর রাবণ বধের মাধ্যমে রাম- রাবণের যুদ্ধ শেষ হয়।
লঙ্কা থেকে অযোধ্যায় ফিরবার পথে শ্রীরামচন্দ্র আবার রামেশ্বরমে পৌঁছান, এরপর নাসিক থেকে প্রয়াগে ঋষি ভরদ্বাজের আশ্রমে পৌঁছে অযোধ্যায় ফিরে আসেন। এভাবে বনবাসের কালে উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু, শ্রীলঙ্কা হয়ে আবার অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন দশরথ নন্দন।
______ জয় রাধেগোবিন্দ।