” ভবিষ্যত চাকুরী বাজার ও আমাদের করনীয় “
বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা চুকিয়ে চাকুরীবাজারের পন্যে পরিনত হচ্ছি। যখন বাজারের পন্য হিসাবে নিজেকে উপস্থাপন করা হচ্ছে তখন ক্রেতা (Employer) পন্যের গুনাগুন বা কার্যকারিতা পরীক্ষা বা যাচাই করে তার প্রতিষ্ঠানের জন্য একজন ভাল কর্মচারী ক্রয় করতে বা নিয়োগ দিতে চান। আবার ইদানিং এই বাজারে অনেক বিদেশী পন্যও (বিদেশী চাকুরীজীবি) প্রদর্শিত হচ্ছে। মূলকথা প্রতিযোগিতা তুঙ্গে।
বাজারে কিন্তু ক্রেতা বা Employers এর চাহিদার থেকে অনেক বেশি পন্য বা চাকুরীজীবি নিয়োগের জন্য সরবরাহ হচ্ছে। চাহিদা ও যোগানের এই অসংগতির কারনে আমাদের দেশে প্রতিবছর বৃদ্ধি পাচ্ছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা। আবাদি জমি, গোয়ালের গরু বিক্রি করে, অনেক বসবাসের শেষ সম্বল টুকু বন্ধক রেখে সন্তানকে চাকুরীবাজারের প্রতিযোগিতায় পাঠাচ্ছেন।
আমাদের দেশের ৩৯ টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ৯৩ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হতে প্রতিবছর ২ লাখ শিক্ষিত বের হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হচ্ছে আরও ৫ লাখ শিক্ষিত স্মাতক ধারী। প্রতিবছর ৭ লাখ শিক্ষিত স্মাতক ধারীদের বাজার ভারী হচ্চে, সবাই ছুটে চলছে সোনার হরিনের পিছনে।
শিক্ষিতদের মধ্যে বেকারের সংখ্যায় আমরা অনেক এগিয়ে, বিশ্বদরবারে তৃতীয়। চাকুরীবাজারে সরকারি ক্রেতার সংখ্যা (সরকারি চাকুরী) ৫ % এবং বেসরকারি ক্রেতা (চাকুরী) ৯৫ %। আবার শোনা যাচ্ছে এই বাজার থেকে বিদেশী চাকুরীজীবিরা নাকি প্রতিবছর ৬৫ হাজার কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছে। আবার আমাদের দেশের চাকুরী প্রার্থীরা নাকি চাকুরী পাচ্ছে না। বিদেশীদের নিয়োগ ও দেশীয় বেকার হচ্ছে মূল কারন। প্রশ্ন হচ্ছে কেন?
দক্ষতা ! হ্যা ঠিকই শুনছেন দক্ষতা। দক্ষতার অভাবেই আমরা চাকুরীবাজারের প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে। Campus to Corporate ভ্রমনে আমরা পিছিয়ে পড়েছি। আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যাবস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলো যে কাঁচামাল সরবরাহ করছে তা Corporate হাউজ গুলোতে উচ্চমানের সেবা দিতে পারছে না। তাই তৈরী হচ্ছে বেকারত্ব। যা আমাদের দেশের আয়ের একটি অনন্য উৎস হতে পারে। যে দেশের যে ধরনের সম্পদ বা উৎস বেশী সেটাই হতে হবে প্রধান অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি। জনসংখ্যা হচ্ছে আমাদের, একেই সম্পদে পরিনত করতে পারলেই অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে।
বর্তমান যুগ হচ্ছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগ। Industry 4.0. চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের কারনে তৈরি হচ্ছে অনেক নতুন চাকুরী ক্ষেত্র। আবার একই সাথে হারিয়ে যাচ্চে অনেক পুরাতন চাকুরী। উদাহরন স্বরূপ ব্যাংকগুলোতে ATM(Automated Teller Mchine) আসার কারনে Cash officer এর চাকুরীবাজার ক্ষীন হয়েছে। ভবিষ্যতে শূন্য হওয়ারও সম্ভাবনা বিদ্যমান। Doctorless Hospital, Driverless Car, Youtube or distance learning প্রভৃতি Technology চাকুরীবাজারকে করবে আরও সংকীর্ন।
এখন পশ্ন হচ্ছে আমাদের করনীয় কি?
হ্যা! সঠিক পথে এসেছেন। সমস্যার কথা বলা বা তৈরি করা মূল কথা নয়। সমাধানের পথে যেতে হবে। সমাধান একটাই যুগোপযোগি দক্ষতার উন্নয়ন। (Employability Skill) আমাদের দক্ষতা মূলত তিন ধরনের:
Domain Knowledge
Communication & Presentation Skill
Technological Skill
Domain Knowledge বা Functional Skill: Domain Knowledge বলতে Particular area বা Subjective Knowledge কে বুঝানো হয়েছে। Finance graduate দের Financial knowledge, Architecture designing knowledge, Doctor দের medical scince দক্ষতা।
Communication & Presentation Skill: এর মধ্যে ভাষা (ইংরেজি, হিন্দি, চায়না) মানুষের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন, যোগাযোগের মাধ্যম, নিজেকে বা নিজের কাজকে উপস্থাপন করাকে বুঝানো হচ্ছে। আমরা অনেক কিছু জানি বা অভিজ্ঞ কিন্তু এর ঘাটতি থাকার কারনে সেগুলো উপস্থাপন করতে পারি না।
Technological Skill: আমরা যা কিছুই করি না কেন তা সহজ ও সাবলীলভাবে করার জন্য Technological knowledge প্রয়োজন। যেমন Excel, Tally software, E-mail এরকম অনেক Technoloy আছে। যা কাজের প্রয়োজনের সাথে সমন্বয় করে নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হবে।
পড়ালেখা হতে হবে যুগোপযোগী। আন্তর্জাতিক গবেষনা সংস্থা বলেছে, চার বছরের স্নাতক এর- প্রথম বর্ষের শিক্ষা চতুর্থবর্ষে পড়ার সময় মার্কেট থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রথম বর্ষের পড়া চাকুরীতে প্রয়োজন হচ্ছে না। PWC একটি জরিপে বলেছে ৮০ কোটির জায়গায় তৈরি হবে ১০০ কোটি কাজের। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন হবে ভিন্ন দক্ষতার। এই দক্ষতা অর্জন শুধু স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর উপর ছেড়ে দিলে হবে না, গড়ে তুলতে হবে জীবন ব্যাপী শিক্ষার সংস্কৃতি।
আর এই কর্মদক্ষতা (Employability Skill) অর্জনের সঠিক সময় বেছে নেওয়া উচিত ছাত্রাবস্থায়। প্রয়োজনে কোন Mentor এর শরনাপন্ন হতে হবে। যে সঠিক দিকনির্দেশনা দিয়ে আপনাকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।
– Rony Saha
০৭/০৭/২০২১, ঢাকা।