ভারতীয় স্কুলে কিভাবে হিন্দুবিদ্বেষ ছড়ানো হয়?
Rakesh Thiyaan – এর টুইট থেকে সংকলিত
(বোঝার সুবিধার্থে ২টি নোট সংযোজন করা হয়েছে)
————————————————
— স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসকে হিন্দুদের ক্রমাগত পরাজয় হিসেবেই উপস্থাপন করা হয়। সেই ৭১২ সালের আরবদের সিন্ধু বিজয় হতে ১৫২৬ সালে মুঘলদের আগমন পর্যন্ত এ যেন মুসলিম আক্রমণকারীদের হাতে হিন্দু রাজাদের একতরফা পরাজয়ের ইতিহাস।
— আপনার সন্তানের যদি কিছুটাও জাতীয়তাবোধ থেকে থাকে, তবে তার অনুভুতি হবে প্রচন্ড হতাশা ও রাগের। হিন্দু রাজারা এত সহজেই মুসলিম হানাদার বাহিনীকে ঠেকাতে ব্যর্থ হল? কেন হিন্দুরা এতটা অসংগঠিত ছিল? মহা*ম্মদ ঘোরীকে পরাজিত ও বন্দী করার পরও কেন তাঁকে মুক্তি দিয়ে ফিরে যেতে দিলেন পৃথ্বীরাজ চৌহান?
— বৈদিক সময়কালকে দেখানো হয়েছে আক্রমণকারী আর্যদের দ্বারা দেশীয় নগর, জনপদ ধ্বংসের এক ধ্বংসোন্মাদ যুগ হিসেবে।
— যেহেতু, আর্যরা এদেশীয়দের মেরে দক্ষিণে পাঠিয়ে দিয়েছে, তাই কেবল দক্ষিনীরাই হল আসল ভারতীয়। আমার এক সহপাঠী রাকেশ ট্যান্ডন জোক করে বলত; “তোমরা দক্ষিনীরাই হলে এই দেশের আসল মালিক”!
— ক্লাস সিক্সে’র ইতিহাস বইয়ের লেখা কথা আমার এখনো কানে বাজে; “আর্যরা ফর্সা ও লম্বা আর দ্রাবিড়ীয়রা হল খাট আর কাল”। আমারই এক কলকাতা হতে আগত সহপাঠী দেবাশীস দাশ স্কুলের দক্ষিনীদের দ্রাবিড়ীয় ডাকত।
— পুরো ব্যাপারটা আমাকে কনফিউজ করে দিয়েছিল। দেবাশীস ছিল কাল, আর আমি ছিলাম ফর্সাদের মধ্যে অন্যতম। আমি নিজে দক্ষিনী হয়েও ফর্সা আর দেবাশীস আর্য (কোলকাতার অবস্থান ভারতের উত্তরে), বিষয়টা কেমন পরস্পরবিরোধী হয়ে যাচ্ছিল আমার পড়া স্কুলের বইয়ের সাথে। আরও মজার বিষয় ছিল, স্কুলের পাঞ্জাবী ছেলেরা কেউ নিজেদের আর্য বলে দাবী করত না, কেবল দেবাশীস করত (যে নিজে ছিল কাল)! পুরোটাই কনফিউজিং লাগত আমার কাছে।
— এরসাথে যোগ হয়েছিল,আমার বাড়ীর পরিস্থিতি! আমার বাবা কাল, কিন্তু মা ফর্সা। ব্যাপারটা আমাকে পার্মানেন্টলি কনফিউজ করে রাখত।
— একজন চিন্তাশীল ও জাতীয়তাবাদী ধারণায় বিশ্বাসী গর্বিত হিন্দু’র জন্য স্কুলে ইতিহাসের নামে যা পড়ান হয়, তা একজন ১০ বছর বয়সী শিশুর মধ্যে বেশ হীনমন্যতার জন্ম দিতে পারে। হিন্দু হিসেবে আমার নিজের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সাংঘাতিক নীচে নেমে যেত ইতিহাসের ক্লাসে, সেই সময় দক্ষিনী হিসেবে আমার পরিচয় দেওয়া হত দ্রাবিড়িয়ান বলে, যে লেবেল টা আমি কখনই চাই নি। অথচ বিস্ময়কর ব্যাপার হল, আমি নিজেকে দ্রাবিড়িয়ান হিসেবে পছন্দ করতে শুরু করেছিলাম।
— অবস্থাটা এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, কেউ যদি আমাকে দ্রাবিড় বলত আমি তার গায়ের রঙ দেখে উত্তর দিতাম। কোন ফর্সা কেউ বললে বলতাম,”আমরা নগর গড়েছি (city builder) আর তোমরা ছিলে বর্বর”। আর কোন কাল ছেলে হলে বলতাম; “ঠিক আছে আমি দ্রাবিড়, কিন্তু তোমার চেহারা উপজাতিদের মত কেন?”
— সৌভাগ্যবশত, অমর চিত্র কথা’র কমিকস আর চাঁদমামা’র শিশুতোষ গল্পগুলো আমাকে স্বাভাবিক থাকতে সাহায্য করত। এছাড়াও ভালসাম্মা নামক একজন কেরালা’র ইতিহাসের শিক্ষিকা (ইনি আবার ছিলেন খ্রিস্টান) আমাকে পড়াতেন এবং প্রায় ই ইতিহাস বইয়ের ভুলগুলো ধরিয়ে দিতেন।
— মিস ভেলসাম্মা প্রায়শই ইতিহাস বইয়ের বিভিন্ন একপেশে বক্তব্যকে নিজস্ব যুক্তি ও বিচার দ্বারা খন্ডন করে দিতেন। উদাহরণস্বরূপ; (হর্ষবর্ধনের শাসনামলে) চৈনিক পরিব্রাজক হিউয়েন সাং মন্তব্য করেছিলেন যে তিনি ভারতে হিন্দু মন্দিরের চেয়ে বেশী সংখ্যক বৌদ্ধ স্তূপ দেখতে পেয়েছিলেন।
— এক্ষেত্রে ভেলসাম্মা’র বক্তব্য হল; চৈনিক পরিব্রাজক বাড়িয়ে বলেছেন, কারণ তিনি নিজে বৌদ্ধ ছিলেন। ভারতের বিরাট সিংহভাগ জনগোষ্ঠী ছিল হিন্দু। তাই কোনোভাবেই বৌদ্ধ স্তুপের সংখ্যা, হিন্দু মন্দিরের চেয়ে বেশী হওয়া সম্ভব ছিল না! কথাটা আমার কাছে যৌক্তিক ই মনে হয়েছিল।
— তিনি আর্য আক্রমণ তত্ত্ব নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য হল, উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও উত্তর-পুর্ব ভারতের জনগণের মধ্যে এতগুলো কালো মানুষের উপস্থিতি যেটা ইঙ্গিত দেয়, তা হল জলবায়ুগত অবস্থা ই এরকম মিশ্র গায়ের রঙের জন্য দায়ী।
— তাছাড়া, বহু পরিমাণ গ্রীক যেহেতু ভারতের উত্তর-পশ্চিমে বসতিস্থাপন করেছিল, তাই ঐ অঞ্চলগুলোতে ফর্সা রঙের লোকজন বেশী। এটাও ভেলসাম্মা’র বক্তব্য।
— একদিকে স্কুলে চলত মাইন্ডয়াশ, আরেকদিকে ঘরে চলত কম্যুনিস্ট প্রোপ্যাগান্ডা। আমার কম্যুনিস্ট বাবা দিন-রাত আরএসএস কে গালাগালি করত আর আমাকে জোর করে লেনিনের জীবনী পড়তে বাধ্য করত।
— এর উপর ছিল মিডিয়া। আমার মনে আছে ইন্ডিয়া টুডে’র প্রচ্ছদে অয্যোধ্যা ফেরত চাওয়া হিন্দুদের রাগান্বিত ছবির সাথে এমন মিথ্যা প্রোপ্যাগান্ডা ছাপিয়েছিল যে,আমার মনে হয়েছিল সমস্যার জন্য হিন্দুরাই দায়ী (প্রোপ্যাগান্ডা’র ফল!)। আমি আমার অংকের স্যার রাজেন্দ্র বকশি কে জিজ্ঞেস করেছিলাম; “এরা (হিন্দুরা) এত সমস্যা করছে কেন? এটা মুস*লিমদের দিয়ে দিলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়!”
— বকশি জী’র বয়স ছিল ২০ এর মাঝামাঝি এবং তিনি দ্রুতই আমার মধ্যে বেড়ে ওঠা লিব্যারাল-ছাগলামি’র চিকিৎসা করে দিয়েছিলেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন; “কেন দেব? মন্দির আমাদের।” তিনি সংক্ষিপ্ত অথচ পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কি করে মন্দিরের উপর মসজিদ তৈরি হয়েছিল।
— আরও হাস্যকর বিষয় হল, আমাকে পড়ানোর জন্য বকশি জীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন আমার বাবা। এটাকে রীতিমত ঐশ্বরিক ন্যায়বিচার বলা যেতে পারে যে, আমার বাবা, যিনি একজন শহুরে নক্সাল, ব্রাহ্মণ ঘৃণাকারী সাবেক সিপিএম ক্যাডার আমাকে পড়ানোর জন্য একজন পাঞ্জাবী ব্রাহ্মণ আরএসএস কার্যকর্তাকে নিয়েগ দিয়েছিলেন (না জেনে), যিনি আমাকে চিরকালের মত রাম মন্দিরের দিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন।
— কেবলমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়ে ওঠার পরেই আমি প্রথম স্কুল পাঠক্রমের বাইরের ইতিহাস বই পড়তে সমর্থ হই, এবং এই সময়টাতেই আমার আসল ইতিহাস পড়া শুরু হয়। এই সময়টাতেই আমি জানতে পারি যে হিন্দু রাজারা কত সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে হানাদার মুস*লিমদের হিংস্র মোকাবেলা করেছিলেন, তাদের ফেরত পাঠিয়েছিলেন এবং যুদ্ধে হারিয়েছিলেন।
— ইস*লামের ঢেউ পুরো এশিয় জুড়ে আছড়ে পড়েছিল ইরান, তুরস্ক, ইরাকের মত দেশগুলো প্রায় ১০০ ভাগ ধর্মান্তরিত হয়ে গেছিল, কন্তু ভারতবর্ষে ইস*লাম ১৩০০ বছরে কেবলমাত্র ২৫% জনসাধারণকে ধর্মান্তরিত করতে পেরেছিল। জীবনরক্ষা ও বিজয়ের ক্ষেত্রে এটা একটা স্তম্ভিত করে দেয়ার মত অর্জন।
— তাহলে, এই মিথ্যা ইতিহাস গিলতে বাধ্য করা হচ্ছে কেন? কারা হিন্দুদের প্রতিরোধ ও পুনঃজাগরনের ঘটনাগুলো ইতিহাসের বই থেকে মুছে দিয়েছে? এর উত্তর হল, কংগ্রেসের মুস*লিম শিক্ষামন্ত্রী ও কম্যুনিস্ট পার্টি’র (সি পি আই) এর যোগসাজশ! ভারতবর্ষ নিয়ে এই দুই গ্রুপেরই (মুসলিম এবং কম্যুনিস্ট) পরিকল্পনা একই রকম।
— (উপনিবেশিক) ব্রিটিশ মিথ্যাচারের একটা হল; অভিজাত হিন্দুরা আসলে ছিল আর্য বহিরাগত আক্রমণকারী এবং স্বভাবতই ভারত ধ্বংসের জন্য মুসলিমদের সাথে সমানভাবে দায়ী। ভারতের অভিজাত মুসলিমরা এই মিথ্যাচারকে সমর্থন দিয়েছিল।
— (কারণ) মুসলিমরা ভীত হয়ে পড়েছিল এইভেবে যে, হিন্দুরা ভারতের ক্ষমতায় বসলে (বৃটেনের বিদায়ের পর) তাদের উপর গত ১৩০০ বছর ধরে ঘটে যাওয়া মন্দির-মুর্তি ভাঙ্গা, জোরপুর্বক ধর্মান্তর এবং হিন্দুদের নিয়ে দাস ব্যবসা’র প্রশ্ন তুলবে এবং তার উত্তর চাইবে মুসল*মানদের কাছ থেকে।
— নতুন প্রজন্মের হিন্দুদের কাছ থেকে যদি এগুলো লুকানো যায়, তবে মুস*লিমদের খুব সুবিধা। তাহলে একদিকে তারা দাবী করতে পারে মুস*লিমরা গত ১০০০ বছর ধরে ভারত শাসন করেছিল, অন্যদিকে হিন্দুদের উপর অত্যাচারের ঘটনাগুলো লুকিয়ে রাখাতে এই বিষয়ে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। (পাঠক খেয়াল করুন,বর্তমানে কিন্তু তাই ই হচ্ছে!!!)
— কিন্তু কম্যুনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (সি পি আই) এর এজেন্ডা হল যেকোনো প্রকারে ভারতে হিন্দু পুনঃ জাগরণের পথ বন্ধ করা, কারণ একমাত্র হিন্দুধর্মের মৃত্যু হলেই ভারতে কম্যুনিজমের উত্থান সম্ভব! কম্যুনিজম ভারতে তখনই বিস্তার লাভ করবে যদি হিন্দুধর্মের মৃত্যু হয়। এই চিন্তাভাবনার পরিণতি হল কংগ্রেস পার্টি ও কম্যুনিস্টদের মধ্যে যোগসাজশ!
[ নোট – কংগ্রেস ভারতের অভিজাত সামন্ততন্ত্রের অভিভাবক। জাত-পাতের আভিজাত্য, সামন্তপ্রভুর আভিজাত্য, অভিজাত শ্রেনীর স্বার্থরক্ষা’র প্লাটফর্ম হল কংগ্রেস। তাই, যেকোনো ভাবে সাধারণ হিন্দুর উত্থান কে সেক্যুলারিজমের আড়ালে দাবিয়ে রাখা টাই হল কংগ্রেসের রাজনীতি। এইদিক দিয়ে কংগ্রেস – মুস*লিম – কম্যুনিস্ট একটা একক হিন্দু-বিরোধী অক্ষ]
— কংগ্রেসের অধীনে কম্যুনিস্টরা শিক্ষাব্যবসস্থা’র (Academia) নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, গান্ধী পরিবার কম্যুনিস্টদের সুপারিশকৃত ব্যক্তিদের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেয়। স্বাধীনতা উত্তর ভারতের প্রথম ৫ জন৷ শিক্ষামন্ত্রীর মধ্যে ৪ জনই (সুপারিশকৃত) মুস*লিম! (ভাবা যায়??)
— প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন মউলানা আবুল কালাম আজাদ। একজন আদ্যন্ত হিন্দুবিদ্বেষী ও প্যান- ইস্লা*মিস্ট। তিনি ২ মেয়াদে টানা ১১ বছর শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ভেবে দেখুন; দেশভাগের মাত্র কয়েকমাসের মধ্যে একজন জে*হাদিকে শিক্ষামন্ত্রীর পদ দেওয়া হল যিনি দেশভাগের সময়কালে জি*হাদের পক্ষ নিয়েছিলন।
[ নোট- মৌলানা আবুল কালাম আজাদ দেশভাগের বিরোধিতা করেছিলেন, কারণ তিনি মনে করতেন পুরো ভারতবর্ষ ই ইস*লামের! জামাতের তাত্বিক গুরু মউদুদী ও ঠিক একই বক্তব্য দিয়েছিলেন]
— ২য় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন একজন হিন্দু। ৩য় জন ছিলেন হুমায়ূন কবির। ৪র্থ জন এম সি চাগলা (পাঠান মুসলিম। ৫ম জন ফখরুদ্দিন আলী আহমেদ। ১০ম জন ছিলেন নুরুল হাসান।
— এই মুসল*মান শিক্ষামন্ত্রীরা (সকলেই কম্যুনিস্টদের সুপারিশকৃত) সকলেই মুঘলদের প্রশস্তি শুধু গান নি, রানা প্রতাপ, রানা সঙ্ঘ,শিবাজী,মারাঠা প্রভৃতিকে হেয় ও করেছেন। বিশাল বিজয়নগর সাম্রাজ্য’র জন্য বইয়ে বরাদ্ধ মাত্র এক প্যরা। অন্যদিকে কয়েক চ্যপ্টার ধরে মুঘলদের প্রশস্তি চলে পাঠ্যবইয়ে।
— বইয়ের ৮০ শতাংশ জায়গা বরাদ্ধ ১১৯২ থেকে ১৭০৭ সাল পর্যন্ত চলা ইস*লামিক শাসনের প্রশস্তির জন্য। বাকী ২০ শতাংশে জায়গা হয়েছে ভারতের বাকী ৫০০০ বছরের ইতিহাস!
————————–