” ভালবা- ভ্যজাইনা এনাটমি “
৪৫% এর বেশি পুরুষ তাদের পেনিসের গড়ন নিয়ে আতঙ্কিত, উদ্বিগ্ন এবং অনেকাংশে হীনমন্যতার শিকার। বিপরীত দিকে ৮৫% এর বেশি নারীরাই তাদের সেক্স পাটনারের পেনিস সাইজ নিয়ে সন্তুষ্ট। নারীরা কি অল্পতেই তুষ্ট? পুরুষরা নিছক দুর্ভাবনার কবলে? আসল কথা, হিসেবে বেশ গড়মিল আছে বলে মনে হচ্ছে না? তাহলে এর একটা সমাধান দরকার।
.
ভেজাইনা কাকে বলে এবং এর দৈর্ঘ্যই বা কতটুকু তা জানা প্রয়োজন আমাদের। তা না হলে বোঝা মুশকিল যে কেনো পেনিস সাইজ আদো এত গুরুত্বপূর্ণ।
ছবিটা ভালো করে দেখুন। নিয়মিত মনোযোগ দিয়ে পর্ন দেখে থাকলে বারবার ছবি দেখার দরকার নেই কেবল কথার সাথে মনে মনে মিলিয়ে নিন। নারীদের দুই পায়ের মাঝে— একটু মেলে ধরেলেই— প্রথমে যে জিনিসটা চোখে পড়ে তা হচ্ছে কিছু টিস্যু। ঝুলে থাকা নরম চামড়ার মতে মনে হয়। সংখ্যায় এগুলো নেহাৎ কম না। কয়েক স্তরে সুসজ্জিত এই টিস্যুগুলো অত্যন্ত কোমল এবং উত্তেজিত অবস্থায় অনেক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে উঠে। এজন্য সাইকেল চালানোর সময়, চেয়ারে বসার সময়, স্নানের সময় পানির ঝাপটাতেও নারীরা যৌনসুখ পায়।
এগুলোকে একত্রে বলা হয় ভালবা ( Vulva )। ইন্টারমিডিয়েট বায়োলজি বইতে ঘাসফড়িং এর মুখের গঠন পড়ার সময় যেমন লেবিয়াম, লেবরাম, ম্যকসিলারি ভালবা ইত্যাদি নাম পেয়েছিলেন, যেগুলো মুখছিদ্রের পূর্বে অবস্থিত, ঠিক তেমনি ভ্যাজাইনার পোর/ ছিদ্রের আগে বেশকিছু মাংস থাকে যেমন, লেবিয়া মেজোরা, লেবিয়া মাইমোরা, ক্লিটোরিস ইত্যাদি যাকে একত্রে বলা হচ্ছে ভালবা। এগুলো খুব স্পর্শকাতর, সুন্দর দেখতে ( সুস্বাদু বললে রাগ করবেন নাকি?) টিস্যু। ওরাল সেক্সের সময় যদি নারীকে এই স্থানে জিহ্বা লেহন বা আঙুলের মৈথুন দেয়া হয় তবে সে উত্তেজনায় ভিজে যাবে এবং ভ্যাজাইনার ট্রাকট/ নালি পিছল হয়ে আসবে।
.
এবার ভেতরে যাওয়া যাক। যদি সেই টিস্যুগুলোকে আঙুল দিয়ে সরানো তবে দেখা যাবে দুটো ছিদ্র। একটি মুত্রনালীর আরেকটি ভেজাইনার। অন্যদিকে ছেলেদের প্রস্রাব আর ইজাকুয়েশনের নালি একটাই; যার ফলে তার অর্গাজমের সাথে প্রস্রাব বের হয়ে আসে না। কিন্তু নারীরা অর্গাজমের সাথে প্রস্রাবও করে ফেলতে এবং তা বেশ কমন। পর্নে এটা আরো অহরহ।
ভ্যজাইনার দৈর্ঘ্য ২.৭৬ – ৪.৭২ ইঞ্চি এর মতো। এভারেজ নিতে চাইলে বলা লাগে ৩.৮ ইঞ্চি। এখানে একটু স্পষ্ট করে বলে দেয়া ভালো যে এই দৈর্ঘ্য একদম ছিদ্র থেকে শুরু করে সার্ভিক্স ( cervix) পর্যন্ত। সার্ভিক্স কি? এটা ইউটেরাসের নিচের অংশ। বাচ্চা জন্ম হওয়ার সময়—যখন বাচ্চার মাথা নিচের দিকে মোড় নেয় বের হওয়ার জন্য— এর মাথা সার্ভিক্সের উপর চাপ রাখে। তখন ভয়ানক ব্যথা হয়; লেবার পেইন হয়। এরপর যখন সার্ভিক্স যথেষ্ট প্রশস্ত হয়, তখন আস্তেধীরে মাথা বের হয়ে আসে আর ব্যথার ইতিটানে। সার্ভিক্সের আরো কাজ, স্পার্ম নিয়ে যাওয়া, মেনস্ট্রাল ব্লাড নিয়ে আসা। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ইঞ্চি। এর মধ্যে পেনিসের গুঁতো লাগলে বেশ ব্যথা পাওয়া যাবে। মানে সার্ভিক্স থেকে আনন্দের শেষ এবং কষ্টের শুরু।
.
পুরুষের পেনিস লেন্থ অন এভারেজ ৫ ইঞ্চির সামান্য বেশি। প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এর দৈর্ঘ্য আর বাড়ার সুযোগ নেই। তবে তা বয়সের সাথে সাথে— মানে একদম প্রাইম বয়সে— একটু বাঁকা, শক্ত ও মোটা হতে পারে। আবার বেশ ওজন কমালে তার দৈর্ঘ্য সামান্য একটু বেশি দেখায়। কারণ চর্বি একটু কমে যাওয়ায় গোড়ার অংশও বের হয়ে যায়।
এখানে সুন্দর একটা হিসাব কষা প্রয়োজন। মেয়েদের ভেজাইনা নালি যদি হয় অন এভারেজ ৩.৮ ইঞ্চি আর পুরুষদের লিঙ্গ ৫ ইঞ্চি, তবে কি মেয়েদের ব্যথা পাবার কথা না? এখানের মজার বিষয় চলে আসে। তা হচ্ছে উত্তেজিত অবস্থায় মেয়েদের ভ্যজাইনা নালি একটু লম্বা হয়ে আসে। এভারেজে ৪.৫ ইঞ্চির মতো। মানে ছেলেদের এভারেজ পেনিস লেন্থের চেয়ে ০.৫ ইঞ্চি কম! ভালবার টিস্যুর দৈর্ঘ্য সহ বিবেচনা করলে তা আরেকটু বাড়ে। আরেকটা জিনিস হচ্ছে, পেনিস কিন্তু প্রত্যেক থ্রাস্টে পুরোটা ঢুকানো হয় না। আর যেহেতু নারীদের সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা ভেজাইনার প্রথম দিকে—মানে শুরুর দিক থেকে ১/৩ ভাগের মধ্যে— তাই নারীদের উত্তেজনার কমতি হয় না। পুরুষদেরও পেনিসের অগ্রভাগে, গোলাপি অংশে, সবচেয়ে বেশি উত্তেজনা। হিসাব এজন্য খাপে খাপে মিলে যায়।
.
মেয়েদের ভ্যজাইনার আরেকটা মজার জিনিস হচ্ছে তা বিপুল হারে আকার পরিবর্তন করতে সক্ষম। যখন নারীরা যৌনভাবে উত্তেজিত থাকে না, তখন ভ্যজাইনার দেয়ালগুলো একদম একে-অপরে লেগে থাকে। যৌন উত্তেজনা পেলে ফ্লুইড নিঃসরণ শুরু হয়। এবং দৈর্ঘ্য একটু বেড়ে যায়; বেড়ে যায় কারণ সেভিক্স উপরের দিকে টান পায়। এছাড়াও নানা সময়ে, যেমন পিরিয়ড, প্রেগনেন্সি ইত্যাদি ভ্যজাইমার নালির দৈর্ঘ্যের হেরফের হয়।
পুরুষদের যেমন সঙ্গমের পূর্বে, নিজেদের অঙ্গে উত্তেজিত করে নিতে হয়, তেমনি নারীদেরও উত্তেজিত করে নেয়া প্রয়োজন। কারণ তা না হলে পেনিট্রেশনের সময় ব্যথা পাওয়া যায়। এটা করা যেতে পারে রোমান্টিক সেক্সের গল্প বলে, আঙুল ও জিহ্বা দিয়ে ভালবার টিস্যুতে, বিশেষত ক্লিটোরিসে স্পর্শ দিয়ে। পুরুষদের সাথে নারীদের যৌনসুখের এক পার্থক্য হচ্ছে, নারীরা স্পর্শে, চুম্বনে অনেক বেশি সাড়া দেয় এবং তা অনেক দীর্ঘস্থায়ী। তাই যৌনজীবন সুখের রাখতে হলে নারীকে অনেক সময় দেয়া প্রয়োজন। না হলে সেক্সুয়াল ফ্রাস্ট্রেশনের শুরু হবে।
.
তাহলে এই অসন্তুষ্ট নারীরা কারা? এরা সেসকল নারী যাদের ভ্যজাইনার আকৃতি সাধারণের চেয়ে বড় এবং তার পার্টনারের পেনিস কম। সামান্য পার্থক্যে তেমন যায় আসে না। কারণ নানান সেক্স পজিশনে তা সমাধান করা সম্ভব। এগুলো বিষয় জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। জিনোটাইপ ও ফিনোটাইপের কথা বিবেচনা করলে আমরা বলতে পারি যে অনেক সময় অপুষ্টি ও হর্মনের ঘাটতিতে দৈহিক গড়নে ব্যঘাত ঘটে।
কিছু মিথের মধ্যে জনপ্রিয় একটা মিথ হচ্ছে, পায়ের তালুর আয়তনের সাথে পেনিসের দৈর্ঘ্যের সম্পর্ক আছে। নাহ এটা পুরোই ভুয়া তথ্য। আর দৈহিক উচ্চতার সাথে পুরুষের লিঙ্গের দৈর্ঘ্যের কোনো নির্দিষ্ট অনুপাত নেই। বেশি লম্বা হওয়া মানেই যে বেশি বড় পেনিসে অধিকারী হওয়া, তা না। বাহ্যিক গড়ন দেখে কিছুই বুঝার উপায় নেই।
মো. আরিফুল ইসলাম