মানুষকে কেউ হাঁটা শেখায় নি। কেউ হাঁটা শেখাতে পারে না। শুধু সাহায্য করতে পারে।

Uncategorized
**  মানুষকে কেউ হাঁটা শেখায় নি। কেউ হাঁটা শেখাতে পারে না। শুধু সাহায্য করতে পারে। **
পিঁপড়ের একটি জীবন রয়েছে, যা সত্যি। জন্ম-মৃত্যূর দোলাচলে যে জীবন, তা অন্যান্য প্রাণীর মতো। কীট-পতঙ্গের মতোই একদিন নিঃশেষ হয়ে যায়। তার নিজস্ব চিন্তাশক্তিতেই ( সীমিত জ্ঞানে) সে জীবন ধারণ করে। তার জগতটি নিতান্ত-ই ছোটো। যদি একটি পাহাড়ের পাদদেশে পিঁপড়ার বসবাস হয়, তার পক্ষে কোনোদিনই জানা সম্ভব হবে না এই পাহাড়ের বিশালতা কতটা বিস্তৃত? এই পাহাড়ের ভিতর কি রকমের পাথর রয়েছে, তা স্যান্ড-স্টোন না লাইম-স্টোন না অন্য কিছু? তথাপি তার বসবাস পাহাড়ের-ই কোনো না কোনো অংশে। পিঁপড়ের জীবনের শেষদিন পর্যন্ত তার ভ্রমণ কাহিনী, আশে-পাশের সামান্য জায়গা জুড়ে। যদি অন্য কোনো এক পতঙ্গ যেমন ফড়িং, যদি উড়ে এসে পিঁপড়াকে বলেও ফেলে যে, সে অনেক অংশ ঘুরে ঘুরে দেখেছে। এই উঁচু পাহাড়টি বর্ণনা করার মতো নয়, তবুও হয়ত পিঁপড়ের জানার ইচ্ছে পূর্ণভাবে জেগে উঠবে না। কারণ তার কল্পনাশক্তি, তত দূর যাবে না। যদি সে কল্পনা করতে পারত এই পাহাড়ের বিশালতা, তবে হয়ত না দেখতে পারার একটি আফসোস থেকেই যেত।
দেখা যাচ্ছে, কল্পনা-ই  চিন্তাশক্তির পিছনে কাজ করছে। মানুষের ক্ষেত্রে কি দেখা যায়? তার কল্পনাকে ত্বরান্বিত করার জন্য আশেপাশে অনেক চিন্তকের অর্জিত নানা কষ্টসাধ্য গবেষণা-পত্র রয়েছে। শুধু নিজ থেকেই একটু কল্পনা করে চিন্তাশক্তিকে জাগাতে পারলেই, অপরের গবেষণা-লব্ধ অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আপন চিন্তাশক্তির মাধ্যমে, এই জগতের নানা প্রান্তে যেমন যাওয়া যায়, তেমনি এ জগতের বাহিরে আর কিছু কোথাও আছে কি না, সে-রকমের বিষয়েও ধ্যানমগ্ন থাকা যায়। প্রশ্ন আসতে পারে, সকলের ভিতর কি কল্পনা করার মত শক্তি রয়েছে? হ্যাঁ, অবশ্যই রয়েছে। মানুষকে কেউ হাঁটা শেখায় নি। কেউ হাঁটা শেখাতে পারে না। শুধু সাহায্য করতে পারে। সাহায্য না পেলেও, মানব শিশু একদিন হাঁটতে শুরু করবে। সে হাঁটার মত গুণাবলী নিয়েই জন্ম নিয়েছে। সে জানত, সে হাঁটবেই। কেউ তাকে এ বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে বলেনি যে, তোমাকে হাঁটতে হবে। সময়ের সাথে সাথে হাঁটার ইচ্ছে, শিশুর ভিতর থেকেই প্রকাশ লাভ করেছে। তেমনি হাঁটার কল্পনা-ও শিশুর মনে, তরঙ্গের মতই উঠেছে আর নেমেছে। শুধু সময়ের অপেক্ষাতে সে ছিল।

এই যে মানুষ জীবনের শুরুতেই, এত অসাধ্য কাজ সে একাকী করেছে তার মনে নেই। পরবর্তীতে  অনেক মানুষের ক্ষেত্রে কি হয়? তার কল্পনাশক্তিতে কিছু কি এসে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে? না, বাহিরের কোনো কিছুই প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে না, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ মানুষের মন, স্ব-কল্পনাশক্তিকে  নিজে কবর না দেয়। কিছু কিছু মানুষ, তাদের কল্পনাশক্তিকে নিজেই অস্বীকার করে। যেখানে অন্যান্য প্রাণীজগৎ একটি নির্দিষ্ট জ্ঞান বা চিন্তাশক্তি নিয়ে জন্মায়, এর বাহিরে তাদের আর কোনো কিছু ভাবার বা করার যোগ্যতা নেই। কিন্তু সকল মানুষের মধ্যেই একটি অদম্য কর্মক্ষমতা রয়েছে এবং বলা-বাহুল্য যে, ঐ কর্মক্ষমতার পিছনে, কল্পনাশক্তিই চিন্তাশক্তিকে জাগিয়ে তোলে। যে সকল মানুষ, প্রতিনিয়ত তাদের কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার করছে, তাঁরাই জগতের চিন্তক সমাজ। তাঁদের কাছ থেকেই নতুনত্বের নব নব সন্ধান লাভ করে সমাজ ও জাতি সমৃদ্ধি লাভ করে। কোনো নতুনত্বই আসমান থেকে, শিলা-বৃষ্টির মতো পড়ে না। সকলই, মানুষের মন থেকে বাহিরে আসে।
যদি কেউ কল্পনাশক্তিকে ব্যবহার না করে, তার কিছুই আটকে থাকবে না। পাহাড়ের পাদদেশে ঐ পিঁপড়ের বা জঙ্গলের প্রাণীদের কি আটকে আছে? দিব্যি চলে যাচ্ছে দিন রাত। কিছু আটকে নেই। তখন সাধারণ চতুষ্পদী 
প্রাণীদের সাথে বা কীট-পতঙ্গের সাথে, সে-রকম মানুষের আর কোনোই পার্থক্য থাকে না। মানুষে মানুষে প্রভেদ এই কল্পনাশক্তি বা চিন্তাশক্তিতে, মানুষে এবং গরু-ছাগলেও একই প্রভেদ। আর যত রকমের প্রভেদ-ই থাকুক না কেন, সবই গৌণ। এই ভারতের এক সাধক মহাপুরুষ ( ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব ) তাঁর শিষ্যদের বলে গেছেন এই মর্মে, মানুষ তার চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে কোথায় পৌঁছে যেতে পারে। তিনি তাই বলেছেন ” আমি ব্রহ্মযোনি দেখেছি, শিশুর জন্মের মতই, সে ব্রহ্মযোনি-পথে প্রতিনিয়ত ব্রহ্মাণ্ড প্রসব হচ্ছে”, সুতরাং তাঁর উপদেশ ছিল, তোমাদের প্রত্যেকের ভিতর এই অদম্য শক্তি রয়েছে, তোমরা পবিত্র-ভাবে কল্পনা করতে শেখো, তা কাজে লাগিয়ে চিন্তা করতে শেখো।
জীবনের প্রতিটি দিন-রাত্রি সমভাবে মূল্যবান। অসম্ভব অনেকের জীবনেই সম্ভব হয়ে আসে, কিন্তু, যারা তিমিরেই পড়ে থাকে তারা হঠাৎ হঠাৎ অপরের সাফল্য দেখে চমকে ওঠে ! এ কি করে সম্ভব? মূর্খ মানুষের দল, সহজেই বলে ওঠে, ‘এ আর কিছু নয়, সকলই ঐশ্বরিক দান’, কিন্তু নিজেরা স্বীকার করে না, যে গরু-ছাগলের মতোই তাদের জীবন ছিল কেবল খাওয়া-দাওয়া আর মল-মূত্র ত্যাগ করা, কিছু অর্থ উপার্জন এবং পরশ্রীকাতরতায় মগ্ন হয়ে থাকা। ঈশ্বর কাউকে কিছু দেন না। সকলেই সে জন্য প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যায়। যে চেষ্টা চালায়, সে পাবেই। ব্যাকুলতার ( চিন্তাশক্তির ব্যবহার ) উপরই ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *