মুক্তিযুদ্ধে শহীদ একটি পাখির উপাখ্যান।
——————————————
হ্যাঁ, শুধু বাঙালি নয়, এ দেশের দুর্বল নিরীহ পাখিও রুখে দাঁড়িয়েছি ঘৃণ্য পাকিস্তানি হানাদার সেনা বাহিনীর বিরুদ্ধে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ, তখন ছিল ঢাকা আর্ট কলেজ। শিল্প শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পশু-পাখির ফিগার ড্রইং স্টাডির জন্য শিল্পাচার্য্য জয়নুল আবেদিন কলেজ চত্বরেই একটি ছোট্ট চিড়িয়াখানা গড়ে তুলেছিলেন। হাঁস, মোরগ, ছাগল, ভেড়া, কবুতর ও কয়েকটি চিত্রা হরিণ নিয়ে ছিল এই ক্ষুদে আয়োজনটি।
প্রাণি গুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল একটি সারস। সারসটি কখনও চিড়িয়াখানার খোঁয়ড়ে ঢুকতোনা। সে মুক্ত চিত্তে ধীর পায়ে দিন-রাত ঘুরে বেড়াত গোটা চারুকলা ক্যাম্পাস জুড়ে।
কেউ ছবি আঁকলে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো, বিনিময়ে একটু কেক, পাউরুটি বা বিস্কুটের যোগান হয়ে যেত তার। চারুকলার ছাত্র-ছাত্রী-কর্মচারিদের কাছে সে ছিল ভীষণ প্রিয় এক চরিত্র।
’৭১-এর ২৫মার্চ, কালরত্রি।
পাকিস্তানি বাহিনী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলো আক্রমণ করে তখন রোকেয়া হল থেকে কয়েকজন ছাত্রী পালিয়ে সামনের লাইব্রেরী গেট পার হয়ে মসজিদের পাশ দিয়ে দেয়াল টপকে এসে চারুকলার কর্মচারিদের কাছে আশ্রয় চায়। নাইট ডিউটিতে তখন ছিল গার্ড ‘নোনা মিয়া’। সে মেয়েদেরকে এক নম্বর গ্যালারীতে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে দেয়। কিন্তু হানাদার বাহিনীর কিছু সৈন্য মেয়েদেরকে ঠিকই অনুসরণ করছিল। তারা তখুনি এসে হাজির হয়। নোনা মিয়া মেয়েদের বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বললেও তারা ঠিকই বুঝে ফেলে এবং গ্যালারীর তালা ভেঙ্গে পেয়ে যায় ছাত্রীদের। আর মিথ্যা বলার কারণে শুরু করে নোনা মিয়ার উপর আগ্নেয়াস্ত্রের বাঁট দিয়ে নির্মম আঘাত। এক পর্যায়ে নৃ্শংস ভাবে গুলিকরে হত্যা করে হত্যা করে নোনা মিয়াকে।
আর তখুনি এক অন্ধকার ঝোপের আড়াল থেকে সারস পাখিটি উড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পরে নোনা মিয়ার হত্যাকারি সৈন্যটির উপর। ধারালো নখ দিয়ে তার মুখ খামচে ধরে বিশাল ঠোটের উপর্যপরি আঘাতে রক্তাক্ত অবস্থায় ভূপাতিত করে ফেলে খুনিকে। এ সময় অন্য এক পাকি সৈন্য খুব কাছে থেক গুলি করে হত্যা করে এই অসীম সাহসী প্রকৃত বীরের প্রতিভু পাখিটিকে।
শহীদ নোনা মিয়ার সমাধি সংরক্ষণ করছে চারুকলা কর্তৃপক্ষ।
আর পাখিটি আমাদের স্বাধীনতা হয়ে মিশে আছে এই শ্যামল প্রকৃতিতে ?
আমরা তো ত্রিশ লক্ষ স্বজনের স্মৃতিই রক্ষা করতে পারিনি।
(লেখা ও ছবি: Kamal Pasha Chowdhury)