মূর্তি ভাঙার গল্প –আসহানুর রহমান খান

ইসলাম ধর্ম

মূর্তি ভাঙার গল্প:

মূর্তি ভাঙা কবে কীভাবে শুরু হইছিল তার সঠিক ইতিহাস হয়তো লীপিবন্ধ নাই। তবে ধারণা করা হয় যে এক ইশ্বরবাদীদের পদচারণার শুরু থেকে মূর্তি ভাঙার শুরু। তাদের প্রচলিত ধর্মগ্রন্থ গুলোতে এ নিয়ে নানান গল্প লীপিবদ্ধ আছে। বিশেষ করে আব্রাহামের মূর্তি ভাঙার গল্প, “বাবা দিলে খাও আমি দিলে খাও না”, ছোট বেলায় হাজারবার শুনেছি এ গল্প। যা কিনা ব্যাপকতা লাভ করে ইসলামের আবির্ভাবে।

ইসলাম পূর্ববর্তী কাবাঘরে হুবাল, লাত, মানাত ও উজ্জাতসহ মোট ৩৬৫ টা দেব-দেবীর মূর্তি ছিল। যা কিনা মক্কা বিজয়ের দিন গুড়ায়ে দেয় মুহাম্মদের অনুসারীরা। সিরিয়া, মিশর ও আফগানিস্তানের কিছু মূর্তি সেই সময়ের ইসলামী ঝড়ের হাত থেকে রক্ষা পেলেও পরবর্তীতে টেকে নাই তালেবান ও আইএস নামক বর্তমান জামানার ইসলামী ঝড়ে।

বর্তমান ইটালী বা গ্রীসের দেব দেবীদের মূর্তি দেখলে ধারণা পাওয়া যায় আজ থেকে ২০০০ বছর বা তার আগের বিশ্ব ইতিহাসের শিল্পকর্মের। যা কিনা কিছুটা টিকে আছে মায়া সভ্যতায়। ইখতিয়ার উদ্দিন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজি প্রথম মুসলিম হিসেবে ভারতীয় উপমহাদেশে মূর্তি ভাঙার গোড়াপত্তন করেন। গজনির সুলতানদের হাত ধরে পরবর্তীতে মোঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব সেই গতি তরান্বিত করছিল মাত্র।

১৯৯০ সালে রাশিয়ায় সোস্যালিজমের প্রাচীর ভেঙে পরলে লেনিনগ্রাডে অবস্থিত লেনিনের মূর্তি গুড়ায়ে দেয় রাশিয়াবাসী। শহরটার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় সেইন্ট পিটার্সবার্গ। শুধু লেনিনগ্রাড থেকে নয়, গোটা রাশিয়ায় চলে মূর্তি ভাঙার মহোৎসব। আজারবাইজান, কিরঘিস্তান, কাজাকিস্তান সর্বত্র চলছে মূর্তি ভাঙার গান।

গর্বাচেভ সরকার ইউএসএসআর ভেঙে দিলে এই ব্লকের বাঁকি দেশ গুলোতেও একের পর এক সোস্যালিজম ফল করতে থাকে। বাদ যায় নাই আফগানিস্তান। তালেবানরা দেশটির সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় আসে। ক্ষমতায় এসেই তারা একের পর এক ভাঙতে থাকে প্রায় ২২০০ বছরের পুরানো গৌতম বুদ্ধের মূর্তি।

আজ থেকে ২২৭৫  বছর আগে বিহারে জন্ম নেয়া আশোকার শাসন ছিল গ্রীস পর্যন্ত বিস্তৃত। পরাক্রমশালী সেই হিন্দু রাজা পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করলে তার রাজ্যের মানুষ কম বেশী বৌদ্ধ ধর্মচর্চা শুরু করে। তার শাসনকালে আফগানিস্তানের তোরা-বোরা পর্বতের গা খোদাই করে তৈরি করা হয় বুদ্ধের মূর্তি। প্রতিটা মূর্তি প্রায় সত্তর মিটার লম্বা।

তালেবানরা ক্ষমতা দখলের সাথে সাথে ইউনেস্কো ও বিশ্ব নেতাদের অনুরোধ উপেক্ষা করে দুই হাজার বছরের পুরানো সেই মূর্তি গুলোকে রকেট লাঞ্চার মেরে গুড়িয়ে দেয়। যদিও থাইল্যান্ড ও জাপান তা বিলিয়ন ডলারে কিনতে চাইছিল। তালেবানরা সে আমন্ত্রণে কোনো প্রকার সারা দেয় নাই।

গত কয়েক বছরে সিরিয়ায় আইএস গুড়িয়ে দিল প্যাগানদের সময় গড়ে ওঠা নানা দেব-দেবীর মূর্তি। মূর্তি  ভাঙায় আমেরিকানরাও পিছায়ে নাই। ১৯৬৫ সালে ওয়াসিংটন ডিসির ক্যাপিটাল বিল্ডিং এ রাখা স্যার ওয়াসিংটন ডিসির মূর্তিকে সরিয়ে দেয় সেই সময়ের সরকার। মূর্তিটার শেষ আশ্রয় হয় ঘোড়ার আস্তাবলে। এখন তা অবশ্য পার্কে স্থান পেয়েছে।

বর্তমান কালের আইএস বা তালেবানদের সাথে পাল্লা দিয়ে মূর্তি ভাঙার নতুন ইতিহাস গড়লো ভারতের বিজেপী সরকার। ত্রিপুরায় ক্ষমতায় এসেই লেনিনের মূর্তি ভেঙে গুড়িয়ে দিল। এখন চলছে মাহাত্মা গান্ধীর মুখে কালী লেপনের পালা। গোটা ভারত জুড়ে মূর্তি ভাঙা এখন মহোৎসব। আমাদের বাংলাদেশে অবশ্য এই সংস্কৃতি বখতিয়ারের পেতাত্মাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, গত কয়েক বছর তা ব্যাপকতা লাভ করছে মাত্র।

বিশ্ব জুড়ে মূর্তি ভাঙার এই ইতিহাস এক ইশ্বরবাদীদের নিজেদের সম্পদে পরিণত হলেও এখন সেখানে ভাগ বসালো ভারতের পৌত্তলিকরা। মূর্তি পুজারিরা নিজেরাই যখন অন্যের মূর্তি ভাঙে তখন তা আসলেই হাস্যকর। এবং তা দেখে সাধারণ মূর্তি পুজারিরা যদি  চুপ করে থাকে বা হাসাহাসি করে তখন তা লজ্জাস্কর ও বেদানাদায়ক।

লিখেছেন : আসহানুর রহমান খান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *