মেইল-শোভিনিস্ট male chauvinist
** তা হলে আপনি বলছেন যে, মেয়েরা যতই সাজুগুজু করুক, তাতে বিশেষ কিছু বুঝায় না। মানে আপনার কাছে, এসবের তেমন গুরুত্ব নেই।
** আলবৎ কইতে আছি। আমি আসলে বিশ্বাসী। মলাট দেইখা বই পড়নের পাবলিক না।
** হুম বুঝা গেল। কিন্তু কি কারণে এ ধারণা জন্মাল, একটু জানা যাবে?
**তার আগে আপনের মনে কি কারণে, এই বিষয়টা প্যাঁচ খাইল একটু খোলাসা কইরা কন্ তো দেখি। মাইয়ালোক বড়ই প্যাঁচুক। খালি প্যাঁচ খেলে।
** আমি আগে প্রশ্ন করেছি। উত্তরটা শুনি। তারপর না হয় উত্তর দেয়া যাবে।
** দেখেন, আসল আর নকল, এই বিষয়ে আপনে অবগত আছেন তো? আশা করি থাকনের কথা। যদি আপনে আমারে লাল-রঙের চোখ, নীল রঙের চোখের পাতা, লাল-গোলাপী গাল এইসবের মিক্সড কোনো রমণী দেখাইতে পারেন, তাইলে আমি কথা ফিরাইয়া নিমু। আই প্রোমিজ। পারবেন?
** সুন্দরকে আরও সুন্দর করাই, মানুষের শিল্প-সত্তার বহিঃপ্রকাশ। মানুষ, সুন্দরের পূজারী। চিরকাল তাই করেছে।
** মানুষ বলতে তো পুরুষ লোক-ও বুঝায়। না কি খালি মাইয়া লোক?
** তা বুঝায় অবশ্যই। তবে কি জানেন, রূপচর্চাতে পুরুষ বিশেষ আগ্রহী ছিল না। আজও নেই। শুধু দেখেই যায়।
** একটু বেশী দেখলে বা না দেখলে খোটা-ও খায়। এইটা কইয়া ফালান। বাকি রাখলেন কার জন্য?
** এবারে আসল ও নকল বুঝাতে গিয়ে কি বলতে চেয়েছেন, একটু স্পষ্ট করলে সুবিধা হয়।
** প্রথমে নকলের কথা কইয়া ফালাই। আগে তিতা, শেষে মিঠা। এই যে সাজনের উপরে সাজন, মাইঞ্জার উপরে মাইঞ্জা মারছেন বুঝলেন?
** আচ্ছা, মাইঞ্জা-টা কি?
** আমাগো পূর্ববঙ্গের কথা তো। মাইঞ্জা-টা হইতাছে গিয়া মেকাপের প্যাঁচাল। মাইঞ্জা কইলে মধুর শোনায়। মাইয়ালোকে দেখায় রাগ করছে, ভিতরে ভিতরে খুব খুশী হয়।
** আমি মোটেও হইনি।
** এত রেপিড খুশী হওন ভালা না। কিছু সময় পরেই ভালা লাগন আরম্ভ হইব। যাউক গা, এই যে আপনে বইসা আছেন আমার সামনে, কত অর্থপূর্ণ কথা কইতে আছেন, আহারে! এইদিকে আপনার দুইখান হাত ওভার-টাইম করতে আছে।
** দুখানা হাত ওভারটাইম করছে। কি বকছেন আবোলতাবোল?
** ভাইঙ্গা-ই কই। একবার হাত যায় চুলের ডানদিকে, একবার যায় বাঁদিকে। চুল কয়টা যদি বাইন্ধা রাখতেন, তাইলে কিন্তু এই ডিউটি থাকত না। এরপর একবার পিঠের দিকে ব্লাউজ টানছেন। সামনের দিকে টানছেন। এসবের মধ্যে দিয়া মেকাপ-দেখানোর একটা ইচ্ছা-ও কাজ করাতছে। আমার দুই চউখ টানতাছে যে।
** আপনি না ডেঞ্জারাস। আপনি একজন মেইল-শোভিনিস্ট male chauvinist, মানে নারীর চেয়ে পুরুষ এগিয়ে আছে। এই ধারণা মনে নিয়ে আছেন।
** আরে না, প্রাকৃতিক ভাবেই তো পুরুষ বঞ্চনার শিকার। এই দেশের বনে জঙ্গলে দেখেন, “বউ কথা কও” পাখি আছে। “জামাই কথা কও” পাখি একটা-ও নাই। জগতে মাইয়ালোকের ডাক্তার আছে, পুরুষ-রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই। মাতৃভূমি মাতৃভাষা আছে, পিতৃভূমি পিতৃভাষা নাই। আসলে তিনকুলে পুরুষের কেউ-ই নাই বুঝলেন?
** হা বুঝলাম। এবারে আসল নিয়ে কি বলবেন যেন, তাই বলুন।
** এই তো লাইনে আইছেন। আসলের কথাই যদি তুললেন, তাইলে কই। মানুষের আসল রূপ-টা হইতাছে গিয়া যেইসময়ে ঘুমাইয়া থাকে, ঐ সময়েই ধরা দেয়।
** যখন ঘুমিয়ে থাকে তখন রূপ ধরা দেয়। এমন আজগুবি কথা কভু শুনিনি বাপু।
** আজ অবধি যা শুনেছেন, সবই তো বাটার দেয়া। নন-বাটার ডায়লগ এমনই লাগে। ঘুমাইয়া থাকলে, ভাব মারনের বা পোজিশন লওনের সুযোগ থাকে না। তখন অরিজিনাল-টাই ধরা দেয়। যদি কোনোসময় সুযোগ আসে, সেইদিন মন্তব্য করব।
** আপনি কি রকম যেন……
০২ ০২ ২০২০ সিডনি
অসিত রায়