মোল্লাতন্ত্র ধ্বংস করে আধুনিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা!

Uncategorized

মোল্লাতন্ত্র ধ্বংস করে আধুনিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতা!
======
ছবিতে যে ফুটফুটে কিশোরী মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে, তার নাম মারিনা নেমাত। বয়স মাত্র চৌদ্দ বছর। ছবিটা ১৯৭৮ সালে তোলা। যদি বলি ছবিটা ইরানের মাটিতে তোলা, তাহলে অনেকেরই বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে এখন। বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও, এটাই সত্যি। ছবিটা ইরানে তোলা। এক সময় ইরানের মেয়েরা এমনই আধুনিক পোশাক পরতো। মারিনার মতো পোশাক পরার, রাস্তায় সাইকেল চালানোর সাহসতো দূরের কথা, স্বপ্ন দেখার কল্পনাও এখন আর ইরানের মেয়েরা করে না। এই রকম পোশাক পরে বাইরে বের হলে এখন মৃত্যু নিশ্চিত। অতল এক অন্ধকারে পতিত হয়েছে তারা।

এই ছবি তোলার এক বছর পরেই আয়াতুল্লাহ খোমেনীর নেতৃত্বে বিপ্লবীরা রেজা শাহ পাহলবীকে ক্ষমতাচ্যুত করে দখল করে নেয় ইরানের রাষ্ট্র ক্ষমতা। মোল্লাতন্ত্রের দাপটে আধুনিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ ইরান অতি দ্রুত পরিণত হয় ধর্মীয় গোঁড়ামিযুক্ত এক মৌলবাদী দেশে।

১৯৮২ সালে মারিনার বয়স যখন মাত্র ষোলো, ক্লাস টেনে পড়া এক স্কুল ছাত্রী, তখন তাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয়। এই কাজটা করে ইরানিয়ান রিভোলুশনারি গার্ডের লোকেরা। তার বিরুদ্ধে সরকার এবং রাষ্ট্রবিরোধী অভিযোগ আনা হয়। তার অনুপস্থিতিতেই তার বিচার হয়, বিচারে তার মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

তাকে গুলি করে মারার সময়ে বিপ্লবী গার্ডের এক সৈনিক প্রাণে বাঁচায়। তার নাম আলী। আলীর পরিবার খোমেনীর পরিবারের সাথে সম্পর্কিত ছিলো। আলী মারিনার দণ্ড মওকুফের সুপারিশ করে। খোমেনী দয়া করে মৃত্যুদণ্ড থেকে তার সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে নামিয়ে আনে।

আলী এই কাজটা মহৎ কাজ হিসাবে করে না, করে না কোনো ভালবাসা বা প্রেম থেকে। মারিনাকে সে ভয় দেখিয়ে বাধ্য করে তাকে বিয়ে করতে। ১৯৮২ সালে মারিনা বাধ্য হয় আলীকে বিয়ে করতে। এর আগে আলীর পরিবার আরেকটি কাজ করে। মারিনা ধর্মে খৃস্টান। তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার নির্দেশ দেয় তারা বিয়ের পূর্বশর্ত হিসাবে। মারিনার কোনো উপায় ছিলো না। সে মুসলমান হয়, ফাতেমা নাম গ্রহণ করে।

বিয়ের রাতেই স্বামীত্ব ফলাতে মারিনার প্রবল বাধাকে উপেক্ষা করে তাকে ধর্ষণ করে আলী। এই ধর্ষণ এক রাতেই শেষ হয় না। চলতে থাকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত।

একদিন আলীও খুন হয়ে যায় অদৃশ্য আততায়ীদের হাতে। বিস্ময়করভাবে এই সময় দৃশ্যপটে আসে আলীর পরিবার। তারা মারিনার মুক্তির ব্যবস্থা করে। মুক্ত হয়ে কৈশোরের ভালো লাগা এবং ভালবাসার মানুষ আন্ড্রেকে বিয়ে করে মারিনা। ১৯৯০ সালে ইউরোপের এক ক্যাথলিক গ্রুপের ভরসায় ইউরোপে পাড়ি জমায় তারা। সেখান থেকে কাগজপত্র জোগাড় করে ১৯৯১ সালে ক্যানাডায় শরণার্থী হিসাবে চলে যায় মারিনা।

ইরানের সেই দুঃসময়ের স্মৃতিচারণ মারিনা করেছে তার প্রিজনার অব তেহরান বইতে।

মারিনার এই ছবি দেখে অনুভব করা যায় একটা সমাজ হঠাৎ করে কোন দিকে বাঁক নিতে পারে।  খুব অল্প সময়ের মধ্যে দ্রুত পরিবর্তন ঘটলে এমনটা ঘটে। সবকিছুকেই অচেনা লাগে, পর পর মনে হয়!

[সংগৃহীত]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *