যশোরের শিকড়ের সন্ধানে : গদখালী কালী মন্দিরের ইতিহাস

Uncategorized
যশোরের শিকড়ের সন্ধানে #13
দুর্ধর্ষ দস্যু রডা৷ নাম শুনে কেঁপে উঠত সবাই৷ রডরিক রডা (Rodrigo Roda) যার রক্তে উন্মত্ততা, সেই কিনা প্রেমের সাগরে ডুব দিয়েছিল আমাদের ঝিকরগাছার গদখালী তে!! সুদূর পর্তুগাল থেকে বাংলার জলে জঙ্গলের ত্রাস এই দস্যু রডা আজও পরিচিত৷ যেমন পরিচিত তার তৈরি কালী মন্দির৷ দেবী কালীর ভক্ত হয়েছিল রডা৷ এক নীল চোখের দস্যু আর তার প্রেম এক কাহিনী ,যা জড়িয়ে রয়েছে বাংলার কালী সাধনার সঙ্গে৷
এই কাহিনীর কেন্দ্র যশোর৷ তার পটভূমি তৈরি হয়েছিল সুদূর কালিকটের বন্দরে পর্তুগীজদের আগমনের সময় থেকে৷ পঞ্চদশ শতকে পর্তুগীজ নাবিক বার্থালোমিউ দিয়াজ ভারতে অবতরণ করেন৷ শুরু হল ভারতের মাটিতে পর্তুগীজ ইতিহাস রচনার পর্ব৷ পরবর্তী সময়ে ভয়ঙ্কর দস্যুবৃত্তির সঙ্গে জড়িয়ে যায় পর্তুগীজরা৷ হুগলি নদীর জলা-জঙ্গল বেষ্টিত এলাকা ও সুন্দরবনের বিভিন্ন অংশে তৈরি হয়েছিল পর্তুগীজ দস্যু ঘাঁটি৷ অতল সমুদ্রের আহ্বান যাদের রক্তে তারা অচিরেই এই জল জঙ্গলের এলাকায় ভয়ঙ্কর শক্তিতে পরিণত হয়৷ মোগলদের বিরুদ্ধেও এই দস্যু পর্তুগীজরা যুদ্ধ করত৷
ঝিকরগাছা উপজেলার একটি ইউনিয়ন, গ্রাম গদখালি। যশোর বেনাপোল মহাসড়কের পাশেই এর অবস্থান। গদখালী কালীবাড়িটিও এই মহাসড়কের ধারে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা বাজার থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার গেলেই সড়কের ডানপাশে দাঁড়িয়ে থাকা কালী বাড়িটিকে যে কেউ সহজে চিনে নিতে পারবেন। দক্ষিণ দুুয়ারী কালীবাড়ির ভেতর ঢুকলেই চোখে পড়বে রশি দিয়ে বাঁধা অসংখ্য ইট। ইট ঝোলানোর গল্পটাও বেশ চমকপ্রদ। সন্তানহীন রমনীরা কালীবাড়িতে আসেন সন্তান কামনায়, মানত করেন। কোন প্রেমিক তার প্রেমিকাকে পাবার আশায়ও মানত করেন এখানে এসে। মনের ইচ্ছা পূরণ হবার আশায় বেঁধে রেখে যান এক একটি ইট। কয়েকশ’ বছর ধরে চলছে এই একই প্রক্রিয়া। সুপ্রাচীন কালীবাড়িটিকে ঘিরে বহু কল্পকাহিনী প্রচলিত রয়েছে।
ইংরেজ শাসনামলে পর্তুগীজ দস্যুরা ওই গ্রামে আশ্রয় নেয়। অতঃপর দস্যুদের সর্দার রডারিক রডা জোর করে বৃদ্ধ কমলেসের কন্যা মাদলসাকে বিয়ে করেন। রডারিক রডা অন্য ধর্মের মেয়েকে জোরপূর্বক বিয়ে করে এবং সন্যাস জীবন বেছে নেন এবং ওই গ্রামে থেকে যান। দুই ধর্মের দুই জনের প্রেম প্রণয়ের জন্য রডারিক উপাসনার জন্য গদখালী গ্রামের হরহরী নদের পাশে গড়ে তোলেন গড বা কালী মন্দিরটি। কোন একটি স্থানীয় যুদ্ধে রডারিক রডার মৃত্যুর পর মাদলসা তার বাকি জীবন ওই মন্দিরে কাটিয়ে দেন। একসময়ে প্রবাহমান সেই হরিহর নদ আজ আর নেই। তারপরও আছে মেলা আর সাধারণ মানুষের উৎসবে মেতে ওঠা।
Note- ঝিকরগাছায় আমার জন্ম ,বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকেই মন্দিরটিকে দেখেছি। অনেক সংস্কার কাজ করা হয়েছে । আগের অবস্থায় এখন আর নাই। মন্দিরটির প্রতিষ্ঠাকাল 1662 লেখা আছে। যদিও প্রতিষ্ঠাকাল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ নাই কোথাও গ্রন্থে। আঠারো শতকের শেষের দিকে গদখালি এলাকা পরিচিতি পায় ঠগিদের আস্তানা হিসেবে। ইংরেজ কালেক্টরকে বহুবার নাকানি-চুবানি খাইয়েছে তারা। সে ঘটনা আরেকদিন বলবো।
(Hemayei Hossain ওয়াল থেকে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *