যিনি সত্যনিষ্ঠ তিনিই সম্মানীয়…. জনাব শার্জিল ইমাম সেই বিরল গোত্রের ব্যক্তি রূপেই প্রতিভাত হলেন।

অনিমিত্র চক্রবর্তী পশ্চিমবঙ্গ ভারত

After all, he speaks the truth…. and Truth is the Divinity itself…. Janab Sharjeel Imam is definitely point-blank and hence, deserves salutation….সত্য অবিনশ্বর, সত্য অভ্রান্ত,.. সত্যই ঈশ্বর..….. মতপার্থক্য হোক, মতের পরিপন্থীই হোক, যিনি সত্যনিষ্ঠ তিনিই সম্মানীয়…. জনাব শার্জিল ইমাম সেই বিরল গোত্রের ব্যক্তি রূপেই প্রতিভাত হলেন।

এবং এর দ্বারা গত প্রায় ৭ দশক ধরে ভারতীয় রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক সযত্নে লালিত এক অবিসংবাদিত মিথ্যার বিনাশ করলেন। বহু যুগ ধরে লালিত একটি চিন্তা – ১৯৪৭এ দেশভাগ ও স্বাধীনতার পরেও এক বিশাল সংখ্যক ইসলাম-ধর্মালম্বী ভারতবর্ষে থেকে গেলেন কায়েদ – ই-আজম্ জিন্নার দ্বিজাতি তত্ত্বকে কার্যত অস্বীকার করে ও অসাম্প্রদায়িকতার এক আশ্চর্য দৃষ্টান্ত গড়ে। এবং এর একমাত্র কৃতিত্ব সেই “দেদি হামে আজাদি বিনা খড়গ বিনা ঢাল/সবরমতীকে সন্ত নে তো কর দিয়া কামাল্” এর। কিন্তু ব্যাপারটি যে কোনকালেই তা ছিলনা, নেহরুবাদী রাজতন্ত্রের আলোকচ্ছটা, হাঁসজারু ধর্মনিরপেক্ষতা ও একচ্ছত্র আধিপত্যের বিস্তারই যে এই আশ্চর্য তত্ত্বের উত্থান ও প্রতিষ্ঠার একমাত্র কারণ তা অনেকেই বুঝতেন তবে সেই আলোচনাটি বা চিন্তা বৈঠকখানার বাইরে নিয়ে আসতে সাহসে কুলোয়নি।

এবং এই নিষ্ঠুর সত্য কি? প্রথমত, পাকিস্তান আন্দোলন অখণ্ড ভারতবর্ষে বিজয়ী হয়েছিল প্রধানত বাংলা-ভাষী মুসলমানদের জন্যই নতুবা যুক্ত প্রদেশের (বর্তমান উত্তর প্রদেশ) নবাবজাদাদের এই ক্ষুদ্র আন্দোলনের পঞ্চত্বপ্রাপ্তি স্থানীয় অঞ্চলের গলিখুঁজিতেই হত। এবং আদ্যন্ত হিন্দু-বিদ্বেষই এই আন্দোলনে অংশগ্রহণের প্রধান কারণ। কিন্তু ক্ষমতার দ্বন্দ্ব অবশ্যই ছিল। কলকাতার ডাইরেক্ট একশনে হিন্দুরা বিজয়ী হওয়ায় সুরাওয়ার্দিকে পশ্চিমবঙ্গ মুসলিম লীগের সভাপতি করে বাকি নেতৃত্ব ঢাকা পাড়ি দেয়। নোয়াখালীতে যদিও হিন্দু গণহত্যার মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের চেষ্টা হয়েছিল..but the loss of Calcutta couldn’t be indemnified by the Noakhali carnage…

২) দেশভাগ সংগঠিত হয়েছিল মূলত নয়া ভূমির সন্ধানরত মৌলবাদী মুসলমানদের সহিংসতায়, কংগ্রেসের ‘শ্যাম রাখি না কুল রাখি’ স্থবিরতায়, কম্যুনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়ার পাকিস্তান দাবির প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত ও তাত্ত্বিক সহায়তায়, নির্বোধ হিন্দুদের ভাবালুতায় ও ১৬ আগস্ট-জনিত প্রতিক্রিয়ায়। ১৯৪৬-এর অখণ্ড বঙ্গের নির্বাচনই প্রদেশের ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল। সমবেত সংরক্ষিত মুসলিম আসনের ৯৭% এ মুসলিম লীগের আশাতীত  সাফল্য, হিন্দুর ভোটে জয়যুক্ত কংগ্রেস বাঙ্গালী হিন্দুর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার মধ্য দিয়ে তা পূর্ণ হল। হিন্দু মহাসভার স্লোগানগুলিই কংগ্রেস তার নিজস্ব সংগঠন, প্রতিষ্ঠা ও ব্যাপ্তির মাধ্যমে তুলে ধরেছিল ও ভাবালুতায় ভোগা অপদার্থ বাঙ্গালী হিন্দু তাতেই উদ্বেল হয়ে গান্ধী-জওহরলালের দলকেই নিজের ভাগ্য সঁপে দিল। রাডক্লিফের টেবিলে নেহরুর নির্দেশে কার্যত নিশ্চুপ রইলেন বাঙ্গালী হিন্দু প্রতিনিধিদ্বয়। হিন্দু মহাসভা আর কয়েকটি আসন পেলে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ যশোহর, খুলনা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ময়মনসিংহ ও উত্তর বঙ্গের এক বিশাল অংশ রংপুর সমেত ভারতের ঝুলিতেই থাকতো – chicken’s neck নিয়ে বারংবার ব্যতিব্যস্ত হওয়ার প্রয়োজন থাকতো না।

৩) জনাব শার্জিল ইমামের বক্তব্য অনুযায়ী এবং এটিই চরমতম সত্য – ভারতবর্ষে মুসলমানদের যে অংশ থেকে গিয়েছিলেন তা out of compulsion and certainly not of choice…. যদি ক্ষমতায় কুলোত তাহলে হায়দ্রাবাদকে লাহোরের, জুনাগড়কে করাচীর ও কাশ্মীরকে শিয়ালকোটের সাথে জুড়ে দেওয়া হতো।

১৯৪৭-এর দেশভাগ ও তার চরিত্র এখনো অসমাপ্ত – এটিই হল মূল কথা। ওটি temporary adjustment ব্যতীত কিছু নয় – and in need of completion..

প্রশ্ন – হিন্দুরা তা বোঝে কিনা, বোঝার শক্তিও আছে কিনা এবং আকাশ হতে অবতারের খসে পড়ার জন্য অপেক্ষা করছে কিনা। অবশ্য হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে এইসব অবান্তর বিশ্বাস থেকে বিরত থাকতেই বলা হয়েছে কিন্তু আমরা ধর্মশাস্ত্র পড়লাম কবে? হয় কপাল ঠুকে প্রণাম নয়তো মনুর বিরোধিতা – এর মধ্যেই কখন অন্য নিজের জমি দখল করে তা হিন্দু জানতেও পারেনা।

বীরভোগ্যা বসুন্ধরা।

লেখক: অনিমিত্র চক্রবর্তী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *