যেভাবে যোগাযোগ–দক্ষতা বাড়াবেন

অনুপ্রেরণা সচেতনতা

আজকের দিনে যোগাযোগে যে সবচেয়ে দক্ষ সে সবচেয়ে সফল মানুষ হবে এটা শতভাগ নিশ্চিত। আপনি যে পেশাই বেছে নেন না কেন, যোগাযোগ বিষয়ে দক্ষ আপনাকে হতেই হবে। জীবনকে সফল ও সার্থক করতে কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে হবে। আর এ জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হলো ছাত্রজীবন। ১১টি সূত্র ফলো করলে আপনি যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারেন:

১. বিভিন্ন ধরণ সম্পর্কে ধারণা রাখুন:
কেউ ভালো লিখতে পারেন, কেউ ভালো কথা বলতে পারেন, কেউ ভালো শ্রোতা, কেউ আবার দারুণভাবে নিজেকে উপস্থাপন করতে জানেন অর্থাৎ প্রেজেন্টেশন দিতে জানেন। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য সব রকমের যোগাযোগেই নিজেকে সাবলীল ও দক্ষ করে তুলতে হবে। এ ক্ষেত্রে বাংলা ও ইংরেজিতে সাবলীলভাবে বলা ও লেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যখন কোনো কিছু পড়ছেন তখন বুঝে পড়ুন এবং মন দিয়ে শুনুন। আপনি যা বলছেন, তা আরেকজন বুঝতে পারছে কি না, কিংবা আপনি অন্যের কথা বুঝতে পারছেন কি না — বিষয় দুটি খেয়াল রাখুন।

২. পড়তে হবে অনেক:
খুব সরলভাবে বলা যায়, যাঁরা অনেক পড়াশুনা করেন, তাঁরা অনেক বিষয় সম্পর্কে খোঁজ-খবর রাখেন। কাগজের বই বা পত্রিকা হোক, কিংবা হোক ইন্টারনেটে ই-পত্রিকা, ই-সাময়িকী বা পেশা-বিজ্ঞান-ব্যবসাবিষয়ক কোনো পোর্টাল, নিয়মিত চোখ রাখলে সাম্প্রতিক সব বিষয় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। হু, হোয়াট, হোয়্যার, হোয়েন, হোয়াই ও হাউ মানে লেখাটি লেখক কেন লিখেছেন, কার জন্য লিখেছেন, কোন পরিপ্রেক্ষিতে লিখেছেন, কী কী বিষয় তুলে ধরা হয়েছে, কোন কোন বিষয় যুক্ত করা যেতে পারে, আপনি লিখলে কীভাবে লিখতেন—এসব মাথায় দ্রুত এঁকে ফেলতে হবে। যত বেশি পড়বেন, যত জানবেন, কথা বলার সময় আপনি তত আত্মবিশ্বাস পাবেন। জানার ঘাটতি থাকলে বুঝিয়ে বলা ও বক্তব্য শুনে বোঝার ব্যাপারগুলো কঠিন হয়ে পড়ে।

৩. অনুসরণ করতে হবে:
যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য বক্তৃতা, পাবলিক স্পিকিং অথবা নিজের ভাবনা উপস্থাপন করার কৌশল বা প্রেজেন্টেশন কৌশল জানতে হবে। আপনি নিজেকে দক্ষ করে তুলতে চাইলে যেকোনো বিখ্যাত ব্যক্তির কৌশলগুলো সহজে অনুসরণ করতে পারেন। জীবনে কয়েকজনকে মেন্টর করে ফেলুন। তাদেরকে অনুসরণ করতে থাকুন। দেখবেন একসময় নিজেকে বদলে ফেলতে পেরেছেন। ইউটিউবে পৃথিবীখ্যাত ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা আর প্রভাবশালীদের বক্তব্য দেওয়ার কৌশল নিয়ে অনেক ভিডিও দেখতে পাবেন। এ ছাড়া পড়তে পারেন বিভিন্ন লেখকের সাড়া জাগানো বই।

৪. প্রশিক্ষণ নিতে পারেন:
ব্যবসা বা কর্মক্ষেত্রে যোগাযোগ, ই–মেইল লেখা, প্রেজেন্টেশন তৈরির মতো কৌশলগুলো কোর্স থেকে শেখার সুযোগ আছে। অনেক সময় বিভিন্ন সংস্থা ফ্রিতে বা নামমাত্র মূল্যে এসব কোর্স করিয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বড় শেখার জায়গা হচ্ছে অনলাইন।

৫. চর্চা করা শিখতে হবে:
ক্রিকেট খেলোয়াড়দের দেখুন, তাঁরা সব সময় চর্চার মধ্যে থাকেন। প্রায় সমস্ত ব্যাপারগুলো একই রকম। যোগাযোগ–দক্ষতাও প্রতিদিন চর্চার মাধ্যমে বিকশিত হয়। তাই চর্চার দিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। ধরুন, আপনি হয়তো আপনার প্রিয়জনকে একটা ই–মেইল পাঠাচ্ছেন, কিংবা আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলছেন, অথবা ছোট্ট একটাা আড্ডায় একটা বক্তৃতা করার সুযোগ এসেছে এসব ক্ষেত্রেও দক্ষ যোগাযোগের চর্চা করুন। নিজেকে নির্ভুল করার অব্যহত প্রচেষ্টা একটা অসাধারণ জিনিস। এই একটা জিনিসই আপনাকে সফলতার শিখরে নিয়ে যাবে।

৬. ভুল থেকে শিক্ষা নিন:
ভুল থাকবেই। কাজ যারা করে তাদেরই কেবল ভুল হয়। যারা ঘরে বসে বসে ঝিমাচ্ছে তাদের কোনো ভুল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই নেই। কথা বলা কিংবা প্রেজেন্টেশন দেওয়ার সময় ভুল হওয়া একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। ভুল থেকেই শিখতে হবে। ভুল দেখে অন্যরা হাসতে পারে, কটু কথা বলতে পারে—এসব নিয়ে মন খারাপ করলে চলবে না। একটি ডায়েরিতে নোট নেওয়ার মাধ্যমে যেসব ভুল হচ্ছে, সেগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করুন। আরেকটা কথা এক ভুল বারবার করা যাবে না। মনে রাখবেন, বারবার ভুল করার মত সময় আপনার ঘড়িতে নেই।

৭. শরীরী ভাষা বা ‘ননভার্বাল’ যোগাযোগ:
মনে করুণ কোথাও আপনার কয়েকজন বসে আছেন। শুধু আপনিই বলে যাচ্ছেন আর অন্যরা শুনেই যাচ্ছে– এমনটা করবেন না। আপনি যা লিখছেন বা বলছেন সেসব অন্যরা বুঝতে পারছে কি না, তা আপনাকে জানতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝতে হবে, অন্যের শরীরী ভাষা পড়তে জানতে হবে।

ধরুন, আপনি কোনো সভায় একটি আইডিয়া বা ধারণা উপস্থাপন করছেন। শ্রোতার শরীরী ভাষা থেকেই আপনি বুঝতে পারবেন, তিনি আপনার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন কি না কিংবা বুঝতে পারছেন কি না। মুখের হাসি, চোখে চোখে তাকানো (আই কন্টাক্ট), হাতের অবস্থান কিংবা নড়াচড়া—এসবও গুরুত্বপূর্ণ। শুধু কথা নয়, শরীরী ভাষাও সফল যোগাযোগ স্থাপনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

৮. নিজেকে জানুন:
প্রবাদে বলা হয়—নো দাইসেলফ, নিজেকে জানো। নিজের ব্যক্তিত্ব, নিজের শক্তি বা দুর্বলতা, যোগ্যতা, কোন কোন বিষয়ে দক্ষ, এসব বিষয় জানতে হবে। যোগাযোগ দক্ষতা একদিনে বেড়ে যায় না। যোগাযোগ–দক্ষতা আস্তে ধীরে বাড়ে, আপনি শুধু নিজের ব্যক্তিত্ব বিকাশের দিকে মনোযোগী হন। ইতিবাচক মনোভাব রাখুন, যেকোনো পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেওয়ার কৌশল জানুন, নিজের শক্তির জায়গাগুলোকে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার আশ্চর্যজনক দক্ষতা সফলতা এনে দেবে।

৯. সফলদের পরামর্শ নিন:
সফল মানুষ, ব্যবসায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানের পেশাজীবীর পরামর্শ আপনাকে খুব দ্রুত দক্ষ হতে সহায়তা করবে। আপনি যে ক্ষেত্রে পেশা গড়তে চান কিংবা যে বিষয়ে পড়ছেন, সেসব পেশাজীবীদের থেকে পরামর্শ নিন। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের জন্য কোচ বা মেন্টর নির্বাচন করে তাঁর কাছ থেকে হাতে–কলমে শেখার চেষ্টা করুন। ‘কথা বলা আবার শেখার কী আছে’—অনুগ্রহ করে এমনটা ভাববেন না। মনে রাখবেন, সবাই সবকিছু কেবল পৃথিবী থেকে শিখে নেয়, জন্মের সময় সাথে নিয়ে জন্মে না।

১০. নেতৃত্ব বিকাশ করুন:
নেতা হতে গেলে আপনাপকে একটু আলাদা, তুলনামূলক সঠিক এবং যোগ্য-দক্ষ হতে হয়। কোনো দলের নেতা হওয়ার পর কেউ যোগাযোগ–দক্ষতা প্রকাশ করে না। কাজের মাধ্যমেই তাকে নেতৃত্বের বিকাশ ঘটাতে হয়। যোগাযোগ–দক্ষতা বিকাশের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষানবিশ থেকে প্রতিষ্ঠানের বড় কর্মকর্তা হতে পারেন। আবার একজন দলের সাধারণ সদস্য থেকে হয়ে যেতে পারেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও নেতৃত্বের জায়গায়।

১১. সুযোগকে কাজে লাগান:
কথা বলা, লেখা বা নিজের ভাবনা উপস্থাপনের ক্ষেত্রে আপনি যদি খুব আত্মবিশ্বাসী না-ও হন, তবু এসবের কোনো সুযোগ হাতছাড়া করবেন না। বিতর্ক, বিজনেস কেস কম্পিটিশন, রচনা প্রতিযোগিতা, বক্তৃতা—এসব থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন না। বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলুন।

তথ্যসূত্র:

টেন মিনিট স্কুল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *