রংপুর বিভাগের কোন এক জেলার একটা ঘটনা বলি।

Uncategorized
রংপুর বিভাগের কোন এক জেলার একটা ঘটনা বলি। 
দিন কয়েক আগে এক মহিলা আমার অফিসে এসে কেঁদে ফেললেন। বললেন, ‘স্যার আমাকে বাঁচান’। জানতে চাইলাম কি হয়েছে। তিনি বললেন, তার মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। মেয়েকে উদ্ধারে সহায়তা চান তিনি। 
ধরা যাক, মেয়েটির নাম শান্তি রানী শীল। 
আমার জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি জানালেন, লিমন হোসেন নামের একটি ছেলে তাকে অপহরণ করেছে এবং এখন ফোন করে হুমকি দিচ্ছে। 
বিস্তারিত জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন, লিমন হোসেন তার পাশের গ্রামের ছেলে। রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। তার বাড়িতে কয়েকদিন কাজ করতে এসেছিল। তখন মেয়ের সাথে পরিচয় হয়ে থাকতে পারে। আমি বিষ্মিত হলাম! এটিতো অপহরণ নয়, দুর্নিবার, আত্মঘাতী কামের প্রভাবে মোহগ্রস্ততা! এরকমই ঘটছে সর্বত্র! 
মেয়েকে উদ্ধার করার আশ্বাস পেয়ে ভদ্রমহিলা চলে গেলেন। 
ত্রিশ ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে মেয়েকে উদ্ধার করে আনার ব্যবস্থা করা হল।
লিমন হোসেন প্রায় দশ বছর আগে একটি বিয়ে করেছিল, তারপর ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। কয়েকবছর আগে সে আরেকটি বিয়ে করেছে। শান্তি রানী তার তৃতীয় স্ত্রী। গুনধর ছেলেটি জুয়া খেলে এবং মাদকাসক্ত। লিমনের সাথে শান্তি রানীর দুই বছর ধরে সম্পর্ক।
তাকে অনেক বুঝানো হল, আমি ফোনে তার সাথে দীর্ঘ সময় কথা বললাম। একটি নেশাগ্রস্থ, জুয়ারী ছেলের তৃতীয় স্ত্রী হিসাবে এটি যে তার জন্য আত্মঘাতী, বললাম। মেয়েটি অত্যন্ত নম্র এবং ভদ্র ভাষায় আমার প্রত্যেকটি কথার জবাব দিল, কিন্তু  তার অবস্থানে সে অনড়। সবকিছু জেনেও সে ঐ ছেলের সাথেই যাবে।
তীব্র কষ্ট পাওয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলনা! 
প্রতিনিয়তই এরকম ঘটনা ঘটছে। এরকম অজস্র হৃদয়বিদারক কাহিনীর মুখোমুখি হতে হতে আমি ক্লান্ত হয়ে পড়েছি।
অনেকের কাছেই বিষয়টি তুচ্ছ, কিন্তু অনেক মা বাবার জন্যই এমন ঘটনা মৃত্যুতুল্য। সেই সব মা বাবার প্রতি অনুরোধ, আপনার সন্তানকে পড়ালেখা শিখান, নাচ শিখান, গান শিখান, উদারতা শিখান, সমস্যা নেই। কিন্তু নিজের ভাল মন্দ বুঝার শিক্ষাটিও দিন। ছোটবেলা থেকেই নীতিবোধ, ভাল, মন্দ, প্রেম, প্রতারণা, বন্ধু, বন্ধুবেশী প্রতারক এসব সম্পর্কে সঠিক ধারনা দিন।
তাকে শিখান যে, মুগ্ধ করা উদার সমুদ্রের সৈকতে চোরাবালিও থাকে, যেখানে পড়ে গেলে মানুষ তলিয়ে যায়। 
মায়াহরিণের আকর্ষণ সীতার জীবনে কি ভয়াবহতা নিয়ে এসেছিল, আপনার সন্তানকে সে শিক্ষা দিন।
 ছোটবেলা থেকেই আপনার সন্তানের চারপাশে লক্ষণরেখা টেনে দিন। সে রেখার বাইরে যেন পা না দেয়, সেটি শিখান। কুসুমেও কীট থাকে, দংশনে মৃত্যুও হতে পারে, আপনার সন্তানকে শিখান। 
অতিরিক্ত স্নেহ বা অতিরিক্ত শাসন, কোনটাই সন্তানের জন্য ভাল নয়। নিজের ব্যাস্ততার মাঝেও সন্তানের জন্য কিছুটা সময় দিন।
 
নরকের দ্বারস্বরূপ কাম, ক্রোধ এবং লোভ যেন আপনাকে বা আপনার সন্তানকে গ্রাস করতে না পারে।
নিজের অতিরিক্ত উদারতায়, মহানুভবতায়, অসাবধানতায় বা অন্য কোন কারনে যেন আপনার সন্তানের জীবন বিপন্ন না হয়, আপনার সংসারের সুখ যেন বুকভাঙ্গা আর্তনাদে বিলীন না হয়, সে জন্যই এ লেখা।
সন্তান এবং আপনজনদেরকে নিয়ে ভাল থাকুন। 
শুভ কামনা নিরন্তর!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *