রক্তপাত করার জন্য মগজ খুব আবশ্যক হয় না, তা এড়িয়ে যেতেই আবশ্যক হয়।

Uncategorized

** রক্তপাত করার জন্য মগজ খুব আবশ্যক হয় না, তা এড়িয়ে যেতেই আবশ্যক হয়।**

বার্মাতে ক্যু coup হয়েছে। প্রতিবেশীদের জন্য শিক্ষার অনেক কিছুই আছে। যদি শিক্ষার প্রতি আদৌ কোনো আকর্ষণ থেকে থাকে। এ শিক্ষা, বাস্তবের কষ্টিপাথরে যাচাই  হওয়া রাজনৈতিক শিক্ষা।  এ শিক্ষা, কি করে ধৈর্য ধারণ করতে হয়। এ শিক্ষা, ধীর স্থির হয়ে কি করে ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হয়। এ শিক্ষা, সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার লোভকে নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা, লোভের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়ার শিক্ষা নয়।

একটি দেশের নির্বাচিত সরকারকে বন্দী করে দেশের ক্ষমতা গ্রহণ করল সেনাবাহিনী, অথচ গোটা কুড়ি মানুষের মৃত্যূ হলো না। কি আশ্চর্য না? রক্তপাতের দেখা নেই। সুতরাং আসলে নাটক কি না, তা-ও কাউকে ভাবাচ্ছে। সেই মানুষদের নিকট প্রত্যাশিত ছিল যে, দেশের সর্বত্র আগুন জ্বলবে। আহত নিহতের সংবাদ আসবে, পত্রিকাতে প্রতি মিনিট ৫/১০ পর পর আপডেট আসতেই থাকবে। এসবকে ঘিরে অনেকেই নানা রসালো মন্তব্য করবে, একপ্রকারের  বিনোদনের মতো। সবই মাটি।

অনেক দেশেই এত নীরবতা ভাবা যায় না, যদি সত্যি সত্যি ক্যু হত। আং সুচি, যে নেত্রীর জীবনের ২১ বছরের মধ্যে ১৫-টি বছর গৃহবন্দী হিসেবে কেটেছে, তাঁর আর যাই হোক অন্ততঃ ধৈর্য ধারণ নিয়ে নতুন করে বাল্য-শিক্ষার আবশ্যকতা নেই। চরম সংকটে-ও দেশের মঙ্গল ও দেশের ঐক্য, দুটো বিষয়কে একত্রে চিন্তা করতে হচ্ছে। তিনি জানেন যে, মানুষকে বিদ্রোহ করার জন্য নির্দেশনা দিলে তা অচিরেই নিয়ন্ত্রণের বাহিরে চলে যাবে। আবার হঠাৎ করেই তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা সম্ভব না-ও হতে পারে।

এই তো প্রথম নয়। এরকমের পরিস্থতির মধ্যে দিয়ে তিন দশকের বেশী পার করে দিলেন।নোবেল তো এমনিতে দেয়া হয়নি। রক্তপাত চাইলে বহু আগেই তা সম্ভব হত। অনেক দেশের পরিস্থিতি বিবেচনা করলেই, সহজে বোধগম্য হবে।  ইরাক সরকার ( সাদ্দাম হোসেন) যদি তার প্রতিপক্ষদের সাথে আলাপ-আলোচনা করেও দেশটাকে চালাতে সক্ষম হত, তথাপি আজ যে অবস্থানে ইরাক দাঁড়িয়ে আছে তার চেয়ে শতগুণ ভালো থাকত।   সিরিয়াতে  আসাদ সরকারের প্রতিপক্ষরা মিলে বিদ্রোহ চালাতে গিয়ে আজ কি অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে দেশ-টি? গোটা মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে সিরিয়ার নারীরা বেশ্যাবৃত্তিতে লিপ্ত হয়েছে। যদিও আসাদ এখনও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে আছে। কিন্তু সিরিয়া একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র। আগামী ৫০ বছরে-ও মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না।

শুরু থেকেই যদি আং সুচি, ইরাক সিরিয়ার সরকার বিরোধীদের মতো আচরণ করতেন, আজ কোথায় থাকত বার্মা? একটি গৃহযুদ্ধ হয়ত চলমান থাকত। দেশ ক-ভাগে ভাগ হত কেউ জানে না। এর দায়-ও সুচির উপর অনেকটা বর্তাত।

তাঁর এই ত্যাগ-কে মূল্যায়ন করা সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ঐ যারা জন্মের পর থেকে ভায়োল্যান্স দেখেই বড় হয়েছে, যাদের মগজের অবদান কম থাকায়, পেশীর ব্যবহারে-ই অধিক সাবলীল বোধ করে তারা মূল্যায়ন করতে পারবে না।  রক্তপাত করার জন্য মগজ খুব আবশ্যক হয় না, তা এড়িয়ে যেতেই আবশ্যক হয়। অনেকে দেশেই প্রচুর রক্তপাত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু কে কে নেতৃত্বে আছে, তা-ও গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনো একপক্ষে-ও যদি কিছু দূরদর্শী মানুষ নেতৃত্বে থাকে তথাপি রক্তপাতকে এড়িয়ে যাওয়া কখনও কখনও সম্ভব হয়। আং সুচি, এখনও সেই আদর্শ ও প্রমাণ।

অসিত রায়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *