রবীন্দ্রনাথের গানে জীবন দর্শন আছে সেটা উপলব্ধির, উপভোগের নয়।

Blog প্রবন্ধ রবীন্দ্রনাথ সাহিত্য
রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনতে গিয়ে দেখলাম সবাই খুব গম্ভীর। আমার এমন দৃশ্য দেখলে হাসি পায়। ফিক করে হেসে দিয়ে স্ত্রী’কে কিছু বলছি দেখি কোলকাতার এক দিদি বললেন ” এই যে ছুনুন? হ্যা হ্যা দাদা, আপনাকেই বলছি, ছুনুন, আপনার ভাল না লাগলে প্লিজ চলে যান’। 
আমার তো ভাল লাগছে দিদি? 
তাহলে মুখ বন্ধ করে একটু ছুনুন প্লিজ। 
শুধুই কি রবীন্দ্রনাথ ?  অতুল প্রসাদ , ডিএল রায় পঞ্চ কবির গান থেকে শুরু করে হেমন্ত মান্না সবার গানের মধ্যেই বাঙালির যত সিরিয়াসনেস! 
হারমোনিয়াম ধরে মুখ বাঁকিয়ে চোখ বুজে গায়কদের গান তবুও মানায়, কিন্তু সুন্দরী গায়িকাদের সম্পূর্ণ অবয়বে সে যে কি ভয়ানক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয় সে সম্পর্কে বিস্তারিত বলার মনে হয় দরকার নেই। 

আমার ছোট্ট ছেলেকে নিয়ে বহুদিন আগে একদিন এক অনুষ্ঠানে গান শুনতে গিয়েছি , শিল্পীর মুখভঙ্গি অবলোকন করে আমার ছেলে বলছে …বাবা ওর কি হয়েছে, ও এমন করে কাঁদছে কেন? 
আমি বললাম কাঁদছে না বাবা ও আসলে গান গাইছে মানে ‘শি ইজ সিংগিং এ’ টেগর সং।  
এর পরের ঘটনা আর না বলাই ভাল।  
পৃথিবীর বহু দেশের লোকজনের সঙ্গীত অনুষ্ঠানে হাত পা ছুড়ে আনন্দ স্ফুর্তির মাধ্যমে শ্রোতাদের গান উপভোগ করতে দেখি কিন্তু বাঙালিদের কিছু কিছু গান কখনো কখনো আর্তনাদের মতো শোনায় ।
রবীন্দ্রনাথের গানে জীবন দর্শন আছে সেটা উপলব্ধির উপভোগের নয়। কিন্তু উপলব্ধি হলেই কেন সেখানে বিনোদন থাকবে না , উপভোগ থাকবে না , বিষয়টি আমার বোধগম্য নয়। অমিতাভ বচ্চনের কন্ঠে টেগর সঙ্গীত শুনে আমার কাছে খুব উপভোগের মনে হয়েছিল, সুরের পরিবর্তন পরিবর্ধন করলেই অনেক সময় কিছু  রবীন্দ্র ভক্তরা মার মার কাট কাট করে দৌড়ে আসেন। আমি  এইসব মান্ধাত্মা মানসিকতার রবীন্দ্রনাথের সোল এজেন্টদের দেখলে চরম বিরক্ত হই। রবীন্দ্রনাথের গান আমি সবসময়ই উপভোগ করি তবে সেটা পেঁচার মত মুখ গম্ভীর করে নয় , নির্মল আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *