রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ-দুর্গ বর্তমানে বাংলাদেশের মাগুরা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মধুমতী নদীর তীরে

Uncategorized
রাজা সীতারাম রায়ের প্রাসাদ-দুর্গ বর্তমানে বাংলাদেশের মাগুরা সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে মধুমতী নদীর তীরের একটি প্রত্নস্থান যা স্থানীয়ভাবে রাজবাড়ী হিসাবে পরিচিত, যা সপ্তদশ-অষ্টদশ শতাব্দীতে এখানে পত্তন হওয়া উন্নত এক জনপদের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মুর্শিদাবাদের নবাব সরকারের একজন আমলা সীতারাম রায় এ প্রাসাদ-দুর্গটি নির্মাণ করেছেন, যিনি আমলা থেকে জমিদারি এবং পরে স্বীয় প্রতিভাবলে রাজা উপাধি লাভ করেন।
উপাধি লাভের পর সীতারাম রায় রাজার মতোই রাজ্য বিস্তার করতে থাকেন এবং সেনাবল বৃদ্ধি করে তিনি পার্শ্ববর্তী জমিদারদের ভূ-সম্পত্তি দখন করেন। তিনি নবাব সরকারের রাজস্ব প্রদান বন্ধ করে স্বাধীন, সার্বভৌম রাজার মতোই জমিদারিতে প্রবর্তন করেন নিজস্ব শাসনব্যবস্থা। জমিদারি সুরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে সীতারাম এ স্থানটিতে গড়ে তোলেন দুর্ভেদ্য দুর্গ, কাঁচারিবাড়ি, পরিখা পরিবেষ্টিত রাজপ্রাসাদ, পূজার্চনার জন্য দেবালয় নির্মাণ, জনহিতার্থে খনন করেন বেশ কিছু বিশালাকার জলাশয়। মাগুরা জেলার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে তার নামে কিছু এলাকা এবং পুকুর।

তার বাড়ির আশেপাশের বেশিরভাগ জায়গা সাধারণের দখলে চলে গেছে ও কিছু সরকারি স্থাপনা হিসেবে ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। আশার কথা বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এটি দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে। বাড়ির একটা অংশ প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে অন্য অংশ যেটি অক্ষত আছে সেটিও মাটির নিচে অনেকটা ডেবে গেছে। বাড়ির সামনে একটি শিব মন্দির যা এখোনো সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় আছে!
বাংলার কয়েকজন বিখ্যাত জমিদারের ইতিহাস আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম মাগুরার রাজা সীতারাম রায়। অর্থে–বিত্তে তিনি ছিলেন বেশ বড় মাপের জমিদার। সে কারণেই মানুষ তাঁকে রাজা ডাকে আর তাঁর বাড়িকে রাজবাড়ি। জানা যায়, রাজা সীতারাম ১৬৯৭-৯৮ সালের দিকে মহম্মদপুরে জমিদারির পত্তন করেন। তাঁর জমিদারি পাবনা জেলার দক্ষিণভাগ থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত এবং বরিশাল জেলার মধ্যভাগ থেকে নদীয়া জেলার পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল বলে জানা যায়।
বিস্তীর্ণ এই এলাকার জমিদার সীতারাম অল্পদিনের মধ্যে প্রবল প্রতাপশালী হয়ে ওঠেন। তিনি মহম্মদপুরে একটি দুর্গ তৈরি করেন বলেও জনশ্রুতি আছে। এ ছাড়া তিনি একাধিক প্রাসাদ, অসংখ্য মন্দির আর পানীয় জলের কষ্ট দূর করতে অনেকগুলো দিঘি খনন করেছিলেন। এ রকম একটি দিঘির নাম কৃষ্ণসাগর। এখনো এই দিঘির পানি খুবই পরিষ্কার। আর একটি দিঘির নাম রামসাগর। এর আয়তন ২০০ বিঘা।
সীতারামের খনন করা দিঘিগুলোর মধ্যে দুধসাগর অন্যতম। এ দিঘির তলদেশ পর্যন্ত পাকা বলে জনশ্রুতি আছে, এটি সীতারামের ধনাগার হিসেবে ব্যবহৃত হতো। দুর্গ এলাকায় প্রবেশের একটু আগে আরও দুটি পুকুর আছে। দুর্গের উত্তর দিকেরটি চুনাপুকুর আর দক্ষিণেরটি পদ্মপুকুর নামে পরিচিত। এই দিঘিগুলো সাধারণ মানুষের পানীয় জলের কষ্ট দূর করেছিল সে সময়। সীতারাম রায়ের বানানো ধুলজোড়া দেবালয় ১৬৮৮ সালে এবং কারুকর্যখচিত দশভুজার মন্দির নির্মিত হয় ১৬৯৯ সালে।
জনশ্রুতি আছে, রাজা সীতারামের বাবা ঘোড়ায় চড়ে যাওয়ার পথে ঘোড়ার পা লক্ষ্মীনারায়ণ শিলাখণ্ডে বেঁধে যায়। এ জন্য সীতারাম রায় ১৭০৪ সালে লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির নির্মাণ করেন। দোল মঞ্চ, রামচন্দ্র মন্দির ও দুধসাগরের পশ্চিমে যে দোতলা বাড়িটি এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেটি ছিল সীতারামের বাসভবন। দুধসাগরের পূর্বে খোলা প্রান্তরে সীতারাম রায়ের বানানো তিন স্তরবিশিষ্ট দোল মঞ্চ আছে। তার পাশে রামচন্দ্র বিগ্রহ বাটি অবস্থিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *