রামকৃষ্ণ মিশনের যীশুপুজো নিয়ে অযথা চিল্লাচিল্লি করবেন না।
রামকৃষ্ণ মিশনের অনেক দোষ আছে। তা সে বিবেকানন্দের বীর রস ভুলে নিজেদের কোচিং সেন্টার বানিয়ে ফেলা হোক কিংবা যে বিবেকানন্দ কলকাতায় প্লেগ নিরাময়ের খরচ মেটাতে আস্ত মঠ বিক্রি করে দিতে চেয়েছিল সেই মঠকেই সিপিএমের থাবা থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের অহিন্দু ঘোষণা করা হোক কিংবা অহেতুক সেকুলারিজম দেখানো হোক বা ইত্যাদি ইত্যাদি…………
কিন্তু যীশু পুজো খোদ বিবেকানন্দের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল। এতে মিশনের বর্তমান নেতৃত্বের কোনো হাত নেই।
আর সেই পুজো শুরু হয়েছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের পাপেই।
বিবেকানন্দ যখন মিশনারিদের আগ্রাসন থেকে ভারতকে বাঁচানোর জন্য আর হিন্দুদের ভেতর নবজাগরণ আনার জন্যে হন্যে হয়ে সারা ভারত ঘুরে বেড়াচ্ছেন‚ তখন মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া আর কেউ তাকে তার স্বপ্নপূরণের জন্যে অর্থসাহায্য করেনি। সারা ভারতে কোটি কোটি হিন্দু‚ বিলাস ব্যাসনের জন্য তাদের অঢেল টাকা রয়েছে‚ রাজনীতি করার জন্য টাকা রয়েছে‚ ব্রিটিশের মন যুগিয়ে উপাধি হাসিলের জন্য টাকা রয়েছে‚ কিন্তু নিজের সম্প্রদায়ের উন্নতির জন্য কারও কাছে টাকা নেই।
বীতস্রদ্ধ বিবেকানন্দ ভারত ছেড়ে চলে গেলেন আমেরিকা। কেন? না‚ স্রেফ হিন্দু জাগরণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের জন্য। বিবেকানন্দের ঐসময়ের চিঠি গুলো পড়ে দেখুন। বিশেষত আলসিঙ্গাকে পাঠানো চিঠিগুলো দেখুন‚ কি পরিমাণ বীতস্রদ্ধ হয়ে পড়েছিলেন তিনি ভারতীয়দের এই স্বভাবের উপর।
আর বাঙ্গালীরা? ছোঃ! বাঙ্গালীরা বিবেকানন্দের সাথে যা করেছে তা যেন শত্রুর সাথেও তার জাতি না করে। সন্ন্যাসীদের নিয়ে নোংরা রসিকতা হোক বা মঠের উপর প্রমোদ কর চাপানো হোক (যদিও এটা ব্রিটিশরা করেছিল বাট সাধারণ বাঙ্গালী প্রতিবাদও করেনি) বা বিবেকানন্দের শরীর খারাপের সময় ডাক্তারের মাত্রাধিক ফীজ আদায় হোক বা বিদেশাগত হওয়াতে দক্ষিনেশ্বরে বিবেকানন্দকে ঢুকতে না দেওয়া হোক বা তাঁর মৃত্যুর পর সংবাদপত্রগুলোর নির্মম নৈঃশব্দ হোক – কি না বাঙ্গালী করেছে তার সাথে! এমনকি বিবেকানন্দের জয়জয়কার হওয়ার আগে‚ আমেরিকায় যখন তিনি মিশনারি আর ব্রাহ্মদের প্রবল কুৎসার শিকার হচ্ছেন‚ তখনও কলকাতার কোনো নিউজপেপার বিবেকানন্দকে নিয়ে দুই লাইন লেখেনি‚ যা দেখিয়ে তিনি আমেরিকাবাসীদের বলতে পারতেন যে দেখো দেখো আমি ঠগ নই‚ জোচ্চোর নই। আমার দেশের লোকেরা আমায় চেনে। না এমন কিছুই ঘটেনি। চিঠিতে এই নিয়ে দুঃখ প্রকাশও করেছেন তিনি।
এমনকি তার আমেরিকা যাত্রার খরচ‚ এমনকি বিবেকানন্দের বৃদ্ধা মায়ের ভরনপোষনের জন্য টাকা পর্যন্ত এসেছিল সুদূর রাজস্থান থেকে। আজ আমরা বাঙ্গালীরা যাদের মাওড়া বলে গাল দি‚ নিজেদের সুভাষের জাত‚ বিবেকানন্দের জাত বলে গর্ব করে বেড়াই। বিবেকানন্দ নিজের লক্ষ্যে সফল না হলে কোত্থেকে আসতেন সুভাষ আর কোত্থেকে আসতেন অগ্নিযুগের আগুনখেকো বিপ্লবীরা? এমনকি আজকের RSS ও RSS হত না যদি না বিবেকানন্দ আসতেন। সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গুরুজী গোলওয়ালকারেরও দীর্ঘদিন গ্রুমিং হয়েছিল রামকৃষ্ণ মিশনের এক সন্ন্যাসী স্বামী অখন্ডানন্দের নেতৃত্বে! আর আজ সঙ্ঘ যে দুনিয়া জোড়া বিস্তার লাভ করেছে‚ সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকরা ভারত শাসন করছে – তার ভবিষ্যৎ রূপরেখাও গুরুজীরই তৈরী।
আর বিবেকানন্দকে সেই মঠ মিশন তৈরির টাকা কারা দিয়েছিল? দিয়েছিল আমেরিকার কিছু যীশু-পুজারি‚ খ্রিস্টান।
আর তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বশঃতই মিশনে যীশু পুজো শুরু করেছিলেন বিবেকানন্দ।
যদি মিশনের যীশু পুজো দেখে রাগ হয় তাহলে সেই রাগ আমরা নিজেদের অপদার্থ পূর্বপুরুষদের উপরে ঝাড়ব। রামকৃষ্ণ মিশনকে অযথা খিস্তাবো না। কারণ দোষটা একরকম আমাদেরই। পূর্বপুরুষের পাপের ভাগ তো কিছুটা হলেও বহন করতে হয়। নাকি? +souvik dutta