রামকৃষ্ণ মিশন ও ইস্কন দ্বৈরথে বিপর্যস্ত হিন্দু

Uncategorized

রামকৃষ্ণ মিশন ও ইস্কন দ্বৈরথে বিপর্যস্ত হিন্দু

সুখস্য মূলং ধর্ম।।
ধর্মস্য মূলং অর্থ।।
অর্থস্য মূলং রাজ্যম্।।

শাস্ত্রাৎ, তর্ক, যুক্তি খন্ডন ও প্রতিস্থাপন সনাতন আর্য হিন্দু সভ্যতার এক চিরন্তন ঐতিহ্য। অনাদি অনন্তকাল হতে তার প্রবাহ চলেছে। যখন ইতিহাস ও তা রচনা করার বোধ ছিল মনের অগোচরে, প্রাচীন ভারতের বিদেহ রাজ্যে (ভিন্নমতে মিথিলার) রাজা জনকেদ রাজসভায় রাজসূয় যজ্ঞের অব্যবহিত পর্বে ঋষি যাজ্ঞবল্ক্যের সাথে ঋষিণী গার্গীর (মহর্ষি গর্গের বংশজাত ও ঋষি বচক্নুর কন্যা) যে শাস্ত্রাৎ হয় তা আর্য সভ্যতা ও তার জ্ঞানভান্ডারের শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করে। সমাজ তা শ্রবণ ও দর্শন করে হয় ধন্য। আজও সেই বার্তালাপ/শাস্ত্রাৎ সমাজ ও শাস্ত্রবেত্তারা স্মরণ করেন সশ্রদ্ধচিত্তে। ন্যায়শাস্ত্র চর্চার আধার বঙ্গদেশেও পান্ডিত্যপূর্ণ তর্ক হয়েছে অসংখ্য।… রাজা রামমোহন রায় ও শ্রী সুব্রহ্মণ্য শাস্ত্রীর মধ্যে, শ্রী ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও শ্রীযুক্ত ব্রজনাথ বিদ্যারত্ন ভট্টাচার্যের মধ্যে তর্ক ইতিহাসে সুবিদিত।.. কিন্তু কুতর্ক!!? তা হলে কি হয়? সমাজের মধ্যে বিহ্বলতার সৃষ্টি হয়। যথার্থ নেতৃত্বগুণের অভাবে সমাজ যবনের চক্রান্তের বশীভূত হয়।

সম্প্রতি ইস্কনের এক প্রাজ্ঞ সন্ন্যাসীর জনসমক্ষে স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে অশোভন উক্তি ও তার বিরুদ্ধে শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ-অনুরাগীদের সমস্বরে প্রতিবাদে সেই আশঙ্কাই ঘনীভূত হয়েছে।.. পরস্পর বিরোধী দুভাগ এবং সমস্যার শেষ না হলে তা শতভাগে বিভক্ত হবে। এটি অবশ্যম্ভাবী এবং যুগ যুগ ধরে হিন্দু সমাজের দীনতা, পলায়নপ্রবণতা তার শ্রেষ্ঠ সাক্ষী। যে সমস্যার সমাধান হতে পারে গৃহের অভ্যন্তরে তা রাজপথে উপস্থিত। একে অপরের কুৎসায় মেতে (যা দুপক্ষের ভক্তরা করবেন শতগুণ বেশি) দীর্ণ-জীর্ণ-বিভক্ত হিন্দু সমাজ ধাবমান হবে রসাতলের দিকে ও তার পর্যাপ্ত সুযোগ নেবে ONE-GOD Religion র উপাসকেরা। বঙ্গভূমির বিগত ১, ০০০ বছরের ইতিহাস তার স্বাক্ষী।.. কিন্তু এইবার অবস্থা কিঞ্চিৎ পৃথক – হিন্দু গৃহস্থরা এইবার আসরে উপস্থিত।

করাচীতে রামকৃষ্ণ মিশন ধ্বংস করে দেওয়ায় স্বামী রঙ্গনাথানন্দজি আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতে। একইসময় ঢাকার ধামরাইতে যখন বিখ্যাত রথটি ও সংলগ্ন বহু বৈষ্ণব মন্দির ধ্বংস করা হয় তাঁরা সকলেই আশ্রয় নিয়েছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। দুজনের পক্ষে একটাই কারণ – ভারতবর্ষ সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু দ্বারা চালিত। কোন পক্ষ ফিরে যাওয়ার চেষ্টামাত্র করেছিলেন? উত্তরঃ না।.. বিগত ৮০ বছরে দুই পাকিস্তানে (পূর্ব ও পশ্চিম) যে অসংখ্য বৈষ্ণব ও শাক্ত মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে সেই প্রসঙ্গে এই দুই জগদ্বিখ্যাত হিন্দু আশ্রম, মিশনের বক্তব্য কি? পাকিস্তানের পাঞ্জাবে যখন মহাপবিত্র কাটসরাজ মন্দির অপবিত্র করা হয় বারংবার, ঢাকাতে রমনা কালী বাড়ি ধ্বংস করা হয়, চট্টগ্রামে সীতাকুন্ডকে অপবিত্র করা হয়, ঢাকেশ্বরী দুর্গা মন্দিরের গুরুত্ব হরণ করা হয়, লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দেবোত্তর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত,লক্ষ লক্ষ হিন্দুর প্রাণহানি হয় তখন হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনগুলি নীরব থাকে কেন? তাঁদের সজীবতা কি শুধুমাত্র প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষণে, ত্রিপল টাঙানো আর বিপর্যস্ত মানুষের সামনে অন্ন তুলে দিতে? কেন হিন্দু সমাজ যুগোপযোগী হতে চরম ব্যর্থ হল, যথোপযুক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার স্থানে কুল-মান-গোত্র, স্বীয় বংশের পবিত্র ভূমি জলাঞ্জলি দিয়ে পলায়নে প্রবৃত্ত হল? এর উত্তর কি? দুই বঙ্গের মধ্যে পূর্ব বঙ্গে হিন্দুর উপর অকথ্য অত্যাচারের প্রতিবাদে ধর্মীয় সংগঠনগুলি হিরণ্ময় নীরবতা পালন করে কেন? অজাতশত্রু রূপ ধারণ করে নিজ অস্তিত্ব রক্ষার্থে? কটি হিন্দু গণহত্যার বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মীয় সংগঠনগুলি সক্রিয় হয়েছে তার হিসেবে দেবে আজ সন্ন্যাসী সমাজ? ১৯৪৬ সালে রামকৃষ্ণ মিশনের পূজ্যপাদ প্রেসিডেন্ট মহারাজ স্বামী মাধবানন্দের নেতৃত্বে যে সক্রিয়তা দেখা গিয়েছিল তার দ্বিতীয় উদাহরণ কিছু রয়েছে? বৃহত্তম আন্তর্জাতিক সংগঠন গড়ে ইস্কন হিন্দুর কোন উপকার এসেছে আজ পর্যন্ত? কিন্তু অকথ্য আক্রমণে যে বিহ্বলতা সৃষ্টি হয় তার উপুযুক্ত সুযোগ নেয় অপর পক্ষ তার উদাহরণে কি ঘাটতি রয়েছে? মধ্যযুগ থেকে আজ পর্যন্ত সুফিবাদ কিভাবে হিন্দু সমাজে ভাঙ্গন ধরিয়েছে তা কি পুনরায় উল্লেখ করতে হবে? একদিকে “মা মা” করে গগনবিদারী চিৎকার, অন্যদিকে কীর্তনের খোলে বোল তো হিন্দু সমাজকে রক্ষা করতে চরম ব্যর্থ আজ। আর আজ সেই আক্রান্ত, অস্তিত্বরক্ষার সঙ্কটে পর্যদুস্ত হিন্দু বাঙ্গালীর Masculine Identity র মূর্ত প্রতীক স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করা হচ্ছে?

ইস্কনের এহেন নিকৃষ্ট বক্তব্য তো নতুন নয়। পূর্বেও শ্রীল প্রভুপাদের পক্ষ থেকে এই প্রকার বক্তব্য শোনা গেছে। অপরদিকে কলকাতায় স্বামী বিবেকানন্দের বাসস্থানে দেখা গেছে কাবার চিত্র। মুর্শিদাবাদের সারগাছি রামকৃষ মিশন আশ্রমে রয়েছে ‘হাদিস’ হতে উক্তি। ‘স্বধর্মে নিধনং শ্রেয় পরোধর্ম ভয়াবহ’ – র প্রমাণ এর চেয়ে আর কি হতে পারে? কোথায় আজ সন্ন্যাসীর নিৰ্ভীকতা, চিত্তশুদ্ধি, জ্ঞান আৰু যোগনিষ্ঠা, বাহ্যেন্দ্ৰিয়, দমন, যজ্ঞ শাস্ত্ৰ অধ্যয়ন, তপস্যা, সৰলতা, অহিংসা, সত্য, অক্ৰোধ, স্বাৰ্থত্যাগ, অন্ত:কৰণ, সংযম, পৰচ্ছিদ্ৰৰ অপ্ৰকাশ, সৰ্ব্বভুতত দয়া, নিৰ্লোভতা, মৃদুতা, লজ্জা, অচাঞ্চল্য, শক্তি, ক্ষমা, ধৈৰ্য্য, পৱিত্ৰতা, অদ্ৰোহ, অনভিমান?

শ্ৰীভগৱান উৱাচ –

অভয়ং সত্ত্বসংশুদ্ধিৰ্জ্ঞানযোগব্যৱস্থিতি: |
দানং দমশ্চ যজ্ঞশ্চ স্বাধ্যায়স্তপ আৰ্জ্জৱম || ১
অহিংসা সত্যমক্ৰোধস্ত্যাগ: শান্তিৰপৈশুনম |
দয়া ভূতেষ্বলোলুপ্ত্বং মাৰ্দ্দৱং হ্ৰীৰচাপলম || ২
তেজ: ক্ষমা ধৃতি: শৌচমদ্ৰোহো নাতিমানিতা |
ভৱন্তি সম্পদং দৈবীমভিজাতস্য ভাৰত || ৩ ( শ্ৰীমদ্ভগৱদগীতা – ষোড়শ অধ্যায় – দৈবাসুৰসম্পদ্‌বিভাগযোগ)

কিন্তু আমরা তো আপ্লুত হয়েছি মহাপ্রভু শ্রী শ্রী চৈতন্যে। রামকৃষ্ণ মিশনের সন্ন্যাসী স্বামী অপূর্বানন্দের ব্যাখ্যাটা অনুভব করি – যদি এই ঐশীশক্তি সম্পন্ন ব্যক্তি আর্বিভূত না হতেন মধ্যযুগে তো আজ সমগ্র বঙ্গদেশে ‘হিন্দু’ নাম দিয়ে পরিচয় দেওয়ার কোন ব্যক্তিকে খুঁজে পাওয়া যেত না। আমরা মহাপ্রভু, স্বামী বিবেকানন্দের উপাসক। তাই তাঁদের সম্পর্কে কদর্যতা শ্রবণ করাও ধর্মদ্রোহিতা। নেতৃত্ব দিন হিন্দু সমাজের। হিন্দুকে যোদ্ধাভাবাপন্ন করে তুলুন। নতুবা আগামীদিনে গৃহস্থ হিন্দু এহেন আশ্রমের চৌকাঠও অতিক্রম করবে না।

বন্ধ হোক কদর্যতা – অবিলম্বে।

(Bengalis Spoiled by Vivekananda – Stop Eating Meat By Srila Prabhupada)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *