🖐💥🚩লীলামৃত থেকে জেনে আসি মতুয়াদের হরিচাদঁ লীলামৃতে কি বলছে💥
👉ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মতুয়া ধর্ম গ্রন্থে উল্লেখিত উক্তি সমূহ
হরিচাঁদ ঠাকুরের আবির্ভাব মুহুর্ত। মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী। অর্থাৎ এর চেয়ে বেশী অন্ধকার আর থাকে না। ভারতের ধর্মীয় ও সমাজ জগতেও তখন ঘোর অমানিশা বিরাজ করছে। সেই অন্ধকার মাথায় করেই ১৮১২ খ্রিষ্টাব্দের ১১ই মার্চ নেমে এলেন এই ধরাবক্ষে বিপ্লবী ভগবান হরিচাঁদ। পতিত উদ্ধারই তার একমাত্র ব্রত ছিল। মহাশক্তির অধিকারী শ্রীমৎ তারক সরকার যদি “হরিলীলামৃত” গ্রন্থ রচনা না করতেন তাহলে আমরা হরিচাঁদ সম্পর্কে ঘোর অন্ধকারেই থেকে যেতাম। তাই আমরা ঋণী শ্রীমৎ তারকের কাছে। তিনি হরিচাঁদ ঠাকুরকে আসল হরি হিসেবে বর্ণনা করেছেন। হরিলীলামৃতের বহু জায়গায় সেই আসলত্বের প্রমাণ তিনি তুলে ধরেছেন। কেন হরিচাঁদ আসল?
“শ্রী গৌরাঙ্গ হরিবলে রামপূজে দুর্গা,
শ্রীকৃষ্ণের প্রেম লাগি, রাধিকা বিসর্গাঃ।।
বুদ্ধের তপস্যা লাগে বুদ্ধ সাজিবারে,
বিনা সাধনায় এরা কিছু নাহি পারে।
আমি হরিচাঁদ এবে পূর্ণ অবতার
অজর অমর আমি ক্ষীরোদ ‘ঈশ্বর’।।
হঃলীঃ
“রাম কান্দে কৃষ্ণ কান্দে গৌরাঙ্গ কেঁদেছে
আমাদের পূর্ণ হরি কোথা কাঁদিয়াছে।।
— অক্ষয় চক্রবর্তীর উক্তি(হঃলীঃ)
ব্রাহ্মণ্যবাদ তথাকথিত হিন্দু ধর্মকে শেষ করে দিয়েছিলেন তারই প্রতিক্রিয়ায় হরিচাঁদ বললেন মতুয়ারা ভিন্ন সম্প্রদায়-
“স্বার্থ শূন্য নামে মত্ত মতুয়ার গণ।
ভিন্ন সম্প্রদায়রূপে হইতে গণন।।
ইহা শুনি ডেকে বলে প্রভু হরিচান।
ভিন্ন সম্প্রদায় মোরা মতুয়া আখ্যান।।
হঃলীঃ
বেদ বিধি নিয়ে মতুয়া বৈষ্ণব বিরোধ-
“মতুয়া হইল এরা কি ধন পাইয়া।
বেদবিধি নাহি মনে বেড়ায় লাফাইয়া।।
হঃলীঃ
“বেদবিধি নাহি মানে মানে না ব্রাহ্মণ।
নিশ্চয় করিতে হবে এদের শাসন।।
নাহি মানে দেব দ্বিজে আলাহিদা পথ।
ইহারা হয়েছে এক হরি বোলা মত।।
হঃলীঃ
“গাঢ় অনুরূপ অষ্ট-সাত্ত্বিক বিকার।
নাহি মানে বেদবিধি বীর অবতার।”
হঃলীঃ
“বেদ বিধি নাহি মানে যত মতুয়ার গণে,
জাতিকুল দিল রসাতল।
মতুয়া বলিছে বাণী জাতিকুল নাহি মানি
বেদ বিধি হয় কোন ছার।।
(হঃগুঃচঃসূঃ)
“কিসের মতুয়া ওরা কর্ম বেদবিধি ছাড়া
সমাজের করে অপমান।
তাড়াও এদেশ হতে দিও না বাহিরে যেতে
জাতিকুল মজাইল সব।”
হঃগুঃচঃসুঃ
মতুয়াদের বক্তব্যঃ
“শ্রী হরি চাঁদে মানে পূর্ণ অবতার।
মতুয়া হইল ত্যেজে যত বেদাচার।।
(অক্ষয় চক্রবর্তী) হঃ লীঃ
“গোস্বামী লোচন প্রেম মহাজন
বৈষ্ণব সুজন যিনি।
ত্যেজে বেদাচার জাতিকুলাচার
বৈষ্ণব আচার ত্যাগী।”
(হঃলী।)
“প্রবাহিত হবে কবে প্রেমের পরিধি।
প্রেম হিল্লোলে ধুয়ে যাবে যত দেববিধি।”
গুঃচঃ
শ্রীহরি ও কৃষ্ণভক্ত/বৈষ্ণবেরাঃ
“সব যুগে ভূ-ভার হরিল নারায়ণ।
এবে আসে কৃষ্ণ ভক্ত করিতে শোধন।”
হঃলীঃ
“অঙ্গ ধৌত বস্ত্র ধৌত ক্রিয়া জপমালা
বহিরাঙ্গ বাহ্যক্রিয়া সব ধূলা খেলা।”
হঃলীঃ
“নেড়া নেড়ী পরে যারা ঢং করে সবে তারা
জনে জনে সেজেছে নিমাই।
কাজ নাই কর্ম নাই দ্বারে দ্বারে ঘোরে তাই
বলে মোরা বৈষ্ণব গোঁসাই।।”
শ্রী গুরুচাঁদ
“ভেকধারী বৈরাগীরে ভিক্ষা নাহি দিবে।
ভিক্ষা দিলে ব্যাভিচার বাড়িয়া চলিবে।”
গুঃচঃ
“কোথায় ব্রাহ্মণ লাগে কোথায় বৈষ্ণব?
স্বার্থবশে অর্থলোভী যত ভণ্ড সব।”
গুঃচঃ
“বৈষ্ণবের কুটিনাটি করিতে খণ্ডন।
সে কারণে অবতার পুনঃ প্রয়োজন।”
হঃলীঃ
ব্রাহ্মণ ও তাদের তন্ত্রমন্ত্র সম্পর্কে মতুয়ার মানসিকতাঃ
“হরি বোলা সাধুদের ভক্তি অকামনা
তন্ত্র মন্ত্র নাহি মানে ব্রজ উপাসনা।
বিশুদ্ধ চরিত্র প্রেমে হরি হরি বলে।
অন্য তন্ত্র মন্ত্র এরা বামপদে ঠেলে।”
শূদ্রকুলকে স্বর্গে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে ব্রাহ্মণরা পূজাপার্বণ, শ্রাদ্ধশান্তি করিয়ে সর্বস্বান্ত করেছে।
“ব্রাহ্মণের কুট চক্রে সব করে ক্ষয়
পরিণামে তারা শুধু করে হায় হায়।
(গুঃচঃ)
“তুই ত বিশ্বাস আমি বড় অবিশ্বাস।
তন্ত্র মন্ত্র শৌচাচারে না হয় বিশ্বাস।”
কোন মন্ত্র লাগিবে না শুধু হরি নাম।
বাস কর গিয়ে বাছা পাতলার ধাম।”
হঃলীঃ (দশরথ ঠাকুর) কে।
“জন্ম মৃত্যু বিবাহ শ্রাদ্ধ কিছু ফাঁক নাই।
অবশ্য ব্রাহ্মণ পদে কিছু দেয়া চাই।।”
ভজন চক্রবর্তী সব ফেলে মতুয়া হলেন, তাকে ঠাকুর বললেন-
“সে সকল মন্ত্র দিয়ে আর কি করিবা।
মানুষ বলিয়া আর্তি সতত রাখিবা।”
হঃলীঃ
ব্রাহ্মণ্যবাদকে ছুড়ে ফেলে দিয়ে তিনি প্রকৃত মানুষ হলেন।
সামাজিকতার কুপ্রভাব সম্পর্কে মতুয়ার মনোভাব-
“মতুয়ারা নাহি করে স্বজাতিকে গ্রাহ্য।
লৌকিক সামাজিকতা করিয়াছে ত্যাজ্য।
সমাজের পুরোহিত হইয়াছে বন্ধ।
মহেশ বলেন সামাজির ভাগ্য মন্দ।।”
হঃলীঃ
“হরি বলে কেন হীনবীর্য হয়ে রব।
সামাজিতে ত্যাজ্য করে হরি বোলা হব।
হরি প্রেম বন্যা এসে জাত গেছে ভেসে।
জাতি মোরা হরি বোলা আর জাতি কিসে।।”
হঃলীঃ
মীড সাহেবের স্ত্রী মিসেস মিসটাক গুরুচাঁদকে বাবা বলে ডাকতেন, তাই মেয়ের প্রতি ঠাকুরের আশ্বাস এবং অসাম্প্রদায়িক মনোভাবের পরিচয়।
“শুন কন্যা গুণে ধন্যা, আমার বচন।
জাতি ভেদ মোর ঠাই পাবে না কখন।।
“সামাজিক নীতি সব শোন ভক্তগণ।
জাতিভেদ প্রথা নাহি মানিবে কখন।।”
মতুয়া কে? মতুয়া ধর্মের বৈশিষ্ট্য সমূহঃ
“নামে প্রেমে মাতোয়ারা মতুয়ারা সব।
কোথায় ব্রাহ্মণ লাগে কিসের বৈষ্ণব?
ব্রাহ্মণ্য দেবের দেব শ্রী হরি ঠাকুর।
হরি হরি বল সবে ভ্রম কর দূর।।
মহাপ্রভু হরিচাঁদ ধাম ওড়াকান্দী
তাঁহার ভক্ত যত মতুয়া উপাধি।।
হঃলীঃ
“ সাহেব বলিছে বল মতুয়া কাহারা।
ভৃত্য বলে হরিচাঁদের ভক্ত যাহারা।।
চরিত্র পবিত্র ব্যক্তিই সঠিক মতুয়া। মতুয়া হতে হলে চরিত্রটিকে ঠিক রাখাই প্রধান কাজ।
“সংসারে সংসারী থাক তাতে ক্ষতি নাই।
চরিত্র পবিত্র রাখি সত্য বলা চাই।।
গৃহ ধর্ম রক্ষা কর বাক্য সত্যে কও।
হাতে কাম, মুখে নাম দেল খোলা হও।।
হঃলীঃ
গোঁসাইদের প্রতি গুরুচাঁদ ঠাকুরের বজ্র কঠোর হুশিয়ারীঃ
“তোমরা শুনিয়া রাখ যতেক গোঁসাই।
তেল ঘষাঘষি মতে আমি কিন্তু নাই।।
ব্যাভিচারী ভেকধারী বৈরাগী যাহারা।
নাচানাটী ঘষাঘষি করে থাকে তারা।।
হরি ঠাকুরের পুত্র আমি বলে যাই।
নারী দিয়ে তেল ঘষা এই মতে নাই।।
পরনারী মাতৃজ্ঞানে সম্মান দেখাবে।
কোন কালে কোন মনে স্পর্শ না করিবে।।
আমার এ কথা ছাড়া এ কাজ যে করে।
তারা কিন্ত মতো নয় বলিনু সবারে।।
গুঃচঃ
হরিচাঁদ প্রবর্তিত মতুয়া ধর্মে গার্হস্থ্যাশ্রমকেই একমাত্র গ্রহণীয় আশ্রম বলে স্বীকার করা হয়েছে। সবাই যদি সন্ন্যাসী হয়ে যায় তবে সৃষ্টিই বন্ধ হয়ে যাবে।