শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে সেবার একটা হইচইই বেঁধে গেল।

Uncategorized
শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে সেবার একটা হইচইই বেঁধে গেল। ব্যাপারটা আর কিছুই না, শঙ্খ ঘোষ কী-একটা পুরস্কার পেয়েছেন কড়কড়ে হাতেগরম পাঁচশো টাকা! চোখ টাটিয়েছে বাকিদের। পঞ্চাশের কবিরা একজোট হলেন। ও-টাকা মারতেই হবে! শক্তি,সুনীল, তারাপদ, প্রণব, দীপক, ভাস্কর, শরৎ,বেলাল- সবাই একজোট। ও-টাকা কিছুতেই শঙ্খ বাবুকে বাড়ি নিয়ে যেতে দেওয়া চলবে না! সভার শেষে সাদা ধুতি -পাঞ্জাবি পরা নিপাট ভদ্রলোকটি প্রফুল্ল মনে বেরিয়ে আসছেন, ঘিরে ধরলেন সুনীলরা। ওঁদের মধ্যেই কেউ একজন বললেন, ‘শঙ্খ বাবু আমাদের কিছু দিন। এত খুশির খবর! একটু আনন্দ-উৎসব করব তারাপদর বাড়ি।’ পাঞ্জাবির পকেটে হাত দিয়ে ব্রাউন খামটা বার করে আনলেন শঙ্খ বাবু, ‘সব-টা নেবে? নাও।’ 
ছিঃ! ছিঃ! চক্ষুলজ্জা বলেও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি? শরৎ বললেন, ‘না না। আপনি বরং অর্ধেক দিন। তাহলেই হবে। আপনিও চলুন আমাদের সঙ্গে।’ শঙ্খ বাবু আড়াইশো টাকা তুলে দিলেন সুনীলদের হাতে। 
তারাপদর বাড়িতে আসর জমে উঠল। বাড়ির মেয়েদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিছু মিষ্টান্ন। আর এই যাঁরা, শঙ্খ বাবুর পুরস্কারে ভাগ বসালেন, তাঁরা বসলেন রাম এবং তেলেভাজা নিয়ে। শঙ্খ বাবু এক চুমুক মদ্যপান না করেও শেষ পর্যন্ত হাসিমুখে সঙ্গ দিয়েছিলেন। শরৎবাবু পরে সেই ঘটনার স্মৃতিচারণ প্রসঙ্গে বলেন, আসলে তখন ভাবটা ছিল এমন, আমাদের ভেতরেই কেউ একজন পুরস্কার জিতেছে, অথবা কোথাও লেখালিখির সূত্রে কিছু অর্থপ্রাপ্তি ঘটেছে, আমরা সকলে মিলে সেটা সেলিব্রেট করতাম। যেন আমরা প্রত্যেকেই পুরস্কৃত হয়েছি!… মদ কেনার পয়সার জন্য আমরা রাস্তায় ভিক্ষেও করেছি। বড়দিনের রাতে পার্কস্ট্রিটের মোড়ে দাঁড়িয়ে-দাঁড়িয়ে। সন্দীপন আর শক্তি খুব ভালো ভিক্ষে করতে পারত।’

সুনীল, শক্তি, দীপক, তারাপদ, শংকর (চট্টোপাধ্যায়), সন্দীপন, বেলাল, অলোক শঙ্খ’রা আগেই রওনা দিয়েছেন দিকশূন্যপুরে। ওখানেও একটা কৃত্তিবাসের দল তৈরি হয়েছে! সেই দলে শরৎ থাকবে না তা কি হয়! আজ পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে কৃত্তিবাসিক শরৎ-ও রওনা দিলেন দিকশূন্যপুরের উদ্দেশ্যে। শরৎকে আসতে দেখে এতক্ষণে হয়ত দুহাত বাড়িয়ে, দাঁড়িয়ে পড়েছেন সুনীল সহ অন্যান্যরা, ‘এসো, শরৎ এসো’! খোলা হয়েছে রামের বোতল! সঙ্গে কিছু তেলেভাজা! যে-যার নিজের কবিতা পড়ে শোনাচ্ছে বাকিদের। সুনীল শোনাচ্ছেন, 
‘যোনির ভিতর জিভ লবণের স্বাদ ছাড়া আর কিছুই আনেনি’!!  চেঁচিয়ে উঠলেন শরৎ, ‘এই তো! এই তো সেই কৃত্তিবাসের বিতর্কিত ষোলো সংখ্যা! যাতে একই সঙ্গে বহু কবির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল! হঠাৎ করেই আমরা জনা পনেরো-কুড়ি কবি কেমন যেন প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে উঠলাম!’ ওঁরা সকলেই গ্লাসে চুমুক দিতে ভুলে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *