#শিবলিঙ্গ_ও_ব্রহ্মান্ডঃ
শিবলিঙ্গে গঠন হলো, উপবৃত্তাকার। শক্তি সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়, উপবৃত্তাকার আকৃতিতে। শক্তি প্রথম যে গঠন লাভ করে, সেটিও উপবৃত্তাকার। বিজ্ঞানীদের মতে আমাদের এই মহাবিশ্ব উপবৃত্তাকার আকৃতির।
অন্যদিকে “শিব” শব্দটির একটি আক্ষরিক অর্থ হলো “যা নয় সেটা।” আধুনিক বিজ্ঞান আমাদের প্রমাণ করছে যে সবকিছু শূন্য থেকে আসে এবং শূন্যে ফিরে যায়। অস্তিত্বের ভিত্তি এবং মহাজগতের মৌলিক গুণ হলো বিশাল শূন্যতা। ছায়াপথগুলো হলো একটা ছোট ঘটনা – ছিটেমাত্র । বাকি সমস্তটাই বিশাল শূন্যস্থান, যাকে শিব বলে উল্লেখ করা হয় সনাতন শাস্ত্রে | এই সেই গর্ভ যার থেকে সবকিছুর জন্ম হয়, এবং এই সেই বিস্মৃতি যার মধ্যে সবকিছু ফিরে যায়। সবকিছু শিব থেকে আসে এবং শিব-এ ফিরে যায়। যোগীরা, ধ্যানে এই জ্ঞানকে উপলদ্ধি করতে পেরেছিলেন।
যখন কেউ যোগ অনুসরণ করে, ধ্যান বা মেডিটেশনের দ্বারা একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পৌছায়, তখন সেও অনুভব করে, তার মধ্যে শক্তি উপবৃত্তাকার গঠন লাভ করছে। তাই যোগীরা বিভিন্ন স্থানে শিবলিঙ্গ তৈরী করতো, যার আকৃতিও উপবৃত্তাকার । লিঙ্গ শব্দের অর্থ হলো প্রতীক। প্রাচীন যোগীরা ধ্যানে অর্জিত শক্তির দ্বারা এই শিবলিঙ্গ প্রতিষ্টা করতো। যার সংস্পর্শে মানুষ তার বোধশক্তিকে উন্নত করার পথে সহায়তা লাভ করতে পারে, এবং মোক্ষ প্রাপ্তির পথে অগ্রসর হতে পারে। এমনকি, ধ্যান বা মেডিটেশন আজকের যুগেও প্রাসংগিক।
বর্তমান সময়ে অন্যতম আলোচিত একজন যোগী জগগি বাসুদেব ভারতে ঈশা যোগ সেন্টারে একটি শক্তিশালী ধ্যানলিঙ্গের প্রতিষ্ঠা করেন, যার সংস্পর্শে যে কেউ সহজেই ধ্যানমগ্ন হতে পারে, এমনকি যারা কোনোদিন ধ্যানে বসেনি, তারাও । এই যোগী বর্তমানে একজন যুক্তিবাদী বক্তা, অতীন্দ্রিয়বাদী, জনপ্রিয় লেখক ও কবি। সদগুরুকে ভারতবর্ষের প্রথম ৫০ জন প্রভাবশালী মানুষদের মধ্যে একজন ধরা হয়।
দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের কোয়েম্বাটুর শহরের ভেলিয়াঙ্গীরি পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত সদগুরুর আশ্রম, ঈশা যোগ কেন্দ্র; যোগ এবং ধ্যানের এক পীঠস্থান। যোগ এবং ধ্যানের বিভিন্ন পদ্ধতি শিখতে সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ এই আশ্রমে আসেন। এছাড়াও সদগুরু’র প্রতিষ্ঠিত ঈশা ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে সারা দেশ এবং বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন স্থানীয় ভাষায় যোগ এবং ধ্যানের শিক্ষা দেওয়া হয়। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের বিখ্যাত আলোচনায় এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির মতো বড় বড় ইউনিভার্সিটিতেও তাকে বক্তৃতা দেওয়ার জন্য ডাকা হয়।
তাঁর লেখা “ইনার ইঞ্জিনিয়ারিং: A Yogi’s Guide to Joy” দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস এ সেরা বিক্রত বইয়ের তালিকায় প্রকাশ পেয়েছে বেশ কয়েকটি বিভাগে। “Mystic’s Musings and Death: An Inside Story” বইটির লেখকও বাসুদেব ।
তিনি একজন নিয়মিত পাবলিক স্পিকার, যিনি বিশ্বজুড়ে অনেক নামীদামী ফোরাম এবং সম্মেলনগুলিকে সম্বোধন করার জন্য আমন্ত্রিত হয়েছেন, যেমনঃ U.N.M.W.P.S, the House of Lords, the Massachusetts Institute of Technology, এবংInternational Institute for Management Development। তিনি ২০০৭, ২০১৭ এবং ২০২০ সালে বার্ষিক ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামেও বক্তৃতা দিয়েছেন।
আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে এবং সামাজিক কর্মকান্ডে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৭ সালে ভারত সরকার পদ্মবিভূষণ বেসামরিক পুরস্কার প্রদান করে।
https://en.wikipedia.org/wiki/Jaggi_Vasudev
ভারতের যোগীদের দ্বারা আবিষ্কৃত যোগ ও মেডিটেশনের প্রক্রিয়া, যা মানুষের বোধ ও উপলদ্ধির শক্তিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে পারে, সেটি আজ শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয় পশ্চিমা দেশগুলোতেও ব্যাপকভাবে প্রসারতা লাভ করেছে।
আশা করি পাঠকদের বোঝাতে পেরেছি, শিবলিঙ্গ কোনো পেনিস নয়, বরং এই মহাবিশ্বের প্রতীক এবং এর গুরুত্বও যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক ।
সূত্রঃ
১. https://en.wikipedia.org/wiki/Shape_of_the_universe
২. https://isha.sadhguru.org/in/en/wisdom/article/linga-a-doorway-to-no-thing
৩. https://isha.sadhguru.org/in/en/wisdom/video/dhyanalinga-live-guru
৪. https://www.ishalife.com/downloads/portfolio/shiva-ultimate-outlaw-english-ebook/
৫. https://isha.sadhguru.org/in/en/wisdom/article/what-is-consecration
৬. https://isha.sadhguru.org/in/en/wisdom/article/were-other-cultures-aware-of-shiva
৭. https://isha.sadhguru.org/in/en/wisdom/article/the-shiva-purana-science-through-stories