ফেসবুক থেকে দুরে ছিলাম কিছুদিন। বেশ আরাম, গালাগাল পড়তে হয় না, অসভ্য মানুষ থেকে দুরে থাকা যায় আবার অনেক ভাল মানুষদের সাহচর্য হারাতে হয়। কিন্তু লেখালেখির জন্য হাত চুলকানি অনুভব করেছি। শেষ বয়সে ইদানিং গায়েবি আওয়াজ পাই। তবে সেটা ঈশ্বরের কাছ থেকে নয় প্রকৃতির কাছে থেকে , মাটি মানুষের কাছে থেকে। দার্শনিক চিন্তাভাবনা বিষয়টি এমন যে জীবন জিজ্ঞাসা আসে কত শত। এসবের জন্য লেখাপড়া জানার তেমন দরকার পরে না। মানুষের বয়স এমন একটি জিনিশ যে ফেলে আসা জীবনের নানা ঘাত প্রতিঘাত, ভাল লাগা, দুঃখ কষ্টের অভিজ্ঞতা থেকেই মানুষ মনে হয় পরিপক্ক হয়। তাঁর মধ্যে শুধুই প্রশ্ন আর প্রশ্ন জাগে !
আমার বালক বেলার বন্ধু মজিবর সাত আট বছর বয়সে আমার কাছে থেকে ঘুরি উড়ানোর সুতা চেয়েছিল। মান্জা দেয়া সুতা। তার সঙ্গে এই পন্চাশোর্ধ বয়সে সাতাইল বাতাইল গ্রামে আবার দেখা। কৃষকায়, ভঙ্গুর চোয়াল বসে যাওয়া বৃদ্ধ এখন মজিবর। আমার নানা বাড়ির খেলার সাথী। সে আমাকে দেখেই সুতা চাইল, আমি সুতা এনেছি কিনা বলল। চমকে গেলাম ওকে দেখে!!, সেই বালক বেলার উৎসাহ। সে বিয়ে শাদী করেনি, শুনে ছিলাম একবার বিয়ে করেছিল কিন্তু বউ ছেড়ে চলে গেছে।তারপর আর বিয়ে করেনি নিজের ভাগ্নে ভাতিজাদের পরম স্নেহে আদরে বড় করেছে। এ পৃথিবীর কাছে তার কোন চাওয়া পাওয়ার নাই। সে শুধু আমার কাছে সুতা চায়, কাঁচের গুরোর মান্জা দেয়া সুতা । শৈশবের সেই প্রতিশ্রুতি এখনো আমি রক্ষা করেনি। এজন্যই এতদিন পরেও মজিবর আমাকে শৈশবের দুরন্তপনায় ফিরে নিয়ে যেতে চায়। আমিও যেতে চাই। কিন্তু ফিরে যাওয়া কখনোই সম্ভব নয়। কেউ পারেনি ফিরে যেতে । তারপর হঠাৎই একদিন সবার অজ্ঞাতসারে চিরদিনের জন্য হারিয়ে যাব আমি মজিবর সহ অনেকেই। কেউ মনেও রাখবে না , মনে রাখতেও নেই।