এক সময় মা যশোদা গৃহের মধ্যে দধিমন্থন করছিলেন। তখন তিনি শ্রীকৃষ্ণের অতি মধুর বাল্যলীলা গান করছিলেন। এইভাবে তাঁর পুত্রের কথা স্মরণ করে গভীর আনন্দে মগ্ন ছিলেন। সেই সময় শিশু কৃষ্ণ ক্ষুধাত হয়ে সেইখানে এসে উপস্থিত হলেন। তিনি তখন তাঁর মায়ের প্রতি স্নেহের বশে দাবি করলেন যে, তিনি যেন দধি স্তন্যদান করেন।
মা যশোদা কষ্ণকে কোলে তুলে নিয়ে স্তন্যদান করতে লাগলেন। এমন সময় হঠাৎ চুলার উপর বসে পড়তে লাগল। তখন মা যশোদা তাড়াতাড়ি কষ্ণকে কোল থেকে নামিয়ে দুধ নামাতে ছুটে গেলেন। এইভাবে চলে যাওয়ায় কৃষ্ণ মায়ের ওপর ভীষণ রাগ করলেন। রাগে দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে একটা পাথরের টুকবরো তুলে নিয়ে এর পর ননীর ভান্ডটি ভেঙে ফেললেন এবং ঘরের এক কোণে বসে সেই ননী খেতে লাগলেন।

ইতিমধ্যে দুধের পাত্রটি নামিয়ে রেখে মা যশোদা দধিমন্থন স্থানে ফিরে এলেন। তিনি দেখলেন ননীর পাত্রটি ভেঙ্গে পড়ে আছে এবং তাঁর শিশুপুত্রটিকে দেখতে না পেয়ে তিনি বুঝতে পারলেন যে, এটি তাঁরই কম। তিনি ভাবতে লাগল “ছেলেটা খুব চালাক। পাত্রটা ভেঙ্গে শাস্তি পাওয়ার ভয়ে এখান থেকে পালিয়ে গেছে। কিছুক্ষণ খোঁজার পর তিনি দেখতে পেলেন যে, একটা উপুড় করে রাখা উদুখলের উপর কৃষ্ণ বসে আছেন। শিকায় ঝোলানো ননীর পাত্র থেকে ননী নিয়ে সেগুলি বাঁদরদের খাওয়াচ্ছেন। মায়ের ভয়ে এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন। মা যশোদা নিঃশব্দে পিছন থেকে হাতে একটা ছড়ি নিয়ে ধীরে ধীরে কৃষ্ণের দিকে এগোতে লাগলেন। কিন্তু কৃষ্ণ তাঁকে দেখে ফেললেন এবং তৎক্ষণাৎ উদুখল থেকে লাফিয়ে পড়ে ভয়ে দৌড়ে পালাতে লাগলেন। মা যশোদাও তাঁকে ধরবার জন্য তাঁর পিছন ছুটতে লাগলেন।
মা যশোদা ভাবলেন যে, তাঁর শিশুটিকে এতটা ভয় দেখানো ঠিক হবে না। আবার ভাবলেন তাঁকে একটু দণ্ড না দিলেই নয়। তাই তিনি হাতের ছড়িটা ফেলে একটা দড়ি দিয়ে তাঁকে বেঁধে রাখার চিন্তা করলেন। কিন্তু যখন তিনি তাঁকে বাঁধতে গেলেন, তখন দেখলেন যে, সেই দড়িটি দু ইঞ্চি পরিমাণ ছোট। তিনি আরও দড়ি এনে তার সঙ্গে সেগুলি জুড়ে বাঁধবার চেষ্টা করলেন। কিন্তু তখনও দেখলেন যে, তা সেই পরিমাণেই ছোট। এইভাবে সবকটি দড়ি জোড়া লাগিয়ে দিয়ে তিনি কৃষ্ণকে বাঁধবার চেষ্টা করলেন। বারবার বাধতে গিয়ে তিনি দেখলেন যে, তা প্রত্যেকবারই দু ইঞ্চি ছোট। এইভাবে গৃহের সমস্ত দড়ি একত্রিত করেও মা যশোদা তাঁকে বাঁধতে পারলেন না। তখন গোপীরা হাসতে লাগলেন এবং মা যশোদাও অবাক হলেন। এটা কি করে সম্ভব? তখন বালক কৃষ্ণ তাঁর মাকে পরিশ্রান্ত দেখে কৃপাপূর্বক ধরা দিলেন। মা যশোদা তাঁর ছেলেকে বেঁধে রেখে গৃহকার্যে ব্যস্ত হলেন। সেই সময় উদুখলে বাঁধা কৃষ্ণ বাড়ির সামনে দু’টি অর্জুন বৃক্ষ দেখতে পেলেন। তখন কৃষ্ণ কোমরের সাথে উদুখল নিয়ে হামাগুড়ি দিতে দিতে দুটি গাছের মাঝখানে গেলেন। কিন্তু গাছের সাথে উদুখল লেগে যায় এবং গাছ দুটি উপড়ে পড়ে যায়। গাছ দুইটি থেকে দুইজন দিব্যপুরুষ বেরিয়ে আসেন। এই দুটি অর্জুন গাছের একটা ইতিহাস আছে- তাদের পূর্বজন্মে তারা ছিল নলকূবর এবং মণিগ্রীব নামক কুবেরের দুই পুত্র। নারদ মুনির অভিশাপে তারা বৃক্ষদেহ লাভ করেন। তাদের প্রার্থনায় সন্তুষ্ট হয়ে তিনি তাদের বর দান করেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যখন বাল্যলীলা করবেন তখন তারা তাঁর কৃপায় উদ্ধার হবেন। এখানে দাম অর্থে দড়ি বা রঞ্জুকে বোঝানো হয়েছে। তাই শ্রীকৃষ্ণের এই লীলাকে দামবন্ধন লীলা বলে।
হিতোপদেশ:
কেউ যখন ভগবানকে লাভ করতে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে, ভগবান তখন তার কাছে ধরা দেন। কেউ যদি পতিতও হয় তাহলে ভক্তের প্রার্থনায় ভগবান তাকে উদ্ধার করেন।