শ্রীকৃষ্ণের ফলওয়ালীর প্রতি কৃপা – উপাখ্যান

Blog অনুপ্রেরণা উপখ্যান গল্প জীবনী ভারত সাহিত্য

মা যশোদা কখনও কখনও বসবার জন্য কৃষ্ণকে একটা কাঠের পিড়ি আনতে বলতেন। যদিও একটা শিশুর পক্ষে সেই কাঠের পিড়িটি ছিল অত্যন্ত ভারী, তবুও কোনোমতে কৃষ্ণ তা তাঁর মায়ের কাছে নিয়ে আসতেন। নারায়ণের আরাধনা করার সময় তাঁর পিতা কখনও কখনও তাঁকে তাঁর খড়ম জোড়া নিয়ে আসতে বলতেন এবং কৃষ্ণ অনেক কষ্টে মাথায় করে নিয়ে আসতেন।

যখন তাকে কোন ভারী জিনিস তুলতে বলা হতো তিনি সেটা তুলতে পারতেন না। তখন তিনি কেবল তাঁর হাত নাড়াতেন। এভাবেই প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ তিনি তাঁর পিতা মাতাকে অসীম আনন্দ দান করতেন। তিনি শিশুসুলভ এই সমস্ত লীলা বৃন্দাবনের লোকদের কাছে প্রদর্শন করেছিলেন। মুনি-ঋষিরা বিভিন্নভাবে ভগবানের অনুসন্ধান করছেন। তাঁদের তিনি দেখাতে চেয়েছিলেন যে, কিভাবে ভগবান তাঁর ভক্তদের ইচ্ছায় বশীভূত হন।

একদিন এক ফলওয়ালী নন্দ মহারাজের বাড়ির সামনে এসে হাঁকতে লাগল, “ফল চাই, ফল চাই, ভাল ফল আছে, কে কিনবে এসো।” সাধারণত আদিবাসীরা গ্রামে গিয়ে ফল বিক্রি করে। আদিবাসীরাও যে কৃষ্ণের প্রতি আসক্ত ছিল, তা এখানে বর্ণনা করা হয়েছে। আদিবাসীদের প্রতি কৃপা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণ ধানের বিনিময়ে ফল কেনার জন্য তাদের কাছে যেতেন। শিশু কৃষ্ণ তৎক্ষণাৎ তাঁর ছোট্টছোট্ট হাতে করে ধান নিয়ে এসে তার বিনিময়ে কিছু ফল নিতে এলো।

তখনকার দিনে মুদ্রার পাশাপাশি বিনিময়ের মাধ্যমেও ক্রয়-বিক্রয় হতো। তাই বড়দের শস্যের বিনিময়ে ফল কিনতে দেখে শ্রীকৃষ্ণ তারই অনুকরণ করছিলেন। কিন্তু তাঁর হাত দুটো ছিল অত্যন্ত ছোট। ধানগুলি আনতে আনতে তার অধিকাংশই মাটিতে পড়ে গেলো। যে ফলওয়ালীটি ফল বিক্রি করতে এসেছিল সে এইভাবে কৃষ্ণকে আসতে দেখে, তাঁর রূপে মুগ্ধ হয়ে গেল। তাই তাঁর হাতের অবশিষ্ট কয়েকটি ধানের বিনিময়ে তাঁর হাত ভর্তি করে ফল দিয়ে দিল। তখন সে দেখল যে, তার ফলের ঝুড়িটি মণিমাণিক্যে পূর্ণ হয়ে গেছে। এই ঘটনা দেখে ফলওয়ালী খুব অবাক হয়ে গেল। সে ভাবল একটি ছোট শিশুর পক্ষে কিভাবে এই অলৌকিক কাজ করা সম্ভব।

ভগবান হচ্ছেন সব রকমের আশীর্বাদ প্রদাতা। তাই কেউ যখন ভগবানকে কিছু দেয়, তাতে তার কোন ক্ষতি হয় না, বরং প্রতিদানে তার লক্ষ কোটিগুণ বেশি লাভ হয়। কৃষ্ণ এতই কৃপাময় যে, কেউ যদি তাকে একটি পাতা, একটি ফুল, একটি ফল অথবা একটু জল দান করেন, তাহলে তিনি তৎক্ষণাৎ তা গ্রহণ করেন। কেবল ভক্তি সহকারে তা নিবেদন করতে হয়, সেটিই কেবল একমাত্র শর্ত। ফল বিক্রীকারিণী যদিও ছিলেন দরিদ্র আদিবাসী রমণী, তবুও তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রতি গভীর স্নেহ দেখিয়েছিলেন, “হে কৃষ্ণ, তুমি ধানের বিনিময়ে কিছু ফল নেওয়ার জন্য আমার কাছে এসেছে। সেই ধানগুলি প্রায় সবই তোমার হাতে থেকে পড়ে গেছে, তবুও তুমি আমার কাছ থেকে যত ইচ্ছা ফল নিতে পার।”এভাবে ফলওয়ালী তার সরল মাতৃস্নেহের দ্বারা ভগবানকে সন্তুষ্ট করলেন।

হিতোপদেশ: এই ঘটনা থেকে শিক্ষা লাভ করা যায় যে, ভক্তি এবং প্রীতি সহকারে শ্রীকৃষ্ণকে যা কিছু নিবেদন করা হয়, তার বিনিময়ে শ্রীকৃষ্ণ জাগতিক এবং পারমার্থিক উভয়রূপেই কোটি কোটিগুণ অধিক ফল প্রদান করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *