সিলেটে ঢাক-ঢোল মাইক বাজিয়ে সরস্বতি পূজা যাতে করতে না পারে এজন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপর কমিশনারের সাক্ষরযুক্ত একটি প্রজ্ঞাপনে সিলেট শহরের সকল মাইক ব্যবসায়ীদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে তারা যেন সরস্বতি পূজার দিনে হিন্দুদের কোনরকম মাইক ভাড়া না দেন। প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত মাইকে উচ্চ স্বরে ওয়াজ করে মানুষের ঘুম হারাম করে দেয়া যাবে, হাসপাতালের পার্শ্বে পাঁচবেলা উচ্চ স্বরে মাইকে আযান দেয়া যাবে কিন্তু হিন্দুদের সরস্বতি পূজার একদিন কোথাও মাইক বাজানো যাবে না, এই হলো রাষ্ট্র ধর্ম ইসলামের দেশের ধর্মীয় আধিপত্যবাদী মানসিকতা!
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের প্রজ্ঞাপনটি যদি এমন হতো যে পুজা , ওয়াজ, আযান, জনসভায় আজ থেকে মাইক বাজিয়ে কোন শব্দ দূষণ করা যাবে না তাহলে জনহিতকর সেই ঘোষণায় সভ্য মানুষের সমর্থন থাকার কথা। আমরাও চাই এমনটাই হোক, পৃথিবীর অনেক সভ্য মানুষের দেশেই তো একটি নির্দিষ্ট ডেসিবল লিমিটের উপরে কোন সাউন্ড সিস্টেম খোলামেলা বাজানো যায় না। শব্দ দূষণের জন্য সেখানে রাস্তায় যানবাহনে ভেঁপু বাজানো পর্যন্ত নিষিদ্ধ। ডিজিটাল বাংলাদেশে সেটা হলেই আমরা খুশি হই। এখন মানুষের হাতে হাতে ঘড়ি, সেলফোন। তারা সময় দেখে মসজিদে নামাজে যাবেন। অনেক মুসলিম দেশেই আমি আযানের শব্দ পাইনি। পুজা পার্বণেও দরজা বন্ধ করে আবদ্ধ ঘরে বা হলরুমে উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিস্টেম চালু থাক, গান বাজনা হোক কিন্তু সেটা যেন কোনমতেই বাইরের মানুষের কান ঝালাপালা না করে।
সম্প্রতি ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একটি সুপারিশে উচ্চ শব্দে মাইকে ওয়াজ ও পুজা পার্বণে মাইক ব্যবহার না করে বরং অল্প ভলিয়্যুমে সাউন্ড সিস্টেম ব্যবহারের উপর গুরুত্ব আরোপ করে একটি সুপারিশ দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সেটা যদি সকল ধর্মের মানুষদের উপর প্রজ্ঞাপন বা নোটিশ হিসেবে জারি করা হতো তাতে মানুষের খুশি হবারই কথা। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে সরকারের ফাইনাল সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা না করে পুলিশ উপ কমিশনারের এই ঘোষণা থেকে ধরে নেয়া যায় অত্যন্ত ঘৃণ্য সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য থেকেই তিনি আগ বাড়িয়ে এই পক্ষপাত দুষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি কি সিলেট শহরে ওয়াজে মাইক ব্যবহারকারী মুসল্লিদের উপর এমন ঘোষণা দিয়েছেন, নিশ্চয়ই না। তাহলে বিষয়টি কি এমন দাঁড়াল না যে…. “আজ থেকে দেশের কোথাও হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মাইক বাজানো নিষিদ্ধ কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের জন্য এই নিয়ম কার্যকর হইবে না। “
কুতুব উদ্দিন আইবেক ও সম্রাট আওরঙ্গজেব বিধর্মী হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টানদের কাছে থেকে জিজিয়া কর আদায় করতেন । বাংলাদেশের হিন্দুরা কি তবে সেই কুতুব উদ্দিন আইবেকের বাংলাদেশে বসবাস করছেন? না বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার গনতান্ত্রিক বাংলাদেশে বসবাস করছেন, সে বিষয়টি সরকারকে এখনই পরিস্কার করা উচিত।