সত্তরের দশকের কলকাতাকে দেখতে পাই

Uncategorized
সত্তরের দশকের কলকাতাকে দেখতে পাই শৈশব আর কৈশোর সদ্য  প্রস্ফুটিত চোখে।দেখতাম স্টেশনে বাংলাদেশ থেকে আসা শরণার্থীদের ভিড়।তাদের রান্না করা ভাতের ধোয়াওঠা গন্ধ অবাক চোখে নিতাম।অবাক চোখে,কেননা পরে জেনেছি আমরাও ছিলাম শরণার্থী।কেবল ভাগ্যের সহায়তায় বাবা ,কাকা রা পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশ থেকে  এদেশে এসে ভালো চাকরি জোগাড় করে ফেলেছিলেন।তাই ওদের দেখতাম দুর থেকে।ভাতের ফ্যান দাও বলে কত ভিখিরি আসতো,এখন ভাবো হয় তো আমরাও হতে পারতাম তাদের একজন। কলোনী তে থাকতে হয়নি।শহরতলীর ভাড়াবাড়িতে থেকে বড়ো হলে উঠেছি বাহুল্য ছাড়াই।দূরের গ্রামের বাড়িতে দাদুঠাকুমা, জেঠা জেঠি,সবাই থাকতো।আমার দুই দুটো জেঠতুত ভাই বিপথে চলে যায়।নকশাল আমল ছিল।তারা রাজনীতির আঁচে ঝলসে গেছিলো।দুজনেই পার্টির পোষা গুন্ডায় পরিণত হয়ে ছিল।এখনও মনে আছে পুলিশ আসতো পাড়ায় জোয়ান ছেলেদের ধরে নিয়ে যেত।বাবা তো বাড়ি থাকতেন না। জেঠার ছেলেরা,পিসির ছেলেরা দৌড়ে আসতো মার কাছে।তাদের বাথরুমের ভেতর,কয়লার গাদার পেছনে মা লুকিয়ে ফেলত।তখন বড়ো বর ঝোলানো চুলের ফেশন উঠেছিল রাজেশ খান্না র মত। বাবা দাদা দের দেখলেই কান ধরে নিয়ে গিয়ে নাপিতের সামনে বসিয়ে দিত।ভাবলে কি যে মজা লাগে।আবার মনে পড়ে গেলো জেঠার দুই ছেলের কথা।সময় ও পরিস্থিতি তাদের যেখানে নিয়ে গেছিলো সেখান থেকে তারা ফিরে আসেনি। শরণার্থী,গরীব ,সুযোগ হীন রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থায় তারা হারিয়ে গেলো।কে বা কারা মেরে ফেললো জানি না। অনেকদিন ভয়ে ভয়ে ছিলাম।মা বাবার চোখ মুখ দেখে ভয় পিতে শিখেছিলাম।শোক চাপিয়ে ভয় ছিল বেশি।সেই কলকাতাকে যারা দেখেছে জানবে কত উথাল পাথাল হয়েছে মধ্যবিত্তের জীবন। এখনকার করোনা থেকেও অনেক বেশি জটিল ছিল সেই সময়ের কলকাতা।বেকার জোয়ান শিক্ষিত ছেলে দের সামনে ছিল না কোনো আশা,আদর্শ, ভবিষ্যত।  মিটিং,মিছিলে জেরবার পথঘাট,ট্রেনে শ্বাস বন্ধ করা ভিড়,ট্রাম, বাসে বাদুরঝোলা মধ্যবিত্ত কি করে সেই ইমার্জেন্সী, নকশাল আমল আর  লোডশেডিং এর অন্ধকারে সেই কলকাতা কে পেরিয়ে এসেছে কেবল তারাই জানে।
অণুশিলা ঘোষ, কলকাতা, https://www.facebook.com/anushila.ghosh.5

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *