যারা নাহ জেনেশুনে সনাতন ধর্মের প্রতিমাপুজাকে “মুর্তিপুজা নিষিদ্ধ” বলে বা নানান কুকথা বলে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায় ভারতীয় এক অহিন্দু ধর্মপ্রচারককে গুরু বানিয়ে (যার নামের আগে আবার ড.লাগানো) তাদের জন্য নিম্নোক্ত লিখাঃ
তারা শুধু এক লাইন বলবে – “ন তস্য প্রতিমা অস্তি” এবং এটার অর্থ নিজেদের মনগড়াভাবে দাঁড়া করিয়ে দিবে – “ঈশ্বরের কোন মূর্তি নেই” + হিন্দুধর্ম নিয়ে উল্টাপাল্টা ভুল বলে হিন্দুদের প্রতিনিয়ত হেয় করতে চায় তারা।
প্রথম প্রশ্নের উত্তরঃ
“ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহৎযশঃ।
হিরন্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা সস্মান্ন
ইত্যেষঃ//” – শুক্ল যজুর্বেদ (৩২/৩)
**সরলার্থ- সেই পরমাত্মার মহিমা বর্নিত হিরন্যগর্ভ, যম্মান্ত জাতঃ (যা থেকে ইন্দ্রাদি জাত,অর্থাৎ সমস্ত কিছুর
সম্রাট) তথা মা মাহিংসীত(আমাকে হিংসা কর না) আদি মন্ত্রে করা হয়েছে যাহার নাম এবং যশ অত্যন্ত বড়
পরন্তু ওনার সমান প্রতিমান(ক্ষমতা ও গুণবিশিষ্ট বিশিষ্ট) কেউ নেই।
– যজুর্বেদ (৩২/৩)
অর্থাৎ মন্ত্রের তাৎপর্য হলাে যে ঈশ্বরের কোন তুল্য নেই। ঈশ্বরের মূর্তি গড়া যাবে না এমন কোন
নির্দেশনা এই মন্ত্রে নেই।।
[ মূর্তি পূজাকে শিরকতত্ত্বের সাথে তুলনা করা ভারতের একজন বিতর্কিত অহিন্দু ধর্মপ্রচারক (যাকে মোটামুটি সবাই চেনে এবং নামের ড.লাগান তিনি) যজুর্বেদ ৩২/৩
এর একটা মন্ত্র থেকে ‘প্রতিমা’ শব্দটাকে খুব প্রাধান্য দেয়।
“ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহৎযশঃ ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিসৗদিত্যেষা সস্মান্ন ইত্যেষ।”
– শুক্ল যজুর্বেদ (৩২/৩)
অর্থাৎ, তাঁর কোনাে তুলনা নেই (শঙ্করভাষ্য), তাঁর মহৎ যশ আছে। তিনি হিরণ্যগর্ভ, তাঁর থেকে ইন্দ্র
প্রভৃতি দেবতাগণ জাত, তিনি স্বরাট।
**এখানে ভালাে করে লক্ষ্য করে দেখবেন এক্ষেত্রে প্রতিমা দিয়ে সমতুল্য বােঝানাে হচ্ছে। প্রতিমা শব্দের
উৎপত্তি প্রতিম থেকে যার অর্থ তুল্য বা মত। যেমনঃ- মাতৃপ্রতিম – মাতৃতুল্য বা মায়ের ন্যায়, ভাতৃপ্রতিম-
ভাইয়ের তুল্য বা ভাইয়ের মত বা ভাইয়ের ন্যায়। এখানে প্রতিমা ব্যবহৃত হয়েছে তুল্য বা সমতুল্য অর্থে।
তাঁর সমতুল্য কেউ নেই। এই সুন্দর মন্ত্রের অর্থ বিকৃত করে ঐরূপ, “ঈশ্বরের প্রতিমা নেই” অর্থ করা হয়েছে। এই হচ্ছে ওই ভারতের ওই অহিন্দু ধর্মপ্রচারকের নানান কনস্পারেসি থিওরীর একটি (যিনি নামের আগে আবার ড. লাগান)।
**প্রতিমা শব্দের অনুবাদ করলে বিভিন্ন অর্থ পাওয়া যায়। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত অধ্যাপক মনির
উইলিয়ামস তাঁর অনুবাদ গ্রন্থে “প্রাতিমা” এর অর্থ করেছেন ছবি তুল্য, মূর্তি প্রতীক স্ট্যাচু ইত্যাদি করেছেন।
এখন যজুর্বেদের ৩২/৩ মন্ত্রের অনুবাদ করতে গিয়ে প্রতিমা শব্দের অর্থ মুর্তিই কেন করতে হবে? শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের ৪/১৯ মন্ত্রেও প্রতিমাকে তুল্য (শঙ্করভাষ্য) হিসেবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে। বেদ ও উপনিষদের আরও অনেক মন্ত্রে ব্রহ্মের তুল্য কেউ কেউ বলতে কিন্তু আলাদা সত্তা বুঝাচ্ছে, মুর্তি কিংবা প্রতীক নয়) নেই বলা
হয়েছে প্রাসঙ্গিক কারণেই।
এখন এই “প্রতিমা” শব্দটাকেই প্রাধান্য দিয়ে সেই বিতর্কিত ভারতীয় অহিন্দু ধর্ম প্রচারক সনাতন
সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ মুর্তি পূজা ও মন্দিরসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছিলেন।
আমাদের নিজেদের মধ্যেও কেউ কেউ একই পথে ধাবিত হতে চাচ্ছে অজ্ঞানতার জন্য। আচ্ছা যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেই উনার কোন মূর্তি নেই কিন্তু তার মানে কি দাঁড়ায় যে তিনি মূর্তিতে নেই যেখানে তিনি সর্বব্যাপী বিদ্যমান বা সবটাই তার অংশ।
আর এখানে প্রকৃত নিয়মকানুন মেনে মন্ত্রপাঠের মাধ্যমেই প্রতিমাপুজা করা হয়।