মনে করুণ– আপনি চান যে, আপনাকে বিশেষ একজন কেউ প্রসংশা করুক। কিন্তু আপনি যদি সেই ব্যক্তিকে অপমান করেন তবে সেই ব্যক্তি আপনাকে আর প্রসংশা করাররমত মুডে থাকবেন কি? বা পরবর্তীতেও প্রসংশা করার সম্ভাবনা থাকবে কি? আপনার ক্ষেত্রে হলে আপনি কী করতেন? ব্যক্তিটির স্থানে আপনাকে বসিয়ে চিন্তা করে দেখুন তো!
হ্যা ঠিকই ভেবেছেন, প্রসংশা পেতে হলে প্রসংশা করতে হয় বা পজেটিভ হতে হয়, প্রসংশাকারীর কাছে নিজেকে তার ভালোলাগারমত করে তুলতে হয়। আপনি ভালোবাসলেই, অন্যরা আপনাকে ভালোবাসবে। এটাই হওয়া উচিত।
বিশ্ববিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ডেল কার্নেগী মানুষের এরকম আচার-আচরণ, মনস্তত্ত্ব নিয়ে বিশদ গবেষণা করেছেন। তিনি দেখেছেন, আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসেই লুকিয়ে আছে আমাদের সফলতা অথবা ব্যর্থতা, হতাশা। গবেষণায় দেখা যায়, অতীতের সেই মানুষেরাই বেশী সফল নেতৃত্ব দিয়েছেন যারা ঝুঁকি মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকতেন, লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য নিজের সিদ্ধান্ত দলের উপর চাপিয়ে দিতেন না, বরং সবার উপর বিশ্বাস স্থাপন করে গুরুত্ব প্রদান করে দ্বিতীয় ব্যক্তিকে শ্রেষ্ঠ ভাববার সুযোগ তৈরি করে দিতেন।

এমনকি স্বার্থপর, আত্মভোলা মানুষের চেয়ে সেই মানুষ ক্যারিয়ারে বেশী সফলতা অর্জন করেন যারা তার চারপাশের মানুষের আবেগের মূল্য দেন, তাদের বোঝার চেষ্টা করেন এবং ভালো সম্পর্ক বজায় রাখেন। এসম্পর্কিত আরো বিস্তারিত জানতে ডেল কার্নেগির How to win friends and influence people বইটি পড়তে পারেন। ১৯৩৬ সালে বইটি প্রকাশিত হয় এবং আজও মানুষের মনস্তত্ত্ব বুঝতে হলে এই বইটির জুড়ি নেই।
ডেল কার্নেগির দৃষ্টিতে সফল হতে হলে ৩টি অভ্যাসের গড়ে তোলা উচিত যা বিশ্বের অধিকাংশ সফল মানুষেরা চর্চা করে থাকেন।
১। মানুষকে বুঝুন, ক্ষমা করতে শিখুনঃ
“বোকারাই একমাত্র সমালোচনা, অভিযোগ আর নিন্দা করে সময় নষ্ট করতে পারে, আর তারা তা করেও,” কার্নেগীর মতে, “কিন্তু যার আত্মনিয়ন্ত্রণ সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব রয়েছে সে অন্যকে বোঝার এবং ক্ষমা করার মানসিকতা রাখে।”
আপনার চারপাশের মানুষকে আপনি যত বুঝতে পারবেন তত তাদের প্রয়োজন কি, চাহিদা কি এই বিষয়গুলো আপনার নখদর্পণে চলে আসবে। আপনাকে অনেক সিদ্ধান্ত নিজের এই গুণটির উপর ভরসা করেই নিতে হবে। যেমন, কর্মীরা বোনাস চায় কিনা, কর্মীদের কাজের আগ্রহ বাড়াতে কি করা উচিৎ, কাকে কোন কাজটি দিলে আপনি হতাশ হবেন না ইত্যাদি।
আপনি যদি সমালোচনার পথ বেছে নেন তাহলে অন্যের ভুলগুলো আরো বেশী চোখে পড়বে। আপনার প্রতিযোগী থাকবেই। নিন্দা না করে বরং ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলুন তাদের সাথে। ক্ষমা করতে শিখুন। নির্ভার মন আপনার কাজের গতি বাড়িয়া দেবে।
২। যোগ্যতার মূল্যায়ণ করুনঃ
সফল মানুষেরা মন খুলে তাঁদের কর্মীদের ভালো কাজের প্রশংসা করেন। তাদের যোগ্যতার মূল্যায়ন করেন, দেন প্রাপ্য সম্মান এবং সম্মানী।
কার্নেগী দেখেছেন, যোগ্যতার মূল্যায়ণ মানুষের কর্ম ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। একই সাথে অনবরত সমালোচনা একটা মানুষের স্বপ্নকে ধ্বংস করে দিতে যথেষ্ঠ। উপযুক্ত সম্মান মানুষের বিশ্বস্ততা বাড়ায়, আনুগত্য বাড়ায়।
যে কোন প্রতিষ্ঠানে মূল কাজ তুলে আনে কর্মীরা। তাদের কাজের সঠিক প্রশংসা করুন। তবে অবশ্যই একজনকে ছোট করে আরেকজনের প্রশংসা করবেন না। আপনার এই অভ্যাস আপনার কর্মীদের মধ্যে আন্তরিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি আপনার প্রতিটি প্রজেক্টে কাজের গতি বাড়িয়ে, এনে দেবে সফলতা।

৩। সহানুভূতিশীল হোনঃ
ডেল কার্নেগীর মতে, “মানুষকে প্রভাবিত করার সবচেয়ে ফলপ্রসু উপায় হল তাদের জীবনের না পাওয়াগুলো নিয়ে কথা বলা এবং তাদেরকে সঠিক পথ দেখানো।”
এ ব্যাপারে তিনি হেনরি ফোর্ড এর একটি উক্তি তুলে ধরেন, “সফলতার যদি কোন গোপন রহস্য থেকে থাকে তা হল, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গিকে বুঝতে পারা এবং তার সমস্যাগুলো তার চোখ দিয়ে তার মত করেই দেখতে পারা যেমনটা আমরা নিজের সমস্যাকে দেখতে পাই।”
কার্নেগীর মতে, সফল মানুষেরা অন্য মানুষকে ভুল পথ দেখিয়ে বিভ্রান্ত করে না বরং সঠিক পথ দেখিয়ে তার উপকার করে।
পরিশেষে বলা যায়, সফল হওয়ার জন্য প্রথমে আপনার আশপাশের সবার একজন ভাল বন্ধু হোন। আপনার জনপ্রিয়তা ক্যারিয়ারেও আপনাকে সফলতা এনে দেবে।
তথ্যসূত্র:
ডেল কার্নেগির রচনাসমগ্র