সরকারি কর্মকর্তা’রা দেশের মানুষের “সার্ভেন্ট” আর দেশে আমরা সবাই সরকারি কর্তাদের “সার্ভেন্ট!”

Uncategorized

ভদ্রলোকের বয়েস ৬১-৬২ হবে।

সাদা চামড়া আর নীল চোখের মানুষ। চোখে বিশাল চশমা।

আমি বসে আছি এখানকার ট্যাক্স অফিসে। এইসব দেশে ট্যাক্স অফিসকে বলা হয় সব চাইতে পাওয়ারফুল অফিস।

আমি অবশ্য এসছি এদের সঙ্গে ঝগড়া করতে! এর কারনও আছে।

– তোমরা কেন প্রতি বছর শেষে আমার কাছ থেকে অতিরিক্ত ট্যাক্স নিচ্ছ? আমি তো নিয়মিত ট্যাক্স দিচ্ছি। বছর শেষে আলাদা করে কেন আমাকে অতিরিক্ত ট্যাক্স দিতে হচ্ছে?
– কারন, আমাদের হিসেবে তুমি এই দেশে স্বচ্ছল মানুষ। তোমার আয় সাধারনের চাইতে বেশি।
– আমি আমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়ে এসছি। তুমি কি একটু দেখে বলবে- কোন হিসেবে আমাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হবে? আমার ব্যাংকে তো টাকাই নেই। উল্টো তোমাদের উচিত আমাকে টাকা দিয়ে সাহায্য করা!

ভদ্রলোক আমার দিকে তাকালেন এবং বললেন

– তুমি যদি তোমার ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখাতে চাও, আমার কোন আপত্তি নেই।
– দেখলে তো কি অবস্থা আমার! ব্যাংকে কোন টাকা নেই! প্রতি মাসে টানাটানির মাঝে থাকতে হয়।

ভদ্রলোক স্টেটমেন্ট দেখার পর আমার দিকে তাকালেন এবং মৃদু হেসে বললেন

– Young man, you should spend less money. You need to save some money for future.

এর মানে দাঁড়াচ্ছে

– ইয়ং ম্যান, তোমার টাকা জমানো উচিত। তুমি যা আয় করছ তার চাইতে ব্যয় বেশি করছ! ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করা উচিত তোমার।

আমি ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে বলেছি

– Why should i save money for future? Thats the reason, i am paying tax, right? I just hope I will be well taken care …

কেন আমি টাকা জমাবো ভবিষ্যতের জন্য। ট্যাক্স তো এই জন্য’ই দিচ্ছি যাতে ভবিষ্যতে আমাকে তোমরা দেখে রাখ।

চলে আসার সময় ভদ্রলোক আমার দিকে তাকিয়ে পরিষ্কার ইংরেজিতে যা বললেন, তার মানে দাঁড়ায়

– তুমি বেশ চমৎকার যুক্তি দিয়ে কথা বলো। এই বিষয়ে তোমার সঙ্গে এক সন্ধ্যায় তর্ক করতে পারলে মন্দ হতো না। আমি কি তোমাকে এই ফ্রাই’ডে সন্ধ্যায় ডিনারের আমন্ত্রণ জানাতে পারি?

এরপর দুইজন দুইজনের কার্ড আদান-প্রদান করে বিদায় নিয়েছি।

ফিরছিলাম আর ভাবছিলাম – আমি দেশেও ট্যাক্স দেই। এইবার দেশে গিয়ে ট্যাক্স অফিসে গিয়ে আমাকে কয়েক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছিল! ভাবখানা এমন- ট্যাক্স দিয়ে আমি’ই অন্যায় করেছি! এখন শাস্তি হিসেবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অফিসে থাকা লাগবে!

সরকারি অফিসের চিত্র বোধকরি পুরো বাংলাদেশেই এমন! এদের একেকজন’কে দেখলে মনে হয়- আমরা তাদের ভৃত্য! তারা হচ্ছে আমাদের “স্যার!”

আর এইসব দেশে এখানকার সরকারি অফিসার’রা এমন ভাবে কথা বলে, দেখে মনে হয়- অফিসে কষ্ট করে গিয়েছি, এতেই তারা আনন্দিত। পারলে আমার বাসায় এসেই কাজটা করে দিত! তর্ক করাকেও এরা সৌন্দর্যের বিষয় মনে করে।

ট্যাক্স অফিস থেকে ফিরে আমার মন বেশ ভালো হয়েছে। প্রতিবার যখন এখানকার সরকারি অফিসে যাই, মন ভালো হয়ে যায় এদের কথাবার্তা শুনলে। আর বাংলাদেশে সরকারি অফিসে যাওয়ার আগেই গায়ে জ্বর আসার জোগাড় হয়!

পার্থক্যটা হচ্ছে- এখানে সরকারি কর্মকর্তা’রা দেশের মানুষের “সার্ভেন্ট” আর দেশে আমরা সবাই সরকারি কর্তাদের “সার্ভেন্ট!”

আমিনুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *